প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৩ ১০:৩৩ এএম
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৩ ১০:৪০ এএম
‘টু রোডস ডাইভার্জড ইন আ ইয়েলো উড’- রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার সে পথিকের মতো পরিস্থিতিতে এসে পড়েছেন যেন তামিম ইকবাল। দুটো পথ খোলা তার সামনে। কোন দুটো পথ, তা নিশ্চয়ই আঁচ করতে পারছেন?
আরও পড়ুন : ইংলিশ পেসারদের দাপটের দিনে অজিদের লিড
আফগানিস্তান সিরিজ শুরুর আগে গত ১১ জুন অনুশীলনে অস্বস্তি ধরা পড়ে। নেট বোলারের বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে পিঠে ব্যথা অনুভব করছিলেন সেদিন। কোনোমতে বলটা সামলে পিঠে হাত রেখে ব্যথা বোঝার চেষ্টা করলেন তামিম ইকবাল। দূর থেকেই তখন দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, পুরোনো চোটটা তাকে বেশ ভালোই ভোগাচ্ছে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সে টেস্টটা খেলেননি তিনি। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগেও শতভাগ ফিট ছিলেন না, তবু খেলবেন বলেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। এর পরই বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন প্রতিক্রিয়া জানান প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে। এরপর তার অবসরকাণ্ড, অবসর থেকে ফিরে আসার ঘটনা ঘটেছে। তবে তিনি এখন আছেন ১.৫ মাসের ছুটিতে- যা শেষ হবে আসছে আগস্টের শেষ সপ্তাহে।
এ অবশ্য নেহায়েতই অবকাশ যাপনের ছুটি নয় তার। যে পিঠের ব্যথা তাকে ছিটকে দিয়েছিল, সে ব্যথা সারাতেই তিনি বর্তমানে আছেন লন্ডনে, শরণাপন্ন হয়েছেন মেরুদণ্ড বিশেষজ্ঞ টনি হ্যামন্ডের। সেখানেই ধরা পড়েছে, চতুর্থ ও পঞ্চম লাম্বার স্পাইন ভার্টিব্রার (এল-ফাইভ) মাঝের ডিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার। তার চোট নিয়ে বিসিবির সবশেষ খবর, ইঞ্জেকশন নিয়েছেন তিনি।
লন্ডনে তার সঙ্গে থাকা চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীর বরাত দিয়ে বিসিবি জানাচ্ছেন, ‘তামিম তার চলমান পিঠের ব্যথার জন্য একজন মেরুদণ্ড বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়েছে, গতকাল সে ব্যথা কমানোর জন্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও গেছে। সে আগামী দুই দিন পর্যবেক্ষণে থাকবে। এই প্রক্রিয়ার ফল জানতে তাকে পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।’
সে প্রক্রিয়া যদি ফল দেয়, তাহলে সিদ্ধান্তটা হবে একরকম, না হলে অন্য পথে হাঁটতে হবে তাকে। এক্ষেত্রে অবশ্য পথ দুটো কী, তা একেবারেই পরিষ্কার। একটা হচ্ছে শল্যবিদের ছুরির নিচে না গিয়ে ব্যথানাশকের শরণাপন্ন হয়েই খেলা, অন্যটা হচ্ছে অস্ত্রোপচার করানো।
তবে এক্ষেত্রে সুযোগ ব্যয়ের বিষয়ও চলে আসে। শল্যবিদের ছুরির নিচে গেলে যে চলে যাবে বড় একটা সময়, ওদিকে বিশ্বকাপেরও তো বেশি দিন নেই! সে কারণেই মূলত, প্রথম পথটা বাজিয়ে দেখা হচ্ছে, যদি ফল দেয়!
তবে এভাবে ব্যথানাশক নিয়ে ‘পেইন ম্যানেজমেন্ট’ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়াও যে টেকসই সমাধান, বিষয়টা মোটেও তেমন কিছু নয়। ব্যথানাশকের কার্যকারিতা যেকোনো সময়ে শেষ হয়ে যেতে পারে, ব্যথা ফিরে আসতে পারে যেকোনো ‘অসময়ে’। কারণ দিনশেষে পেইন ম্যানেজমেন্টের বিষয়টা তো স্রেফ উপসর্গে হাত দেওয়া, গভীরে যাওয়া নয়; অনেকটা ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল খাওয়ার মতো বিষয়, তাতে জ্বর সারবে, কিন্তু ম্যালেরিয়া নয়। পেইন ম্যানেজমেন্টের এমন প্রকৃতির কথা জেনেই একজন রোগী সাধারণত কাজটা করেন। সে কথা অবশ্য তামিমেরও অজানা নয়। তামিম এর পরিণতি জানেন। বলটা তাই তার কোর্টেই।
বিসিবির এক সূত্র জানাচ্ছে, ‘পেইন ম্যানেজমেন্ট করে খেলার অপশন আছে, কিন্তু দিন শেষে কলটা তো ওর কাছ থেকেই আসতে হবে। ও চায় কি চায় না! অপশনগুলো তার সামনে তোলা হবে। লন্ডনের কনসালট্যান্ট কী কী অপশন আছে সেগুলো বলবে। সিদ্ধান্তটা তাকেই নিতে হবে। বিশেষ করে ওর মানের একজন মানুষ।’
ব্যথানাশক নিলে ব্যথার মাত্রা কমে আসে, কখনও চলেও যায়। সেক্ষেত্রে চোটটা নিগলসের মতো ছোট অস্বস্তিতে পরিণত হয়ে যায়। এ পর্যায়ের ব্যথা নিয়ে ফুটবল-বাস্কেটবল খেলা না গেলেও, ক্রিকেট খেলাই যায়। কাজটা আরও সহজ হয়ে যায় যখন চোটগ্রস্ত সে ব্যক্তির ভূমিকাটা হয় ব্যাটারের। যে কারণেই মূলত পেইন ম্যানেজমেন্টের প্রসঙ্গ উঠে আসছে এখানে।
তবে পেইন ম্যানেজমেন্টের এ পথে কখনোই দীর্ঘ মেয়াদে হাঁটা ঠিক নয়। কারণ এতে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়, যেটা পরে অস্ত্রোপচারেও সারানো সম্ভব নয়। সে কথাটাও তামিম জানেন। ডাক্তাররাও জানেন।
সে ভাবনা থেকেই মূলত, তামিমের সামনে খোলা আছে দুটো পথ। একটা হলো অস্ত্রোপচার করানো, আরেকটা পেইন ম্যানেজমেন্টের পথে হাঁটা। প্রথমটা হলে বিশ্বকাপের ভাবনা ঝেড়ে ফেলতে হবে মগজ থেকে; আর দ্বিতীয়টা হলে সুযোগ থাকবে ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব আসরে খেলার, তবে সেটা তাকে খেলতে হবে যেকোনো সময় চোট ফিরে আসার দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে।
তবে সিদ্ধান্তটা যে স্রেফ মেডিকেল নয়, এটা নিশ্চিত। ক্রিকেটীয়, দলীয়, তামিমের ব্যক্তিগত একটা সিদ্ধান্তও হতে চলেছে এই সিদ্ধান্ত; মেডিকেল দিকটা তার একটা অংশ মাত্র। তবে দিনশেষে তার যেকোনো সিদ্ধান্তে যে বিসিবির সমর্থন থাকবে, তা নিশ্চিত। সূত্র বলছেন, ‘বোর্ড ওর যেকোনো সিদ্ধান্তে সাহায্য করবে। সে সার্জারি করাতে চাইলে পাশে থাকবে, না চাইলেও থাকবে।’
তামিমের অবস্থান তাই রবার্ট ফ্রস্টের ওই পথিকের মতো। বহুল চর্চিত, নাকি কম ব্যবহৃত, কোন পথটায় হাঁটবেন তিনি? সে সিদ্ধান্তটা এখন নিতে হবে তাকেই।