প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩ ২০:০৫ পিএম
আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৩ ২০:০৯ পিএম
ব্যাটসম্যানদের খেলা ক্রিকেটে ম্যাচের পটভূমি রচিত করে থাকেন বোলাররা। প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের নাকানিচুবানি খাইয়ে ম্যাচ ছিনিয়ে নিতে দেখা যায় তাদের। পার্শ্বচরিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হলেও নিজেদের দিনে মূল চরিত্র হয়ে ওঠেন, বনে যান ম্যাচের নায়ক। সে রকমই পাঁচ বোলারকে পেয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। টেস্ট ক্রিকেটে ৬০০+ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে যাদের। এ তালিকায় সবশেষ সংযোজন ইংল্যান্ডের পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড।
মুত্তিয়া মুরালিধরন (৮০০)
ক্রিকেটের পাঠ চুকিয়েছেন এক যুগেরও বেশি সময় আগে। অথচ এখনও তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ক্রিকেটবিশ্ব। টেস্ট ক্রিকেটে বোলারদের আদর্শ শ্রীলঙ্কান এই কিংবদন্তি। দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কেবল টেস্ট ক্রিকেটেই রেকর্ড ৮০০ উইকেট তুলেছেন ২০১০ সালে সবশেষ টেস্ট খেলা মুত্তিয়া মুরালিধরন।
১৯৯২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২২ গজে ডান হাতে বল ঘুরিয়ে মুগ্ধতা কেড়েছেন তিনি। মাঠে নেমেছেন ১৩৩ টেস্টে। ২৩০ ইনিংসে হাত ঘুরিয়ে ২২.৭২ গড়ে ৮০০ উইকেট শিকার করেছেন এই লঙ্কান। যেই কীর্তির ধারেকাছে নেই দ্বিতীয় কেউ। ১৯৯৮ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক টেস্টে ১৬ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে তার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০২ সালে ৫১ রান খরচায় ৯ উইকেট শিকার করেছিলেন মুরালিধরন, যা তার ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারে তার ধারেকাছে নেই কেউ। মোট ৬৭ বার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। পরের অবস্থানে থাকা শেন ওয়ার্ন ঠিক ৩০ ধাপ দূরে।
শেন ওয়ার্ন (৭০৮)
ক্রিকেটের ২২ গজ বোধহয় চিরকালই তার কাছে ঋণী থাকবে। লেগস্পিনারদের কাছে আদর্শ হয়ে থাকবেন প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন। এখনকার সময়ের সেরা লেগস্পিনার রশিদ খান কিংবা অ্যাডাম জাম্পাদের বোলিংয়ে আসার অনুপ্রেরণা তিনি। ১৯৯২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত গোটা বিশ্বকে মোহিত করে রেখেছিলেন ওয়ার্ন। টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বাধিক ৭০৮ উইকেট আজও তার নামের পাশে।
ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৪৫ ম্যাচে মাঠে নেমে ২৭৩ ইনিংসে হাত ঘুরিয়েছেন ওয়ার্ন। যেখানে ২৫.৪১ গড়ে উইকেট শিকার করেছেন ৭০৮টি। টেস্ট ক্যারিয়ারে তার সেরা বোলিং ফিগার ৭১ রান খরচায় ৮ উইকেট। ৩৭ বার পাঁচ উইকেট শিকারের কীর্তি আছে এই অজি কিংবদন্তির। তবে এসবের বাইরে বল অব দ্য সেঞ্চুরি করার কীর্তি আছে তার নামের পাশে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথমবার বল করতে নেমেই ওভার দ্য উইকেট থেকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বিশ্বকে চমকে দেন ওয়ার্ন। লেগস্টাম্পের অনেক বাইরে থেকে চলে আসা বলে উড়ে যায় মাইক গ্যাটিংয়ের অফস্টাম্প। অ্যাশেজ এবং ক্রিকেট ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছিল সেদিন। প্রজন্মের বিভিন্ন লেগস্পিনারের চোখে ওই বলটি এখন বিস্ময় জাগানিয়া।
জেমস অ্যান্ডারসন (৬৮৮*)
২০০৩ সালে টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরুর পর মুদ্রার দুই পিঠই দেখা হয়ে গেছে ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসনের। চোট, অফ ফর্ম কিংবা কঠোর সমালোচনা কোনো কিছুতেই দমে যাননি তিনি। টেস্ট ক্রিকেটকে এখনও আঁকড়ে ধরে আছেন ৪০ বছর বয়সি এ তারকা। ১৮১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩৩৭ ইনিংস বল হাতে নেমে এরই মধ্যে ৬৮৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। খেলাটাকে এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন বলেই সম্ভাবনা আছে ওয়ার্নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। ওয়ার্ন থেকে মাত্র ২০ উইকেট দূরে তিনি।
দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৬.২১ গড়ে ৬৮৮ উইকেটের পাশাপাশি ৩২ বার পাঁচ উইকেট ও ৩ বার ১০ উইকেট শিকার করেছেন এই বোলার। তার সেরা বোলিং ৪২ রানে ৭ উইকেট। পেসারদের কাছে আদর্শ এই ইংলিশ তারকা। গতির সঙ্গে সুইংয়ে ব্যাটারদের পরাস্ত করতে তার জুড়ি নেই। বয়সটা বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো গতি না থাকলেও এখনও লাইন-লেন্থ বজায় রেখে ব্যাটারদের ভোগানোর কাজটা ভালোই পারেন অ্যান্ডারসন।
অনিল কুম্বলে (৬১৯)
১৯৯০ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছিলেন অনিল কুম্বলে। তার লেগব্রেক ঘূর্ণি যেন ছিল প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের মারণফাঁদ। ২২ গজে বল হাতে তার বীরত্বও কম নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভাঙা চোয়াল নিয়ে বল করতে নামার মতো বীরত্বের কারণে আজীবন তাকে মনে রাখবে ভারত।
এসবের বাইরে ১৩২ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৩৬ ইনিংস হাত ঘুরিয়ে ২৯.৬৫ গড়ে ৬১৯ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ৮ বার শিকার করেছেন প্রতিপক্ষ দলের ১০ উইকেট। সঙ্গে ৩৫ বার ৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। পরবর্তীকালে ভারতকে কোচিং করিয়েছেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি টেস্ট উইকেট শিকারিদের তালিকায় আছেন চার নম্বরে। তবে স্থান হারানোর শঙ্কা আছে তার। ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড হাঁটছেন তার পিছু।
স্টুয়ার্ট ব্রড (৬০০*)
অ্যাশেজ সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ৬০০ উইকেটের কীর্তি ছুঁয়েছেন স্টুয়ার্ড ব্রড। ২০০৭ সালে যাত্রার পর শুরুতে হোঁচট খাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এই ক্রিকেটার। নেতৃত্ব দিচ্ছেন পেস বোলিংয়ে। ১৬৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩০৫ ইনিংস হাত ঘুরিয়ে প্রতিপক্ষের ৬০০ উইকেট তুলে নিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সি পেসার। স্বপ্ন দেখেন আগামীতে নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার।
বুধবার অ্যাশেজ সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে ইংল্যান্ডের বুক থেকে পাথর নামিয়েছেন তিনি। ইংলিশদের ভোগানো ট্রাভিস হেডকে চা বিরতির পর আর দাঁড়াতে দেননি তিনি। ৪৮ রানে হেডকে ফিরিয়ে ৬০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই তারকা। এ সময় দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানান ইংল্যান্ডের সমর্থকরা।
দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৭.৫৮ গড়ে এই কীর্তি গড়েছেন তিনি। তিনবার ১০ উইকেটের সঙ্গে ২০ বার প্রতিপক্ষের ৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ১৫ রানে ৮ উইকেট তার ক্যারিয়ারসেরা, যা প্রমাণ করতে যথেষ্ট নিজের দিনে ঠিক কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন তিনি।