প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ২২:১৪ পিএম
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৪২ পিএম
ইতিহাস বলছিল লড়াই হবে। উইকেট ও কন্ডিশনে সায়ও মিলছিল। বাউন্সি উইকেটে গতিপথের নিয়ন্ত্রণ থাকবে পেসারদের হাতে। সুবিধা পাবেন ব্যাটাররাও। হয়েছেও তাই। কিন্তু তা কেবলই একপেশে। অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বৈরথ নিয়ে যে হাইপ উঠেছিল, অ্যানালাইসিসে যে ব্যাখ্যা মিলছিল, তাতে পানি ঢেলে দেয় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। মিস ফিল্ডিং ও পরবর্তীতে ব্যাটারদের অসহায় আত্মসমর্পণে বিশ্বকাপে কামব্যাক হয়নি জায়ান্টদের। টেম্বা বাভুমা বাহিনীর দেওয়া ৩১১ রানের জবাবে অজিরা থেমেছে ১৭৭ রানে। একই সঙ্গে পয়েন্ট টেবিলে আরও তলানিতে চলে গেছেন প্যাট কামিন্সরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার লক্ষ্ণৌর ভারতরত্ন শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী একনা স্টেডিয়ামে টস জিতে দক্ষিণ অফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে শুরুটা দারুণ ছিল ডি ককের। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন অধিনায়ক। দুজনে গড়েন ১০৮ রানের জুটি। ৫৫ বলে ২ বাউন্ডারিতে বাভুমা ৩৫ রান করে ফিরলেও টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান ডি কক। ৫১ বলে ফিফটি পূর্ণ করা উইকেটকিপার এ ব্যাটার তিন অঙ্কে পৌঁছাতে সময় নিয়েছেন ৯০ বল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪৭ ম্যাচে এটি তার ১৯তম সেঞ্চুরি। এর আগে ৮৩ বলে সেঞ্চুরি তুলেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেঞ্চুরি তুলে নিলেও নিজের ইনিংস বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি ডি কক (১০৯)। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের শিকার হয়ে ফেরেন সাজঘরে। এর আগে উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই জাম্পার ঘূর্ণিতে ফেরেন রসি ভ্যান ডার ডুসেন (৩৫)।
ডি ককের বিদায়ের পর ক্লাসেনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মার্করাম। এর মধ্যেই ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দেখা পান। ৪১ বলে করেন ৫০। যার মধ্যে রয়েছে ৬ চার ও ১ ছয়। অর্ধশতকের পর প্যাট কামিন্সের শিকার হয়ে ৪৪ বলে ৫৬ করে ফেরেন মার্করাম।
এরপরও কামিন্সের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে ৪৯তম ওভার। প্রথম বলেই হাত খুলে খেলতে থাকা মিলার বাউন্সারে ব্যাটে-বলে করতে না পারলেও সুযোগ লুফে নিতে পারেননি স্টার্ক; এরপর চতুর্থ বলে কাভারে জেনসেনের তুলে দেওয়া যেই ক্যাচটা স্টয়নিস ফেলে দিলেন তা হয়তো অস্ট্রেলিয়ার শিবিরের জন্য ক্ষমার অযোগ্য। শেষ ওভারে স্টার্ক দুজনকে ফেরালেও জেনসেনের ২৬ রান, মিলারের ১৭ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা তিনশ পেরিয়ে তুলেছে ৩১১ রান। ইনিংসজুড়েই অস্ট্রেলিয়া অন্তত ৬টি সুযোগ হাতছাড়া করেছে। অজি বোলার মিচেল স্টার্ক ও গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল দুটি করে উইকেট নেন। জশ হ্যাজেলউড, অ্যাডাম জাম্পা ও প্যাট কামিন্স একটি করে উইকেট পান।
দক্ষিণ আফ্রিকার ছুড়ে দেওয়া ৩১১ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুতে বেশ সাবধানী ছিলেন অজি দুই ওপেনার মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার। প্রোটিয়া পেসারদের ছোড়া আগুনে বল সাবধানে সামলানোর পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন মার্শ। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ওয়ার্নার। ষষ্ঠ ওভারে সংকল্প ভুলে ট্র্যাক থেকে ছিটকে পড়েন মার্শ। ১৫ বলে ৭ রান করেন প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে ফেরা এই ব্যাটার। মার্কো জেনসেনের বলে বাভুমার হাতে ক্যাচ তুলেন তিনি। প্রথম ক্ষত না কাটতেই পরের ওভারে ক্যাচ আউটের শিকার হন ওয়ার্নার। ভারতের বিপক্ষে লড়াকু মনোভাব থাকলেও লুঙ্গি এনগিদির সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন এ হার্ডহিটার ব্যাটার। এরপর প্রথম পাওয়ার প্লের ঠিক এক বল আগে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন স্মিথ। রাবাদার বলে ফেরেন দলীয় ফিফটির ঘরে। আর ব্যক্তিগত ১৯ রান করেন চার বাউন্ডারিতে।
স্মিথ ফেরার পর দলীয় রানের খাতায় মাত্র ২০ রান যোগ হতেই মিডল অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ৫৬ রানে জশ ইংলিস (৫), ৬৫ রানে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৩) এবং ৭০ রানে মার্কাস স্টয়নিস (৫) ফেরেন দলকে নিরাশ করে। এরপর মিচেল স্টার্ককে নিয়ে মার্নাস লাবুশেন হারের দূরত্বটা খানিক কমান। নিজেদের আমলনামায় যুক্ত করেছেন কিছু রান। দুজনের ৬৯ রানের জুটি ভাঙে স্টার্কের বিদায়ে। জেনসেনের বল খোঁচাতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ডি ককের হাতে ধরা পড়েন স্টার্ক। ফেরার আগে ৩ চারে ২৭ রান করেন তিনি। স্টার্ক ফেরার কিছুক্ষণ পর অজিদের শেষ আশার প্রদীপটিও নিভে যায়। কেশব মহারাজের বল মারতে গিয়ে বাভুমার হাতে তালুবন্দি হন লাবুশেন। ৭৪ বলে তিনি করেন ৪৬ রান। যাতে ছিল তিন বাউন্ডারি। এরপর বাইশ গজে নেমে কিছুক্ষণ সময়ক্ষেপণ করেছেন প্যাট কামিন্স ও হ্যাজেলউড।
ম্যাচে প্রোটিয়া ব্যাটাররা যেখানে রান তোলায় ব্যস্ত ছিলেন সেখানে অস্ট্রেলিয়ানরা শুধু ব্যাটিংয়ে নন বোলিংয়েও ভুগেছেন। একই সঙ্গে অজি শিবিরে নামিয়েছেন অমানিশার কালো মেঘ। প্রোটিয়া বোলার লুঙ্গি এনগিদি তিনটি উইকেট নেন। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন জেনসেন, শামসি ও মহারাজ। এনগিদি বোলিং নৈপুণ্য দেখালেও একটি উইকেট পড়েছে তার ভাগে। তিনি ৮ ওভার বোলিং করে খরচ করেছেন মাত্র ১৮ রান। এ ছাড়া দুটি মেডেনের দেখা পেয়েছেন।