সময়টা ২০১৯ বিশ্বকাপের আগেভাগের। বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচকরা দল গোছাচ্ছেন। প্রায় সব পজিশনে খেলোয়াড় ঠিক হয়ে গেছে। বাকি আছে কেবল সাত নম্বর ব্যাটিং পজিশন।
কে থাকছেন ওখানে। নাম ছিল অনেকগুলো। কিন্তু অধিনায়কের ভোটে শেষ পর্যন্ত সেই জায়গায় এলেন সাব্বির রহমান। খেললেন সেই বিশ্বকাপে। তবে মাত্র দুই ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেলেন। বার্মিংহামে ভারতের বিরুদ্ধে করলেন ৩৬ বলে ৩৬ রান। আর ট্রেন্টব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে প্রথম বলেই শূন্য রানে আউট। যে আশা-ভরসা করে অধিনায়ক মাশরাফি তাকে দলে নিয়েছিলেন তার প্রতিদান কিছুই দিতে পারেননি তিনি।
আরেকটি বিশ্বকাপ দুয়ারে। ২০২৩ বিশ্বকাপের দলে সাত নম্বর ব্যাটিং পজিশনের জন্য নির্বাচকরা নতুন-পুরোনোদের মধ্য থেকেই খোঁজ চালান। বাছ-বিচারে পুরোনো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে তারা বাতিল করে দিলেন। এই বাদের পেছনে যুক্তি আছে বেশ। প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথাবার্তা ও চিন্তাভাবনা শেয়ার করা শেষেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে এই পজিশনের জন্য গ্রহণযোগ্য করা হয়নি।
মূলত এই সাত নম্বর ব্যাটিং পজিশনের জন্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে বাকি পছন্দের তালিকায় ছিলেন তিনজন শামীম পাটোয়ারী, আফিফ হোসেন ও শেখ মাহেদি। আপাতত ১৭ জনের তালিকায় শেষের এই তিনজনকে রেখে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিদায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়ার মতো অনেক কারণ আছে। দল নির্বাচন ইস্যুতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নাম ওঠার সময় অনেক বিষয় আলোচনায় আসে। নির্বাচক প্যানেল, কোচ, অধিনায়ক কারও কাছ থেকেই মাহমুদউল্লাহ পাস মার্ক পাওয়ার মতো নম্বরই যে পেলেন না! তার জায়গায় বিকল্প হিসেবে যে তিনজনকে ভাবা হচ্ছিল তারা এগিয়ে গেলেন অনেকদূর। স্ট্রাইক রেট, বোলিংয়ের প্রয়োজনীয়তা, ফিল্ডিংয়ে কার্যকারিতা এবং সামনের সময়ের চিন্তা এসব ক্যাটাগরিতে মাহমুদউল্লাহর নামের পাশে কখনও ক্রসচিহ্ন কখনও মাইনাস! এমন রেজাল্ট কার্ড নিয়ে ১৭ জনের দলে থাকার সুযোগ কোথায়?
এশিয়া কাপের জন্য দলটা ১৭ সদস্যের হলেও বিশ্বকাপের জন্য সেটা কমে দাঁড়াবে ১৫ জনে। তাহলে বাকি দুই বাদ পড়ছেন কে?
হিসাবটা এমন। শামীম পাটোয়ারী, আফিফ হোসেন ও শেখ মাহেদি। এই তিনজনের মধ্য থেকে যেকোনো একজন চূড়ান্ত হবে বিশ্বকাপের ১৫ জনের দলে।
সেইজন কোনজন?
সেই হিসাবও মেলাচ্ছেন নির্বাচকরা অনেক কিছু ক্রিকেটীয় যুক্তি কাটাছেঁড়া করে। শামীম ও আফিফের মধ্যে যার ব্যাটিং বেশি ভরসা দেয় এমন কাউকেই সাত নম্বর ব্যাটিংয়ে দেখতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। এই পজিশনে আফিফের বোলিংটা হয়তো তাকে বাড়তি সুবিধা দেবে। তবে শুধুমাত্র ব্যাটিংয়ের চিন্তা করলে আফিফের তুলনায় শামীম পাটোয়ারীর স্ট্রোকফুল ব্যাটিংয়ের ওপরই বেশি আস্থা রাখবে সম্ভবত টিম ম্যানেজমেন্ট। আর এই পজিশনে মারকুটে ব্যাটিং এবং সেই সঙ্গে পুরো ১০ ওভার স্পিন করার জন্য কাউকে যদি খোঁজা হয় তবে অধিনায়কের সেরা পছন্দ হতে পারেন শেখ মাহেদি। এই তরুণ শুধু নিচের দিকে ব্যাটিংই নয়, ব্যাটিংয়ে ওপেনও করতে পারেন।
একাদশে পাঁচজন জেনুইন বোলারের সঙ্গে বোলিং চালিয়ে নিতে পারেন এমন অপশনের একজন ব্যাটসম্যান নিশ্চিতভাবে অধিনায়কের কাজটা সহজ করে দেন। এমন পছন্দের তালিকায় শেখ মাহেদিই হতে পারেন অধিনায়ক সাকিবের জন্য সাত নম্বরে সেরা পছন্দ।
এশিয়া কাপের একাদশে তিনজন ওপেনারকে রেখেছেন নির্বাচকরা। লিটন দাস অবধারিত চয়েজ। তানজিদ হাসান তামিম দ্বিতীয় সেরা ওপেনার। ওপেনিংয়ে আপাতত তৃতীয় পছন্দ নাঈম শেখ। তবে এই হিসাব বদলে যেতে পারে তামিম ইকবাল ইনজুরি কাটিয়ে পুরোদস্তুর ফিট হয়ে ফিরলে। তখন বিশ্বকাপ দলের নিয়মিত ওপেনার হিসেবে নামবেন লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। তানজিদ হাসান তামিম হয়ে যাবেন বিকল্প ওপেনার। আর নাঈম শেখের নাম চলে যাবে স্ট্যান্ডবাইয়ের খাতায়। এশিয়া কাপের ১৭ জনের দলে থাকা পাঁচ পেসারের মধ্য থেকে একজনের নাম কাটা যাবে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে।
এই তো বিশ্বকাপের পুরো দলটা জেনে গেলেন আপনি?