প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৩ ১৬:৫৯ পিএম
চেইনা ম্যাথুজ সেদিন কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে জ্যামাইকান ফুটবলার বলছিলেন, তিন ছেলের সবচেয়ে ছোটজন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ছেলে অভিযোগ করেছে, ‘আমাদের ছেড়ে এত দিন দূরে থাকো কেন?’
আরও পড়ুন : শেষ আটের আশায় আর্চারদের জার্মানি-যাত্রা
উত্তর কি দিতে পারতেন ম্যাথুজ! মুচকি হেসে হয়তো শুধু বলেছিলেন, ‘মা ঘরে আসতেছে, আরেকটু অপেক্ষা করো।’ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে চলা নারী বিশ্বকাপ ফুটবলে মায়েদের গল্পগুলোও অনেক লম্বা। একের পিঠে আরেক করে সাজাতে দেখা যাবে— ছোট্ট ফুটফুটে কেউ একজন মায়ের ওপর অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে আছে। কেউ কাঁদতে কাঁদতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ছে।
কেউবা ক্ষণ গুনছে কখন মায়ের সঙ্গে একটু কথা হবে বা দেখা দেবে। শুধুই কি সন্তানরা, মাসব্যাপী মহাযজ্ঞে ম্যাথুজের মতো ফুটবলের সঙ্গে মাতৃত্ব সামলানো মায়েরাও অধীর অপেক্ষায়, প্রিয় সন্তানের কাছে যাবেন, আদর করে কোলে তুলে কপালে চুমু খাবেন।
সাধারণত মাঠের খেলায় পূর্ণ মনোযোগ রাখতে বিশ্বকাপের সময় পরিবারের সদস্যদের দূরে রাখার পক্ষে থাকেন দল–ব্যবস্থাপকরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও সেটি হয়ে থাকে টুর্নামেন্টের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর। কেউ কেউ আবার সন্তান বা পরিজনকে আয়োজক দেশেই নিয়ে যান। মেয়েদের বেলায় এটা খানিকটা ভিন্ন।
সন্তানকে রাখতে হবে বাবা কিংবা অন্য কারও কাছে, ক্যাম্পে তো অবশ্যই না রাখতে হবে হোটেলে। ফ্রান্স দলের মিডফিল্ডার আমেল মাজরিও এক বছর বয়সি মেয়েকে নিয়ে এসেছেন বিশ্বকাপ খেলতে। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪ বছর বয়সি স্ট্রাইকার অ্যালেক্স মরগানের তিন বছরের মেয়ে শার্লিকেও রেখেছেন হোটেলে। ক্রিস্টাল ডান কিছুটা সুবিধা পাচ্ছেন বলতেই হবে।
তার এক বছর বয়সি ছেলে মার্সেল জিন সৌবিরিয়ারকে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে নিজের সঙ্গে রেখেছেন। কিন্তু মরগানের মতো তিনিও ছোট্ট ছেলেকে দেখতে বা তার কাছে যেতে পারেন কয়েক ঘণ্টার জন্য।
অনুশীলন, টিম মিটিং, জিম, ম্যাচ— সবকিছু সামলে মাতৃত্বের দেখভাল করা কতটা কঠিন? এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিল জার্মানির মিডফিল্ডার মেলানি লিউপোলৎসের কাছে। ছোট্ট ছেলে আয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসা মেলানি জানিয়েছেন এটা খুব কঠিন। কিন্তু তার চাওয়া নিজেকে শক্ত প্রমাণের, “ফুটবল এবং মাতৃত্ব সামলানো বড় চ্যালেঞ্জের। আমি নারীদের দেখাতে চাই, তারা দুটিই করতে পারেন। ফুটবল খেলাটি চালিয়ে যেতে চাই একটা কারণে— আমি আমার সন্তানদের দেখাতে চাই, ‘আমি শক্ত মনের মানুষ।" জ্যামাইকান ফুটবলার কোনিয়া পালোমারও মেলানির মতো নিজেকে শক্ত দেখাতে চান, ‘ফুটবল খেলতে নিজেকে তাগাদা দিই, কারণ সন্তানদের দেখাতে চাই আমি শক্ত।’
তবে এমন ইচ্ছে না থাকলেও আমেল মাজরিও ক্যাম্পে থাকা শিশুর মাঝে খোঁজেন অনুপ্রেরণা, লড়াইয়ের রসদ, ‘একটি শিশু থাকলে দলে আনন্দ আর মজা থাকে। কখনও কখনও অনুশীলন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন না, কিছুটা ক্লান্ত থাকবেন। কিন্তু যখন মেয়ের সান্নিধ্যে যাই, শক্তি পাই।’
মজা পাওয়ার বিষয়টি টেনেছেন জার্মানির ফরোয়ার্ড লরা ফ্রাইগাংও। কঠিন শিডিউলের মাঝ দিয়ে যাওয়া খেলোয়াড়দের স্বস্তির জায়গা সন্তানরা, ‘আপনি খাওয়ার সময় গুরুগম্ভীর কোনো ঘোষণা শোনাটা একটু কেমন যেন। সেই সময় যদি কোনো শিশু আধো আধো বোলে কথা বলা শুরু করে, সেটা মজাই লাগে।’
মাতৃত্ব আর খেলোয়াড়-সত্তা সামলানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্রাইকার মরগান বলেছেন, ‘এটা কঠিন। কারণ প্রতিদিনই তাকে খুব মিস করি। সে এখানে থাকায় আমি একই সঙ্গে দুটি ভূমিকা পালন করি। একটা মায়ের, আরেকটা ফুটবল খেলোয়াড়ের। তাই আমি এটাকে দেওয়া-নেওয়া বলব।’
মাসব্যাপী চলছে মাতৃত্ব সামলে ফুটবল খেলা মহান এই ফুটবলারদের দেওয়া-নেওয়া। এই মাসেই থেমে যাবে কারও পথচলা, কারও সন্তানদের অপেক্ষা করতে হতে পারে ২০ আগস্টের পর পর্যন্ত।