প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১২:০৪ পিএম
টানা পাঁচ হার। সেটা আবার বিশ্বকাপের মতো আসরে। মুখে আর হাসি থাকে কীভাবে। তাই তো নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পর সাকিব আল হাসানের ওপর ভর করেছিল রাজ্যের বিষণ্নতা। কিন্তু পাকিস্তান ম্যাচের আগে পুরোপুরি পাল্টে গেছেন বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন। সাকিবের কথা বলার ধরন দেখে বিদেশি এক সাংবাদিক তো জানতেই চাইলেন, তার কথার সুর তো বদলে গেছে।
তার কথা শেষ হতে না হতেই সাকিব দিলেন হাসিমাখা উত্তর। বললেন, ‘আমার কণ্ঠ বদলে গেছে? আলাদা?’ ওই সাংবাদিকের ফের প্রশ্ন। দলের অবস্থান কীভাবে বদলাবেন? এবার সাকিবের উত্তর, ‘আমরাই কেবল পারি দলের পরিস্থিতি বদলে দিতে, নিজেদের অ্যাকশন দিয়ে। এটাই করার চেষ্টায় আছি আমি।’
জয় দিয়েই এবারের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। পরে পাল্টে গেছে চিত্রনাট্য। সেই সুখস্মৃতি এখন মিলিয়ে গেছে দূর দিগন্তে। মহাকাশের অসীম শূন্যের মাঝে। টাইগাররা আটকে আছে হারের খোলসে। সবশেষ দল উড়ে গেছে কমলা ঝড়ে। দুদিন বাদে আবার মাঠে নামতে হচ্ছে। সেই একই ভেন্যু কলকাতার ইডেন গার্ডেনে। প্রতিপক্ষ শুধু পাল্টেছে এই যা। বাবর আজম-শাহিন শাহ আফ্রিদিদের মোকাবিলা করার আগে দল কীভাবে প্রস্তুত হয়েছে?
সাকিব বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ওদিন তো সবাই অনেক খারাপ ফিল করেছে। কিন্তু আসলে খারাপ ফিল করতে থাকলে তো চলবে না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে আমাদের। সবাই সেটা করার চেষ্টা করেছে। আমরা একসঙ্গে বসে আলাপ করেছি, ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করেছি। যেভাবে করা সম্ভব, যেটা করলে আমাদের মনে হয়েছে হয়তো ভালো কিছু হতে পারে। সেগুলো আমরা করার চেষ্টা করেছি।’
বিশ্বকাপ এলে যে সাকিব জ্বলে ওঠেন ব্যাট-বল হাতে, সেই সাকিব এখন অনেকটাই অনুজ্জ্বল। দ্যুতি নেই তার ব্যাটে-বলে। আগেরবার ৯ ম্যাচে ৬০৬ রান করা বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার এবার ৫ ম্যাচ খেলে পেয়েছেন স্রেফ ৬১ রান। তাই তো চারদিকে কেবল তার সমালোচনা। বাদ পড়ছে না দল, কোচিং স্টাফ ও বিসিবি কর্মকর্তারাও। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের টানা দুই সংবাদ সম্মেলনে এলেন সাকিব। অথচ ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চের শুরুতে সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলতে পারলেই যেন বাঁচতেন সাকিব।
বিশ্বকাপে খারাপ সময়টা ঝেড়ে ফেলতে মাঝে তিনি ঢাকায় ফিরে ছোটবেলার কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের সঙ্গে করেন বিশেষ অনুশীলন। মিরপুর থেকে ফিরেই অনুরাগীদের হতাশ করেন সাকিব। ১৪ বলে করেন মাত্র ৫ রান। নিজের বাজে পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করতেই বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমিও পারফর্ম করতে চাই।’ পরে সাংবাদিক ফের জানতে চান, কীভাবে? এবার সাকিবের উত্তর, ‘আমিও ওই পথটা খোঁজার চেষ্টাই করছি।’
সাকিবের সঙ্গে দলের পারফরম্যান্সও ভালো হচ্ছে না। বৈশ্বিক আসরে সাকিবদের ম্যাচ বাকি আর মাত্র তিনটি। এখন দলের ভাবনা কী? সাকিব বলেন, ‘লক্ষ্য হচ্ছে আগামীকালের ম্যাচ খেলা ও জেতার চেষ্টা করা। আমাদের সেরাটা করা। দুই পয়েন্টের দিকে তাকানো যেটা নেওয়া সম্ভব। আমরা চেষ্টা করব নিজেদের সেরাটা করার। আমরা আলোচনা করেছি এ নিয়ে, টিম মিটিং ছিল। আমরা বসেছি আর কথা বলেছি কীভাবে এখনকার পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যায়। কিন্তু আমাদের এটা কাজে প্রমাণ করতে হবে। কথা বলে লাভ নেই, যদি সেটা কাজে না আসে। এটা আমাদের মাঠে করতে হবে যেন সবাই দেখতে পারে।’
শুধু বাংলাদেশ নয়। বিশ্বকাপে এখন খারাপ সময় যাচ্ছে পাকিস্তানেরও। টানা চার হারে দুষ্টচক্রে আটকে পড়েছে বাবর আজমরাও। মনস্তাত্ত্বিকভাবে শাহিন শাহ আফ্রিদিদের পিছিয়ে থাকাটা বাংলাদেশেকে জিততে সাহায্য করবে কি না? প্রতিপক্ষের বাজে সময়ের সুবিধা নিতে পারবে কি টাইগাররা? সাকিব বলেন, ‘একই কথা তারাও বলতে পারে যে, আমরাও পাঁচটা ম্যাচ হেরে বসে আছি। এটা ওদের অ্যাডভান্টেজ। কী বলব বলেন? (হাসি)।’
ব্যর্থতার গল্প লেখায় বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকায় বাংলাদেশ এখন পড়ে আছে নবম স্থানে। ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের খেলাটাই এখন অনিশ্চিত। কেননা আইসিসির ওই ফ্লাগশিপ টুর্নামেন্টে খেলতে হলে টাইগারদের এবারের বিশ্ব আসর শেষ করতে হবে পয়েন্ট তালিকায় আটে থেকে। সাকিব বললেন, সেই লক্ষ্য নিয়েই এখন দল লড়বে মাঠে, ‘গোটা দলই আমাদের কী করা দরকার, তা নিয়ে কথা বলছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার জন্য আমাদের জিততে হবে। এই মুহূর্তে এই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য আমরা নির্ধারণ করেছি। এর জন্য জেতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সেটাই করতে চাই।’
টুর্নামেন্টে যতটা ভালো করা যায়, সেজন্যও লড়বে বাংলাদেশ। অধিনায়ক তো তেমনটাই বললেন, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফি একটা লক্ষ্য। তবে কত ওপরের দিকে শেষ করা যায়, সেটাও আমাদের লক্ষ্য। যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে পারিনি। এখান থেকেও যদি ভালোভাবে খেলতে পারি এবং ভালো কিছু ফল যদি আমাদের পক্ষে আসে, তাহলেও হয়তো আমরা স্বস্তি নিয়ে ফিরতে পারব। তখন আমরা ভাবতে পারব যে- কী কী করলে আরও ভালো করতে পারতাম। সে জায়গা থেকে সামনের তিন ম্যাচে মনোযোগ রাখার চেষ্টা করছি।’
খারাপ সময় পেছনে ফেলতে ক্রিকেটারদেরই ফর্মে ফেরার চেষ্টা করতে হবে। সাকিব সতীর্থদের প্রতি জানালেন সেই আর্জি, ‘যার যার জায়গা থেকে তাদের নিজেদের উজ্জীবিত করতে হবে। কীভাবে ছন্দে ফিরতে পারে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। ব্যক্তিই পারে নিজেকে ছন্দে ফেরাতে। ব্যাটিং, বোলিং এমনকি ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই রকম।’
সঙ্গে সাকিব স্মরণ করিয়ে দেন, খেলোয়াড়রা ভালো করলে দলও সমষ্টিগতভাবে ভালো করে, ‘ক্রিকেট দলীয় খেলা হলেও ব্যক্তিগতভাবেও আপনাকে পারফর্ম করতে হবে। তারপরই সমষ্টিগতভাবে দল ভালো করবে। তো ব্যক্তিগতভাবে সবার দায়িত্ব আছে কীভাবে নিজেদের উজ্জীবিত করতে পারি, কীভাবে নিজেদের ফেরাতে পারি, সেটা ভাবা। সেটা শুধু আমরাই করতে পারি এবং আমাদেরই করতে হবে।’
ডাচদের কাছে হারের পর যেভাবে গম্ভীর ছিলেন সাকিব। সেটা ভুলে গতকাল সাকিব ছিলেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে। শুরু থেকেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হওয়ার আগ মুহূর্তে সবার উদ্দেশে এক গাল হেসে সাকিব বলেন, ‘মাঝে মাঝে হাসিরও দরকার আছে।’