প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১২:১৫ পিএম
জুলাইয়ে হঠাৎ করেই আসে এক ঘোষণা। ঘোষক তামিম ইকবাল নিজেই। নিজের জন্মশহর চট্টগ্রামে অবসরের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছিলেন দেশসেরা এ ওপেনার। তখন থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। তামিম তো সরে দাঁড়ালেন। তাহলে ওয়ানডের নতুন অধিনায়ক হচ্ছেন কে? পরে আগস্টের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেকে নেন তামিমকে। নির্দেশ দেন অবসরের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে।
সরকারপ্রধানের কথা মেনে অবসর ভেঙে ক্রিকেটে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তামিম। তারকা ক্রিকেটার ফিরলেও নেতৃত্বের প্রশ্নটা থেকেই যায়। পরে গুঞ্জন শুরু হয়, অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন তামিম। শেষে উড়ো খবরটাই সত্যি হয়ে যায়। গুলশানে বিসিবিপ্রধান নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বোর্ডকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে নেতৃত্ব ছেড়ে দেন তামিম। তখন প্রশ্নটা আরও জোরালো হয়- কে হচ্ছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক?
তামিম নেতৃত্ব ছাড়ার পর নতুন অধিনায়ক হিসেবে সাকিব আল হাসানের নামই চলে আসে সামনে। শেষমেশ অধিনায়কত্বের গুরুভার চলে যায় বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারের কাঁধেই। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকেই বেছে নেয় বোর্ড। তবে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজে খেলেননি সাকিব। তার অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেন লিটন কুমার দাস। এশিয়া কাপ দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের কাণ্ডারী বনে যান সাকিব। তার নেতৃত্বে এখন বিশ্বকাপও খেলছেন টাইগাররা। কিন্তু স্মরণকালের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপই খেলছেন এখন দেশের ছেলেরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বমঞ্চে মিশন শুরু করলেও দল এখন আটকে পড়েছে হারের দুষ্ট চক্রে। টানা ৬ হারে বৈশ্বিক আসর থেকেও সবার আগে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে লাল-সবুজ প্রতিনিধিদের।
বিশ্বকাপ থেকে তাই এখন বাংলাদেশের প্রত্যাশা বলতে গেলে আসলে তেমন কিছুই নেই। পুরোপুরি এক ব্যর্থ মিশন শেষে এবার দেশে ফেরার অপেক্ষা। অথচ সেমিফাইনালে খেলার আশার ফানুস উড়িয়েই ভারতের মাটিতে পা রেখেছিলেন ক্রিকেটাররা। শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাকি দুই ম্যাচ এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। সান্ত্বনা হিসেবে দল ছিনিয়ে নিতে পারে আরও দুটি জয়। তাতে করে বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের তলানি এড়িয়ে একটু ওপরের দিকে থেকে আসর শেষ করার সুযোগ অবশ্য রয়েছে। সুযোগটা কাজে লাগাতে না পারলে ২০২৫ সালে পাকিস্তানের মাটিতে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিট মিলবে না বাংলাদেশের। কারণ পয়েন্ট তালিকার আটে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করা আটটি দলই পাবে আইসিসির এই ফ্ল্যাগশিপ টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ। কিন্তু মাঠের লড়াই আর মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে দলের এখন যে পারফরম্যান্স তাতে করে সে সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। এই বাজে সময়েও যদি বাংলাদেশ নিজেদের শেষ দুই ম্যাচ জেতে তাহলে সেটা হবে অলৌকিক ব্যাপার। দশ দলের আসরের পয়েন্ট তালিকায় ২ পয়েন্টের পুঁজিকে সম্বল করে নবম স্থানে থাকা দলের কাছে ক্রিকেট অনুরাগীরা এ ছাড়া কী-ইবা প্রত্যাশা করতে পারেন!
দলের করুণ দশার মাঝে নতুন আরেক সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। বিশ্বকাপ ভরাডুবির মাঝে সমস্যা এক দিনের ক্রিকেটের নেতৃত্ব নিয়ে। এবার পুরোনো প্রশ্নটা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ওয়ানডে অধিনায়ক কে হচ্ছেন? প্রশ্নটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণটা তো কারোর অজানা নয়। ইতোমধ্যেই সাকিব ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন বিশ্বকাপ শেষে আর এক দিনও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন না। তবে তিন সংস্করণের নেতৃত্বই ছাড়বেন কি না, সেটা অবশ্য পরিষ্কার করেননি। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ক্রিকেট মহাযজ্ঞ শেষে বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে নেতৃত্ব ঠিকই ছাড়বেন। এতে নেই কোনো সংশয়।
তাহলে এবার বিশ্বকাপ শেষে সাকিব অধিনায়কত্ব ছাড়লে নতুন অধিনায়ক কে হবেন? বাংলাদেশের অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে আগে থেকেই ছিলেন তিনজন। তারা আর কেউ নন- মেহেদি হাসান মিরাজ, লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। অনেকে তাসকিন আহমেদের কথাও বলছেন। তবে তারকা এ পেসারের নেতৃত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এই তিনজনের মধ্যে একজন হবেন দেশের নতুন ওয়ানডে কাপ্তান। এর বাইরে যদি কেউ হন। সেটা হবে চমক। নাজমুল হোসেন পাপন যখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট, তখন চমক আসাটাও অসম্ভব কিছু নয়। তামিম ইকবাল তো নেতৃত্ব ছেড়েই দিয়েছেন। বিশ্বকাপ দল থেকে তাকে বাদ দিতে কত না বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বিসিবি। ব্যাপারটা এখন এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, ক্রিকেট মাঠে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে তামিমকে ফের দেখা যাবে কি না সেটা নিয়েই চলছে জোর আলোচনা। জাতীয় ক্রিকেট লিগে না খেলায় বিশ্বকাপের মাঝে তামিমের অবসর নিয়ে ফের আলোচনা উঠেছিল। তখন পরিবার নিয়ে দুবাই ঘুরতে গিয়ে তামিম জানান, খেলব কি না সেটা পড়ে ভেবে দেখবেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিম তো অধিনায়ক হওয়ার লড়াই থেকে বাদ পড়ছেন বয়সের কারণে। ভবিষ্যতের জন্য ক্যাপ্টেন নির্বাচনের পথেই এখন হাঁটবে বিসিবি। এতে নেই কোনো সন্দেহ। কারণ বোর্ড চাইছে যিনি নেতৃত্বে আসবেন, তিনি যেন দীর্ঘমেয়াদে দলের দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেন।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকে নতুন অধিনায়ক হিসেবে শান্তর নাম শোনা যাচ্ছিল। সেই গুঞ্জনের পালে জোর হাওয়া বইয়ে দেয় বোর্ডের একটি সিদ্ধান্ত। বিশ্বকাপে অধিনায়ক সাকিবের ডেপুটির দায়িত্ব পড়ে শান্তর কাঁধে। বাঁ ঊরুর চোট নিয়ে ভারত ম্যাচে দর্শক হয়েছিলেন নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব। তার বদলে পুনেতে দলকে নেতৃত্ব দেন শান্ত। বিশ্বকাপের মতো মর্যাদাকর আসরে প্রিয় জন্মভূমিকে নেতৃত্ব দিয়ে গর্বই করেন ম্যাচ শেষে। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে তার যে বেহাল দশা। তাতে করে অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে এখন শান্ত। ৭ ম্যাচ থেকে এবারের বিশ্বকাপে তার পুঁজি বলতে মাত্র ৮৭ রান (৫৯*, ০, ৭, ৮, ০, ৯ ও ৪)।
ওপেনার লিটন দাস ওপেনার হিসেবে নিজেকে বিশ্বকাপে ঠিকঠাক মেলে ধরতে পারেননি। ৭ ম্যাচে তার সংগ্রহ ২২৫ রান (১৩, ৭৬, ০, ৬৬, ২২, ৩ ও ৪৫)। টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিতে না পারলেও নেতৃত্ব পাওয়ার লড়াইয়ে বিসিবির অন্যতম পছন্দ লিটন। বিশ্বকাপে খুব ভালো পারফরম্যান্স যে করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ, তা কিন্তু নয়। তারপরও ব্যাট হাতে যতটুকু দলের জন্য অবদান রেখেছেন- সমর্থক থেকে ক্রিকেট বিশ্লেষক সবার মন কেড়ে নিয়েছেন তারকা এ অলরাউন্ডার। যদিও কোনো ম্যাচেই ঠিক ছিল না তার ব্যাটিং অর্ডারের নম্বর। ব্যাটিং পজিশনে ‘যাযাবর’-এর ভূমিকা পালন করেও মিরাজের ব্যাট ছুঁয়ে ৭ ম্যাচে এসেছে ১৬৯ রান (৫৭, ৮, ৩০, ৩, ১১, ৩৫ ও ২৫)। সঙ্গে শিকার করেন ৯ উইকেট (৩, ০, ০, ২, ১, ০ ও ৩)। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করেই পা রেখেছেন জাতীয় দলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করেও কুড়িয়েছেন প্রশংসা। এখন সবাই একবাক্যে একটি কথাই বলছেন, ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হওয়ার যুদ্ধে মিরাজই এখন সবচেয়ে হট ফেভারিট প্রার্থী।