হেলাল নিরব
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩ ০০:০৭ এএম
চোখের জল মুছতে মুছতে লিওনেল মেসি সেদিন বলেছিলেন, ‘কোথাও না কোথাও দিয়েগো ম্যারাডোনা সব সময় থাকবেন।’ বিশ্বকাপে যদিও ধ্রুবতারা হয়েই ছিলেন। সশরীরের ম্যারাডোনাকে ছাড়াই মেসিরা খেলেছিলেন, জিতেছেন, সোনালি ট্রফিতে চুমু এঁকে দেওয়ার সময়ও ‘গুরুকে’ খুব করে মনে করেছেন। রেকর্ড অষ্টমবার ব্যালন ডি’অর জেতার পর আরও একবার মেসি স্মরণ করলেন। দূরের আকাশে তারা হয়ে যাওয়া তারকাকে দুহাতে ছুঁয়ে দিলেন। প্যারিসে কিংবদন্তির সঙ্গে যেন হাত বদল করলেন আরেক কিংবদন্তি, ‘এই ট্রফিটি নাও। এখানে তোমারও ভাগ আছে।’
প্যারিসের জমকালো আয়োজনে মেসি ছাপিয়ে গেছেন অন্য সবাইকে। ব্যালন ডি’অরের রেকর্ড আর কারও ভাঙার সাধ্যি আছে কিনা, উঠেছে সেই প্রশ্নও। না ওঠার কারণও আছে বেশ। ২০২৩ সালেও ‘বুড়ো’ তকমা পাওয়া মেসি নাকি টগবগে তরুণ আর্লিং হালান্ড— কে জিতবেন ব্যালন ডি’অর; জিজ্ঞাসাটির পারদ যখন চাপছিল, তখন মোক্ষম জবাবটা বুঝি দিয়েছিলেন মেসির সাবেক বস পেপ গার্দিওলা। সাবেক শিষ্য মেসির জন্য আলাদা করে ক্যাটাগরিও রাখতে বলেছিলেন। পরিসংখ্যান ঘাঁটলেও আপনি তাতে সায় দেবেন। সম্মানের এই পুরস্কারটি জেতা যেন নিয়ম করে ফেলেছেন মেসি। মঙ্গলবার ভোররাতেই তার হাতে উঠেছে বর্ষসেরার পুরস্কারটি।
২০১০ সালে মর্যাদার পুরস্কারে ফ্রান্স ফুটবল আরেকটু রঙ চড়িয়ে দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত হাতবদল হয়েছে ১৩টি ব্যালন ডি’অর। হালান্ড-এমবাপের মতো তরুণদের পেছনে ফেলে এবার সপ্তম স্বর্গে পৌঁছেছেন মেসি। সব মিলিয়ে হিসাব করলে আঙুলের কড় গুনতে হবে আটবার। প্যারিসে শূন্যে ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরার আগে নিজেকে ‘সব বিজেতা’ বলে দাবি করে বসেছেন মেসি। সব তো জিতেছেনই, যা ছিল বাকি সেই বিশ্বকাপও ঝুলিতে পুরেছেন।
তাই তো লাল কার্পেটে চড়ে মঞ্চে যখন উঠেছেন তখনও নির্লিপ্ততা তার চোখেমুখে। থাকবে নাইবা কেন, মেসির হাতে যতবার আরাধ্য পুরস্কারটি উঠেছে ততবার বিশ্বের আর কোনো একটি দেশের সব খেলোয়াড় মিলেও জিততে পারেননি। মেসিকে এখানে সেরা মানতেই হবে! গার্দিওলার সুরে সুর মেলালে বলতে হবে, ‘মেসির জন্য আলাদা একটা ক্যাটাগরি রাখুন।’
মেসি অবশ্য এবারের পুরস্কারে প্রিয় মানুষকে ভাগ দিয়েছেন। ‘নতুন ম্যারাডোনা’ তকমা গায়ে চড়ানো মেসিকে এখন মেসি বলেই চেনেন সবাই। লিও লিও প্রতিধ্বনিতে কেঁপে ওঠে মঞ্চ থেকে বিশ্ব হয়ে মফস্বলের অপরিচিত সেই চায়ের দোকানটিও। সেই মেসি নিজের ‘কিং’কে আরেকটি পুরস্কার নৈবেদ্য দিলেন। বিশ্বকাপের পর ব্যালন ডি’অরও উৎসর্গ করলেন ম্যারাডোনাকে, ‘ডিয়েগোর নাম বলতে চাই। এখানে অনেক ফুটবলপ্রেমী আছেন, তিনিও এমন মানুষদের সঙ্গে থাকতে চাইতেন। তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর মতো এরচেয়ে ভালো জায়গা আর হতে পারে না। যেখানেই থাকুন ডিয়েগো, জন্মদিনের শুভেচ্ছা নেবেন। ব্যালন ডি’অরটা আপনার জন্যও।’
মেসি কি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলেন? পুরস্কারের উত্তেজনায় আপনার চোখ এড়িয়ে গেলেও খেয়াল করে আরেকবার দেখবেন। মেসিরা কাঁদেন না, ছাপ রেখে যান। পথচলায় সেই ফুটপ্রিন্টে মেসি অসিয়ত করে গেলেন ২০২৩ সালের পুরস্কারে দ্বিতীয় হওয়া হালান্ডকে, ‘হালান্ডও ভালোভাবে ব্যালন ডি’অরের দাবি রাখে। আর্লিং প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে, সবগুলোতে সে শীর্ষ গোলদাতা ছিল। এই পুরস্কার তোমারও হতে পারত। আমি নিশ্চিত তুমি আগামীতে এটি জিতবে।’
প্যারিসের তিয়াটর দু শাতলে মেসির স্তুতিতে মুখরিত দিনে কোপা ট্রফি জিতে চওড়া হাসিতে হেসেছেন ইংলিশ তারকা জুড বেলিংহাম। বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড় হয়েছেন স্প্যানিশ বিশ্বকাপজয়ী নারী ফুটবলার আইতানা বোনমাতি। সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। মেসির কথা নতুন করে বলার আছে কি! মেসিই তো এদিন আরেকবার বললেন, ‘ফুটবল ক্যারিয়ারে এতকিছু পাব, কখনও ভাবিনি।’