প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১১:৩৭ এএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১১:৪১ এএম
ক্রিকেটে অধিনায়কের আর ফুটবলে কোচের কাজের ধরনটাই এমন- খুবই চাপের। যে কারণে মহেন্দ্র সিং ধোনির কিংবা পেপ গার্দিওলাদের চুল পেকে যায় ভারত কিংবা বার্সেলোনার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই! বঙ্গমুল্লুকে সে চাপটা আছে, কম নাকি বেশি, সে আলাপ পরে করা যাবে না হয়। সে চাপে অধিনায়করা চিড়েচ্যাপ্টাও কম হন না। তবে সেটা করতে গিয়ে চুলে পাক ধরেছে খুব কম জনেরই, তবে যা হয়েছে, তার চেয়ে চুলে পাক ধরলেই বোধহয় ভালো হতো; ক্যাপ্টেন্সি বিষয়টা যে কাঁটা হয়ে বিঁধেছে তাদের গায়ে, শেষটা যে প্রায় সবারই হয়েছে একরাশ তিক্ততা নিয়ে!
সবশেষে এই তালিকায় নাম লেখালেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছিল তার হাতে। ওয়ানডে সুপার লিগের শীর্ষ চারে থেকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা জানান দিচ্ছে, কাজটা বেশ ভালোই করেছেন তামিম।
তবে এরপরও তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাটা কম হয়নি। ব্যাট হাতে রান আসছিল না বহুদিন ধরেই। সবশেষ সেঞ্চুরিটা সেই ২০২১ সালে। চলতি বছর মিলছিল না ফিফটিও, ৫০ ছুঁয়েছেন মোটে একবার। সঙ্গে ফিটনেসটাও যেন তার সঙ্গে লুকোচুরি খেলছিল সময়ে-অসময়ে। পিঠের চোটের সঙ্গে শেষ কদিন ধরেই লড়ছিলেন।
এই চোটের কাছে হেরেই ভারতের বিপক্ষে গেল বছরের শেষ সিরিজে খেলা হয়নি তার। এরপর গেল মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টেও খেলতে পারেননি একই কারণে। ফলে তার এই চোট আর সামনে থাকা বিশ্বকাপ নিয়ে ফিসফাস হয়েছে ঢের।
সেটা চূড়ান্ত রূপ পেল যখন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলে বসলেন, শতভাগ ফিট নন, তবু খেলবেন এই সিরিজে। যা রাগাল কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে তো বটেই। তামিমের সে কথা তাই তাকে চাপেই ফেলেছে কেবল। আরও অনেক চাপ ছিল। সব কিছুর কাছে হেরে সবশেষ তামিম বিদায়ই বলে দিলেন সব ধরনের ক্রিকেটকে। খেলাতেই যখন খেলবেন না, অধিনায়কত্ব আর থাকবে কী করে?
তবে তামিমের সেই অবসর ঘোষণার আয়ু ছিল মাত্র ২৪ ঘণ্ট। পরদিনই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তামিম অবসর প্রত্যাহার করে নেন। ছুটিতে চলে যান। সেই ছুটি কাটিয়ে ফিরেছেন। গতকাল রাতে বিসিবির সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। সেই বৈঠক শেষে বিসিবি জানিয়েছে, অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তামিম ইকবাল। এশিয়া কাপে খেলছেন না তিনি। তবে নিউজিল্যান্ড সিরিজে খেলার আশা করছেন, সাধারণ সদস্য হিসেবে। বিশ্বকাপেও তাকে যাতে পাওয়া যায় সেই চেষ্টায় তাকে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে বিসিবি।পিঠের ইনজুরি থেকে কবে তার মুক্তি মেলে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বিসিবি এখনও নতুন অধিনায়ক কে হবেন সেই বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে দলের সহ-অধিনায়ক লিটন দাসই সম্ভবত এশিয়া কাপে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করবেন।বিশ্বকাপেও তিনিই অধিনায়ক থাকবেন কি নাÑ সেই সিদ্ধান্ত পরে জানাবে বিসিবি।
ক্রিকেট অধিনায়কত্ব সবার জন্য ফুলের মালা নয়। কাঁটার যন্ত্রণাও বটে। আরও অনেকের মতো তামিমও অধিনায়কত্বের সেই কাঁটাই দেখলেন।
২০১৯-২০ মৌসুমে বাংলাদেশ ক্রিকেট এক পালাবদলের মধ্য দিয়েই গিয়েছিল। সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার কারণে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্বের ব্যাটন গিয়েছিল মুমিনুল হক আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। আর পরের বছর তামিম ইকবাল ওয়ানডে অধিনায়ক হয়েছিলেন মাশরাফির অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর। মুমিনুল আর মাহমুদউল্লাহ অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন গত বছর, নানা আলোচনা-সমালোচনার পর। সে আলোচনা-সমালোচনা যে বিষয়টাকে কাঁটাই বানিয়ে দিয়েছে তাদের কাছে, তা আর বলতে।
এর আগে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও একইভাবে অধিনায়কত্ব হারিয়েছিলেন। কাকতালীয়ভাবে সেটাও আবার বিশ্বকাপের ঠিক আগেই। তার আগে সাকিব আল হাসানও ঠিক তাই। ২০১১ বিশ্বকাপের পর থেকেই ছিলেন চাপে, এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ হারের পরই বিসিবি সিদ্ধান্ত নেয় তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার। তারও আগে মোহাম্মদ আশরাফুলও নেতৃত্ব হারিয়েছিলেন প্রায় একই ঢঙে।
শেষ এক-দেড় দশকে নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়ে আর সবার চেয়ে আলাদা এক মাশরাফি বিন মর্তুজাই। ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকেই বিদায় নেন। এরপর ২০২১ সালে সিলেটে জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করে বিদায় নেন অধিনায়কত্ব থেকে, সতীর্থদের কাঁধে চড়ে। এমন বিদায় আর কখন কে-ইবা পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে?
মাশরাফিকে একপাশে রাখলে আর সব অধিনায়কের নিয়তিটাই যেন একই রকম। আশরাফুল, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল… সবারই গ্রাফটা বলছে বাংলাদেশের অধিনায়কদের শেষটা বুঝি হয় বেশ তেতো স্বাদ নিয়েই। তামিম ইকবালও সে বৃত্ত থেকে বেরোতে পারলেন না। তার ‘ক্যাপ্টেন্সি’ও শেষতক বিঁধল কাঁটা হয়েই।