প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৩ ০৯:০৫ এএম
ছবি : সংগৃহীত
এশিয়ার আরেক দ্বৈরথ বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা। পরিসংখ্যান অবশ্য সেটার পক্ষে কথা বলে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের মাঠের লড়াইয়ে যুক্ত হওয়া বাড়তি উন্মাদনা প্রমাণ করে দুই দলের লড়াইকে ‘দ্বৈরথ’ বলা যায়। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান কিন্তু সেসব মানতে চান না। দেশ ছাড়ার আগে ও টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বারবারই সাকিব বলেন, দুই দলের লড়াই দ্বৈরথ নয়। বরং লক্ষ্য থাকে ভালো ক্রিকেট খেলার। দর্শকদের বিনোদন উপহার দেওয়ার। তাতে উপকৃত হয় দর্শক আর সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সাকিবের এই উত্তরের পর বুঝতে বাকি থাকে না- দ্বৈরথ মানার চেয়ে জয়টাই অনেক বেশি জরুরি। সেদিকেই লক্ষ্য তাদের।
অন্যদিকে লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকাও দুই দলের লড়াইকে দ্বৈরথ মানেন না। বরং দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে আছে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। দ্বৈরথের ব্যাপারটা বাইরের বলে জানান তিনি।
গতকাল বুধবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, জয়টাই মূল লক্ষ্য। জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দলে আছে অস্বস্তির ছোঁয়া। চোটের কারণে তিন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও ইবাদত হোসেন নেই। দুই ওপেনারের না থাকা বাংলাদেশ শিবিরের বড় চিন্তার নাম ‘ওপেনিং’। ভরসা করতে হতে পারে দুই তরুণ তানজিদ হাসান তামিম ও মোহাম্মদ নাঈম শেখের ওপর। লেট মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ না থাকায় দায়িত্ব চাপবে তরুণ শামীম পাটোয়ারীর কাঁধে। একাদশে এতগুলো তরুণের ভরসা হয়তো কিছুটা পিছিয়ে রাখবে বাংলাদেশকে- এমন ভাবনা অনেকের মধ্যেই।
এখানে সুখবর হলো শ্রীলঙ্কাকেও যেতে হচ্ছে একই সমস্যার মাধ্যমে। বোলিং আক্রমণের চার গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারকে পাচ্ছে না তারা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে স্পিন আক্রমণের নেতা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও পেস আক্রমণ ত্রয়ী দুশমন্থ চামিরা, লাহিরু কুমারা ও দিলশান মাদুশাঙ্কাকে ছাড়াই মাঠে নামতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। তাদের বোলিং আক্রমণের ওই অভাবটা পুষিয়ে দিতে আছেন পেসার মাথিসা পাথিরানা। এ ছাড়া কাসুন রাজিথা-মহেশ থিকসানারাও বাংলাদেশের কঠিন পরীক্ষা নেওয়ার সামর্থ্য রাখেন।
ইনজুরি সমস্যায় জর্জরিত হলেও এশিয়া কাপের আগে লঙ্কানদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে ‘চ্যাম্পিয়ন’ তকমা। গত বছর আরব আমিরাতে হওয়া টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের আসরে আন্ডারডগ হয়েও শিরোপা ঘরে তোলে তারা। নতুন আসরের আগে সেই আত্মবিশ্বাসে মাঠে নামবে আয়োজকরা। চ্যাম্পিয়ন তকমার আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি লঙ্কানদের সঙ্গী আয়োজক না হয়েও নিজেদের মাঠে খেলার সুবিধা। এ ছাড়া তাদেরকে এগিয়ে রাখবে পরিসংখ্যান। দুই দল এখন পর্যন্ত ৫১ বার মুখোমুখি হয়েছে ওয়ানডে ফরম্যাটে। সেখানে লঙ্কানদের ৪০ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ৯ ম্যাচে। বাকি দুই ম্যাচে আসেনি কোনো ফলাফল। তবে দুই দলের মুখোমুখি দেখায় সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। কারণ, শেষ তিন ম্যাচের দুটিতে জয় পেয়েছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ শিবিরে কন্ডিশন নিয়ে আছে ভালো ধারণা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি তাওহিদ হৃদয়, শরিফুল ইসলামরা কিছুদিন আগেই খেলেছেন লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে। ফলে তাদের শ্রীলঙ্কার ওই অভিজ্ঞতা যে ইতোমধ্যেই দলের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া টুর্নামেন্ট শুরুর তিন দিন আগে লঙ্কায় পাড়ি জমানোয় কন্ডিশন সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে মাঠে নামবেন সাকিব আল হাসান-তাসকিন আহমেদরা। দেশটিতে পৌঁছে বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল জানান, দুই দেশের কন্ডিশন প্রায় একই রকম। মঙ্গলবার স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথও জানান, দেশে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে অনুশীলন করায় এখানে মানিয়ে নিতে হবে না কোনো সমস্যা। ফলে কন্ডিশন শ্রীলঙ্কা ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য নিয়ামক হয়ে উঠবে না, সেটা নিশ্চিত করে বলাই যায়।
ইনজুরি, কন্ডিশন আর পরিসংখ্যান- সবকিছু একপাশে সরিয়ে দুই দলের সামনে মূল লক্ষ্য জয়। টুর্নামেন্টের সুপার ফোর নিশ্চিত করতে প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ দুই দলের জন্যই। দুই দলই নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তানের। প্রতিপক্ষ হিসেবে আফগানরা মোটেও সহজ হবে না। তাই এগিয়ে থাকতে প্রথম ম্যাচেই জয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে মাঠে নামবে তারা। ‘ দ্বৈরথ’ শব্দ থেকে দুই দল দূরে থাকলেও জয় যে দুই অধিনায়কেরই কাম্য, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।