সীমান্তের ওপারে বিশ্বকাপ
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:০৪ পিএম
ভারতের বিপক্ষে আউট হয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ান যখন টানেল দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বেশকিছু দর্শক পাকিস্তানের ব্যাটারকে দুয়ো দিচ্ছিল। টুইটারে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু সমর্থক উগ্র আচরণ করছেন এবং ‘জয় শ্রী রাম’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। বিষয়টি ভালো লাগেনি মিকি আর্থারের। পাকিস্তানের কোচ আঙুল তুলেছেন আইসিসির দিকে। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, তারা সবকিছু ঠিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু কি ঠিক করবে? এমন একটি প্রশ্নে সমালোচনার পারদ জমছে।
ভারতীয় ক্রীড়া লেখক কার্তিক কৃষ্ণাওয়ামি আহমেদাবাদের স্টেডিয়ামের ঘটনাটিকে স্রেফ অঘটন বলে চালিয়ে দিতে চান না। তার মতে, এটা ‘অপরাধমুলুক ইসলামফোবিয়া’। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে কার্তিক বলেছেন, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের উচিত কঠোর অভিযোগ করা। সেখানে উল্টো রিজওয়ানের ‘মাঠে নামাজ পড়া’ নিয়ে আইসিসিকে নালিশ দিয়েছে ভারতের একজন আইনজীবী। অভিজ্ঞ ক্রীড়া লেখক কুলদীপ লাল তার ৩০ বছরের সাংবাদিকতায় কখনও এমন ‘আক্রমণত্মক’ ভারতকে দেখেননি বলে আপসোস করছেন।
আলোচনা, বিতর্ক এবং সমলোচনা— বড় আসরগুলোতে যেন এসব পরিপূরক হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট বিশ্বকাপও এর ব্যতিক্রম নয়। রিজওয়ানের নামাজ পড়া কিংবা ভারতীয় কিছু সমর্থকদের ‘উগ্র’ আচরণের মত আরও বেশকিছু মাঠে ও মাঠের বাইরের বিতর্কিত ঘটনা আছে। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে আছে মৃত্যুর মত ঘটনা, ছিল প্রতিবাদ এবং প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনাও— যেসব জানলে আপনি ভুলেও যেতে চাইবেন সেসব।
ধোনীদের নকল ট্রফি
সমীর ওয়ানখেদে, নামটা অনেক ভারতীয় খুব করে মনে রাখবেন। কেউ তার দায়িত্ব পালনে মুগ্ধ হবেন, কেউবা বিতর্কের আধার বলে দুয়োও দেবেন। ভারতের মুম্বাই বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগে কাজ করা তখনকার সমীর এমন একটি কাণ্ড করেছিলেন, যার জন্য মহেন্দ্র সিং ধোনীদের বিশ্বকাপের নকল ট্রফি নিয়ে উল্লাস করতে হয়েছিল। ২০১১ সালে তিন দেশে বসা বিশ্বকাপে সোনার ট্রফিটি যখন শ্রীলঙ্কার কলম্বো থেকে মুম্বাই হয়ে স্টেডিয়ামের আঙিনায় আসতে চেয়েছিল, সেই পথে বড় বাধা হয়ে দাড়ান সমীর।
সমীরের দাবি, আইসিসি ভারতের শুল্ক বিভাগকে ফাঁকি দিচ্ছে, মোটা অঙ্কের করও দাবি করেন। শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তার অনড় সিদ্ধান্তের কথা জানান, যতক্ষণ না বিশ্বকাপের জন্য শুল্ক দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ বিমানবন্দর থেকে ট্রফি ছাড়া হবে না। আইসিসি তাই প্লান বি বেছে নেয়। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেও তাই আসল ট্রফি উঁচিয়ে ধরা হয়নি শচীন-কোহলিদের। ভারতের বিশ্বকাপ জয় ছাপিয়ে ওই ঘটনা নিয়ে বিস্তর সমালোচনাও হয়েছিল।
প্রিয় মানুষের মৃত্যু
আইসিসিও শেষ পর্যন্ত ঘোষণা দিয়েছিল, স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করেছেন বব উলমার। কিন্তু ‘মারা গেছেন নাকি মেরে ফেলা হয়েছে’, সেই রহস্য আজও অমিমাংসিত। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ছন্নছাড়া পাকিস্তানকে আরও বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয় সেই মৃত্যুর ঘটনা। বিশ্বকাপে মাঝপথে কোচের দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পর ইনজামামুল হকরা শুরুর দিকেই বিদায় নেন। পাকিস্তানের হতশ্রী আসর ছাপিয়ে তখন আলোচনায় ছিল উলমারের মৃত্যু। কথা উঠেছিল, পাকিস্তানের কয়েকজন খেলোয়াড় ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে যুক্ত আছেন, এমন খবর জেনে গিয়েছিলেন উলমার। ফলে ঠান্ডা মাথায় পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ইংলিশম্যানকে। যদিও এমন দাবির সপক্ষে আজ পর্যন্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উদঘাটিত হয়নি রহস্য। পাকিস্তানকে পুনর্জন্ম দেওয়া ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে তখনকার অধিনায়ক ইউনিস খান বলেছিলেন, ‘এই শিরোপা আমাদের প্রিয় মানুষ বব উলমারের।’
প্রতিবাদ এবং শাস্তি
২০০৩ সালে রিকি পন্টিং কপালে দুশ্চিন্তার বড় ভাঁজ ফেলে দিয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন। দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রাখার পরপরই অস্ট্রেলিয়া শুনল, বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না তাদের অনত্যম বোলিং অস্ত্র। ডোপ টেস্টে পজেটিভ ওয়ার্নকে বিতর্কিত সেই কাণ্ডই ইতিহাস করে দিয়েছে। বিশ্বসেরা লেগ স্পিনার বিশ্বকাপ তো বটে, এক বছর নিষিদ্ধ ছিলেন ক্রিকেটেও। একই বছর নেতা থেকে স্বৈরশাসক হয়ে ওঠা জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের প্রতিবাদ করে আলোচনায় আসেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। কালো ব্যাজ পরে তার সঙ্গে যোগ দেন সতীর্থ হেনরি ওলোঙ্গাও। দুজন মিলে সংবাদ সম্মেলনে ‘ডেথ অব ডেমোক্রেসি’ নিয়ে কথা ওঠেন। ফল যা হবার তাই হয়, বিশ্বকাপের পরই দেশ ছাড়তে হয় দুজনকে।