প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১২:২১ পিএম
বাংলাদেশের সেমিফাইনালের স্বপ্ন শেষ। অপেক্ষা এখন ঢাকার ফ্লাইট ধরার। তার আগে রয়েছে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুটি ম্যাচ। লড়াই দুটিতে হারলে মিলবে না ২০২৫ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ। তার ওপর সাত ম্যাচে টানা ছয় হারের বৃত্তে বন্দি হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত টাইগাররা। শেষ দুই ম্যাচে জয়ের স্বপ্নটা এখন দুরূহ হয়ে গেছে।
আগামীকাল সোমবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সামনের ম্যাচে শুধু লঙ্কানরাই প্রতিপক্ষ নয়, দিল্লির বায়ুদূষণও শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের ছেলেদের। এখনও পর্যন্ত অনুশীলনই করতে পারেননি সাকিবরা। তার আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবি, টিমে নিজের ভূমিকা ও দেশের ক্রিকেটের বর্তমান বেহাল পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। এবারের বিশ্বকাপে সুজন পালন করছেন বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টরের দায়িত্ব। কিন্তু তার ভূমিকা সীমিত করা হয়েছে। এমন অভিযোগও করেছেন। এটা আগে বুঝতে পারলে দলের সঙ্গে বিশ্বকাপ মিশনেই যেতেন না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সুজনের কণ্ঠে ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার আক্ষেপের সুর ঝরল, ‘বিসিবি থেকে আমাকে যে ভূমিকা দেওয়া হয়েছে সেটাই করার চেষ্টা করছি। প্রতিটা ট্যুরেই একটা বাড়তি দায়িত্ব থাকত যে আমি দল নির্বাচনের অংশ থাকতাম, যেটা এবার নেই। আমার এখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমাকে বলে দেওয়া হয়েছে আমি কতটুকু পারব, কতটুকু পারব না। এখানে ক্রিকেটিং রুল আমার না। যেহেতু আমার ভূমিকা নয় ওই জিনিসগুলো (মাঠের ক্রিকেট সম্পর্কিত নানা কিছু), সুতরাং আমি চিন্তাও করছি না ওসব নিয়ে। যদি আমার দায়িত্ব থাকত, তাহলে চিন্তা করতাম। অবশ্যই আমি দল নিয়ে চিন্তা করছি। কিন্তু আমার তো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই। একটা জায়গায় তো আমাকে বলে দেওয়া হয়েছে যে কতটুকু পারব, কতটুকু পারব না। আগে যেভাবে ভূমিকাগুলো ছিল, আমি সেভাবে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। এখন আমার সেই ভূমিকা নেই।’
বাংলাদেশের আগের যেকোনো সফরে দলের সঙ্গে থাকলে সবকিছুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভূমিকা রাখতেন। এবার তেমনটা হয়নি। ব্যাপারটা মানতে পারেননি সুজন, ‘খুশি বলতে… আমি তো এভাবে থাকতেই চাই না। যেহেতু আমার রক্তেই ক্রিকেট, কোচিংও করাই, এটা আমার পেশা… যদিও আমি বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ নই এবং কোচিংয়ের কোনো ভূমিকায় আমি নেই, তারপরও টেকনিক্যাল লোক হিসেবে যে ব্যাপারগুলো… সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে কাজ করেছি বা কথা বলেছি, সেসব থেকে এবার দূরেই আছি। যেহেতু আমার দায়িত্বে তা নেই, আমি চাই না দায়িত্বের বাইরে কিছু করতে, যেহেতু বোর্ড থেকে বলেছে, আমি ওটাই করতে চাই।’
এ কারণে নিজের দায়িত্ব উপভোগ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন সুজন, ‘আমি উপভোগ করছি কি না? না, অবশ্যই না। একটা ট্যুরে আমি অভিভাবক হিসেবে থাকব, নিয়ম-শৃঙ্খলা বা অন্য বিষয় দেখব। সেটা তো আমার কাজ না। সেটাও আমি দেখতাম, তবে আমি মূলত ক্রিকেটটা দেখতাম।’
যেকোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নিজের কোনো ভূমিকা থাকবে না- এটা আগে জানলে বিশ্বকাপ সামনে রেখে ভারতেই যেতেন না। এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক এ অধিনায়ক- ‘না, আসতাম না। প্রথম কথা হচ্ছে এটা।’
ভারতের যাওয়ার আগে আশার ফানুস উড়িয়েছিলেন সুজন। ক্রিকেট অনুরাগীদের দেখিয়েছিলেন সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন। এখন দলের যারপরনাই বাজে পারফরম্যান্সের কারণে অনুশোচনা হচ্ছে সুজনের। কেন যে এ কথা বলেছিলেন সেটাই যেন এখন ঠিক বুঝতে পারছেন না, ‘আমি তো বিশ্বকাপে আসার আগে বলেছিলাম সেমিফাইনাল খেলব। এখন মাঝেমধ্যে মনে হয়, কোন চিন্তা করে বলেছিলাম! বুঝতে পারছি না। বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে তো আজকে থেকে নয়, অনেক দিন থেকেই পড়ে আছি। আমার ছেলেদের শরীরী ভাষা, খেলার ধরন, সবকিছু দেখে একটা বিশ্বাস ছিল যে- এই বিশ্বকাপে এই কন্ডিশনে বাংলাদেশ অনেক ভালো করবে। করার কথা। আশাও ছিল অনেক বেশি। খারাপ লাগছে, প্রচণ্ড খারাপ লাগছে। আমরা সেমিফাইনাল খেলতে না পারি, ৬ বা ৭ নম্বর দল হই। কিংবা ১০ নম্বর দলও হই… কিন্তু লড়াই করার মানসিকতা একদম খুঁজে পাইনি।’
লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা ছন্দ হারিয়ে এখন পুরোপুরি বিবর্ণ। এই ব্যর্থতার দায়ভার সবার। তবে সবার দায় বর্তায় ক্রিকেটারদের কাঁধেই। সুজন বলেন, ‘আমি মনে করি ব্যর্থতা আমাদের সবারই। যেহেতু খেলোয়াড়রা মাঠে খেলে তাদের ব্যর্থতা সবার আগে। কিন্তু প্রয়োগ (পরিকল্পনা) কেন হয়নি এটাও একটা বিষয়। বিশেষত সবাই একসঙ্গে অফ ফর্মে যাওয়াটা…।’
দিল্লিতে শুক্রবার সুজন দল ও ক্যাপ্টেন সাকিবের খারাপ পারফরম্যান্স নিয়ে জানান, ‘সাকিব তো তার একশ ভাগের দশ ভাগও না (খেলতে পারেনি), এটা সাকিবও ভালো বুঝে। এজন্যই তো সে ঢাকায় গিয়েছিল ট্রেনিং করতে হয়তোবা। ও জানে যে ও কতটা উদগ্রীব পারফর্ম করার জন্য। খালি ওর পারফরম্যান্স না, ও চায় দল জিতুক। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দল পারফর্ম করতে পারছে না এবং জিততে পারছে না। ২০১৯ বিশ্বকাপে যেভাবে ও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে অধিনায়ক হিসেবে, সেটা করতে না পারাও একটা কারণ হতে পারে।’
বাংলাদেশ হারের দুষ্টু চক্রে আটকে পড়েছে। তবে দলের এই করুণ দশার জন্য দোষটা শুধু সাকিবের ওপর চাপাননি সুজন। বরং তার চোখে দায় আসলে দলের প্রতিটি ক্রিকেটারেরই, ‘এটা শুধু সাকিবের একার দোষ দিয়ে লাভ নেই। দলে তো সাকিব একা খেলে না, আরও ১০ জন খেলোয়াড় আছে। অধিনায়কের দায়িত্বটা একটু ভিন্ন, কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে তো সবার দায়িত্ব এক। সাকিব যখন ব্যাটিং করে সাকিব তো তখন অধিনায়ক না, তখন সে একজন ব্যাটার। যখন বোলিং করে তখন সে একজন বোলার। দিনশেষে সব ব্যাটার-বোলারকে একই দায়িত্ব নিতে হবে।’
সব ব্যর্থতা ভুলে বিসিবির প্রভাবশালী এই ডিরেক্টর এখন দৃষ্টি রাখতে চান সামনে। বিশ্বকাপে বাকি থাকা দলের শেষ দুই ম্যাচে মাঠের লড়াইয়ে ভালো কিছুই প্রত্যাশা করছেন সুজন, ‘এই মুহূর্তে এসব না বলাই ভালো। সামনে দেখতে পারি। যেটা হয়ে গেছে, সেটা নিয়ে চিন্তা না করে… সামনে দুটি ম্যাচ আছে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে সমালোচনা করলে অনেক কিছু নিয়েই করা যাবে। সমালোচনা থাকবেই। অনেক কথাই ঠিক হবে, অনেক কথা ভুল হবে। টানা অনেক ম্যাচ হারলে অনেক সিদ্ধান্তই ভুল হবে। এখন এসবের ঊর্ধ্বে উঠে কীভাবে পরের দুই ম্যাচে ভালো খেলতে পারি, সেটা ভাবতে হবে।’
বিশ্বকাপ শেষে প্রধান কোচ হাথুরুসিংহেকে ছেড়ে দেবে কি না বিসিবি? সুজন বলেন, ‘এসব বলাটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়, কারণ বিশ্বকাপ এখনও শেষ হয়নি। আমি যদি কিছু বলি, তবে সেটা খারাপ বার্তাই যাবে সবার প্রতি। হাথুরু এখনও আমাদের হেড কোচ, তার প্রতি আমাদের সেই বিশ্বাস থাকতে হবে বিশ্বকাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। বিশ্বকাপের পর নিঃসন্দেহে সবকিছু বিসিবি সিদ্ধান্ত নেবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কী বললাম, এটা গুরুত্বপূর্ণ না। অবশ্যই এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। আমাদের চিন্তা করা উচিত। আমরা এই বিশ্বকাপে কিছু করতে পারিনি।’