কাজি আরিফা
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:০২ পিএম
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪১ পিএম
চলতি বিশ্বকাপে এখন সেমিফাইনালের স্বপ্নযাত্রায় যাযাবর জীবন কাটানো আফগান ক্রিকেটাররা। আর বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ না পাওয়ার চরম ঝুঁকিতে সাকিব আল হাসান ব্রিগেড। টানা ছয় হারের লজ্জায় হাবুডুবু খাচ্ছে সাকিব বাহিনী। বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) কোষাগারে আছে ৯০০ কোটি টাকা। বিপরীতে আফগান ক্রিকেটারদের বোর্ড তো বটেই এমনকি দেশ থেকেও নেই। তাদের বেতন ভাতা দেয় আইসিসি। আপাতত রশিদ খান, মোহাম্মদ নবিদের ঠাঁই হয়েছে আরব আমিরাতে। সভাবতই প্রশ্ন উঠছে আফগান স্পিরিটের দাম কত?
সুযোগ থাকলে আত্মবিশ্বাস কিনতে অনেক টাকা খরচ করত, ইংল্যান্ড, সম্প্রতি কথাটি বলেছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার ক্রিস ওকস। সর্বশেষ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলটির এবার বেহালদশা। ইংলিশ অলরাউন্ডার ওকসের কথার মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক কিছু। সার কথা হলো, তোমার টাকা থাকতে পারে কিন্তু সেটা দিয়ে আর যাই হোক স্পিরিট কেনা যায় না। টাকার ঘ্রাণ আর স্বপ্নের ঘ্রাণ সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর।
বিশ্বের অন্যতম ধনী বোর্ড বিসিবি। ভাসছে টাকার ওপর। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের সেই দম্ভোক্তি, আমাদের কোষাগারে আছে ৯০০ কোটি টাকা। বিসিবির আছে টাকার গর্ব। টাকার স্বপ্নে বিভোর সংস্থাটির কর্নধাররা। বোর্ডের চিন্তার প্রতিফলন ক্রিকেটারদের ওপর পড়বে এটাই তো স্বাভাবিক। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেলিব্রিটি ক্রিকেটাররা। বিজ্ঞাপনে ক্রিকেটারদের জয়জয়কার। শোরুম উদ্বোধন, বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছা দূত, এ জায়গাগুলোতে সবার প্রথম পছন্দ ক্রিকেটারদের। এমনিতেই মোটা বেতন বোনাস পান আমাদের ক্রিকেটার ও ক্রিকেট সংশ্লিস্টরা। ফ্রাঞ্চাইজি ও লিগ মিলিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটেও অনেক টাকা। মোট কথা, বাংলাদেশ ক্রিকেট আর টাকা সমার্থক।
এবারে তাকানো যাক আফগান ক্রিকেটের দিকে। মূলত লাহোরের শরণার্থী শিবির থেকেই উত্থান আফগান ক্রিকেটের। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে আসতে হয় তাদের। এরপর আফগান ক্রিকেটাররা পাশে পায় ভারতকে। দুবছর আগে দেশটিতে তালেবান গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর, বড় ধাক্কাটা এসে পড়ে আফগান ক্রিকেটের ওপর। গোটা দুনিয়া থেকেই কার্যত একঘরে হয়ে পড়ে আফগানিস্তান। আইসিসি চরমপত্র দেয় দেশটিকে। নারী ক্রিকেটের দল না রাখলে, তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়। এদিকে তখন ঠাঁইহারা আফগান ক্রিকেটাররা।
দুবাইয়ে আশ্রয় মেলে রশিদ-মুজিব উরদের। অনেকটা কাজের বিনিময়ে বাসস্থান কর্মসূচির মতো! বছরের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ম্যাচ আরব আমিরাতের সঙ্গে খেলতে হবে, এই চুক্তিতে দুবাইয়ে আশ্রয় মেলে তাদের। এখানে অনেকগুলো বিষয় লক্ষ্য করার মতো। ধরা যাক আফগান দলটির ইংলিশ কোচ জোনাথন ট্রটের কথাই। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে রশিদ-নবিদের প্রধান কোচ তিনি। একটিবারের জন্যও ভদ্রলোক, আফগানিস্তানে যাননি। এমনকি আফগান বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি করতেও যাননি। দলটির বিদেশি কোচ ও কোচিং স্টাফ সবার ক্ষেত্রেই এটিই চরম বাস্তবতা।
আফগান ক্রিকেটার ও তাদের কোচিং স্টাফদের বেতন দেওয়া হয় অভিনব কায়দায়। তালেবান শাসনে থাকা দেশটিতে বিদেশি অর্থ পাঠানোর ওপর আছে ব্যাপক কড়াকড়ি। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ হওয়ার কারণে, একটা ভালো লভ্যাংশ পায় আফগানিস্তান। তবে সেই টাকাটা আফগান বোর্ডকে আইসিসি সরাসরি দেয় না। বিশ্ব ক্রিকেট শাসক সংস্থা আইসিসি সেই টাকা থেকেই বেতন দেয় আফগান ক্রিকেটার ও তাদের কোচিং স্টফদের। আফগান ক্রিকেটের অবস্থা অনুধাবন করার জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট। মাঠে উড়ছে দেশটির ঐতিহ্যবাহী পতাকা। আর দেশটিতে উড়ছে তালেবানদের নিজস্ব পতাকা।
এত শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সেমিফাইনালের দৌড়ে বিশ্বসেরাদের পাশে দাঁড়িয়ে তারা। আর টাইগাররা পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে মিউ মিউ করছে বাঁচাও বাঁচাও বলে!
বাংলাদেশ আর আফগানিস্তান ক্রিকেট স্পিরিটের পার্থক্য বুঝার জন্য খুব বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সর্বশেষ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দুদলের ম্যাচের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে বিষয়টি। ডাচ ইনিংসে চার চারটি রান আউট করেছে আফগানরা। ম্যাচটিতে বোলিংয়ের চেয়ে বেশি ক্ষুরধার ছিল আফগানদের ফিল্ডিং। আর ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচে পাঁচ পাঁচটি ক্যাচ ছেড়েছে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। ইনিংসের শুরুতেই মোস্তাফিজুর রহমানের বলে দুই দুইবার জীবন ফিরে পান নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট অ্যাডওয়ার্ডস। একাধিকবার জীবন পাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যাচে সর্ব্বোচ্চ ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন ডাচ অধিনায়ক। ৬৩ রানে ৪ উইকেট হারানো ডাচরা টাইগার ফিল্ডারদের বদান্যতায় পৌঁছে যায় ২২৯ রানে। অথচ দেড়শো রানের মধ্যেই আটকে পড়ার জোরালো সম্ভাবনা ছিল তাদের।
আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে একটা পর্যায়ে ডাচদের স্কোর বোর্ডে ছিল ৭৩/১। সেখান থেকে মাত্র ১৭৯ রানেই শেষ হয়ে যায় নেদারল্যান্ডস ইনিংস। পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন ফিল্ডাররা। আর তাই ডাচদের বিপক্ষে আফগানরা জিতেছে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে আর সাকিব বাহিনী ডুবেছে ৮৭ রানের লজ্জার হারে।
আর যাই হোক টাকা দিয়ে আত্মবিশ্বাস, কমিটমেন্ট সর্বোপরি স্পিরিট কখনোই কেনা যায় না।