প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৫৬ এএম
জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার নিজের অধিনায়ক জীবনের ইতি টেনে দিয়েছেন তামিম ইকবাল। বিশ্বকাপের ঠিক আগে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে জানিয়েছেন দলকে আগে রেখেই এই সিদ্ধান্ত। যে কারণটা কাজ করেছে এর পেছনে, তা হচ্ছে তার পিঠের পুরোনো চোট।
আরও পড়ুন : ২৬ আগস্ট দেশ ছাড়বেন ক্রিকেটাররা
শেষ একটা মাস জুড়ে যে এত চাপান-উতোর, এত ঘটনাপ্রবাহ, এত জল্পনা-কল্পনা- সবকিছুর পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে এই চোটই; যার শেষটা হয়েছে অধিনায়কত্বের ইতি টেনে। জুলাইয়ের ৪ তারিখ থেকে আগস্টের ৩ পর্যন্ত যা হয়েছে, তা দেখে নেওয়া যাক একনজরে-
৪ জুলাই : তামিম খেলবেন, তবে…
চোটের কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ার টেস্টটা খেলা হয়নি। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগেও কানাঘুষা, চোট থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেননি তামিম। সে প্রশ্ন সংবাদ সম্মেলনেও ধেয়ে গেল তার দিকে। তার জবাবে তামিম জানালেন, পুরোপুরি ফিট নন তিনি, তবে খেলবেন প্রথম ম্যাচে।
৪ জুলাই : পাপনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া, হাথুরুরও
তামিমের সে কথা পৌঁছাল বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পর্যন্ত। বিসিবিপ্রধান তার বক্তব্যটাকে মোটেও ভালোভাবে নেননি। প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে একান্ত আলাপে একপ্রকার বলেই দিলেন, এমন কিছু তো পাড়া-গাঁয়ের ম্যাচে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নয়! সে আলাপে পাপন তামিমকে সিদ্ধান্ত নিতেও আহ্বান জানান; বলেন, ‘আসলে ওর মনটাকে শক্ত করতে হবে। ওর ডিসিশন নিতে হবে ও আসলে কী চায়। খেলবে কি খেলবে না।’
৫ জুলাই : ব্যাট হাতে ব্যর্থ…
তামিমের ওই বক্তব্য, তাকে নিয়ে যত সমালোচনা, সব স্তিমিত হয়ে যেত একটা পারফরম্যান্সেই। কিন্তু তিনি তা আর পারলেন কই! পুরোনো ‘শত্রু’ ফজলহক ফারুকির বলে ফিরলেন, যাওয়ার আগে করলেন ১৩ রান। আনফিট হয়ে খেলার সিদ্ধান্তটা তাতে প্রশ্নের মুখে পড়ে যায় আরও।
৬ জুলাই : … এবং অবসর
প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ, দলও আফগানিস্তানের কাছে হেরে চলে গিয়েছে সিরিজ হারের দুয়ারে; অধিনায়ক তামিম তাই প্রশ্নের মুখে পড়ছিলেন বেশ। ম্যাচের দিন মাঝরাতেই গুঞ্জন ছিল তার বিদায়ের, তবে সেটা অধিনায়কত্ব থেকে।
পরদিন চট্টগ্রামের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন তামিম। সেখানে রীতিমতো বোমা ফাটান তিনি। আবেগাপ্লুত হয়ে, হাপুস নয়নে কেঁদে তিনি জানান- ওয়ানডে অধিনায়কত্বই নয় শুধু, সব ধরনের ক্রিকেটকেই বিদায় বলে দিচ্ছেন তিনি।
৬ জুলাই : বিসিবির ব্যর্থ চেষ্টা
তামিমের এই সিদ্ধান্ত যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হয় বিসিবিতে। বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বসে বিসিবির সভা। তা শেষে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তাকে ফেরার আহ্বান জানান। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সব চেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়েছে শেষমেশ।
৭ জুলাই : প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও অবসর ভেঙে ফেরা
পরদিন সকালে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ফোনকল করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তাকে তামিমকে গণভবনে নিয়ে আসার আহ্বান জানান। সে আহ্বানে সাড়া দেন তামিম; বোর্ড সভাপতি পাপনকে সঙ্গে নিয়ে গণভবনে বসেন আলোচনায়। সেখান থেকে বের হয়েই তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে না বলতে পারেননি। অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। তবে চলে যান দেড় মাসের ছুটিতে।
২০ জুলাই : সাক্ষাৎকারে আরও বড় কিছুর ইঙ্গিত
অবসর ভেঙে ফেরার পর প্রথম সাক্ষাৎকার দেন একাধিক সংবাদমাধ্যমে। সেখানে তিনি বলেন, ‘এটা এমন কিছু যা আমি জনসম্মুখে বলতে চাই না। খুবই ব্যক্তিগত। সমস্যাটা আসলে অল্প কয়েকজন লোকেরই জানা উচিত। প্রকাশ্যে আসার মতো কিছু নয়। তবে আবারও বলছি, নিশ্চয়ই বড় কোনো কারণ আছে!’
২৫ জুলাই : লন্ডনযাত্রা
ছুটির শুরুতে তামিম সপরিবারে যান দুবাইয়ে। সেখান থেকেই ২৫ জুলাই তিনি চলে যান লন্ডনে। সেখানে তিনি শরণাপন্ন হন মেরুদণ্ড বিশেষজ্ঞ টনি হ্যামন্ডের। ধরা পড়ে চতুর্থ ও পঞ্চম লাম্বার স্পাইন ভার্টিব্রার (এল-ফাইভ) মাঝের ডিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার। যে কারণে তার সামনে খোলা থাকে দুটো পথ- এক. অস্ত্রোপচার করানো, যা হলে বিশ্বকাপের ভাবনা ঝেড়ে ফেলতে হবে মগজ থেকে; দুই. ইনজেকশন নিয়ে পেইন ম্যানেজের পথে হাঁটা। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও তামিম সেখানে দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিয়েছেন।
১ আগস্ট : দেশে ফেরা
চিকিৎসা শেষে তিনি ফিরে আসেন দেশে। বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে তিনি এসে নামেন বিমানবন্দরে। সেখানে অবশ্য মুখে কুলুপ আঁটেন তিনি।
৩ আগস্ট : বৈঠক শেষে অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা
অবশেষে ৩ আগস্ট বৈঠকে বসেন বিসিবির সঙ্গে। দিনভর কঠোর গোপনীয়তায় সম্পন্ন হয় এই বৈঠক। এরপর বোর্ড সভাপতি পাপনের বাসায় আরও এক দফা আলোচনায় বসেন তামিম, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস ও বোর্ড সভাপতি নিজে। শেষে সংবাদ সম্মেলনে নেমে আসেন তিনজনই।
সেখানেই তামিম জানান নিজের সিদ্ধান্ত। জানান, চোটের কারণে বিশ্বকাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে; তাই দলের কথা ভেবেই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো। প্রায় এক মাস ধরে চলা এ নাটকীয়তায় যবনিকা পড়ে তাতে।