বিশ্লেষণ
মোহাম্মদ ইসাম
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৩ ১১:৩১ এএম
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৩ ১১:৩৮ এএম
সিলেটে দারুণভাবে শেষ হলো টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পরিবর্তন। যে আফগানিস্তান ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে আধিপত্য দেখাত, তাদের ৪ উইকেটে হারিয়ে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সিরিজে জয় নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এই বছরে নতুন ধারার ক্রিকেটে, পাওয়ার প্লেতে ব্যাট ও বলে আধিপত্য দেখিয়েছে দল। ডেথ ওভারগুলোতেও বোলাররা ছিলেন দুর্দান্ত, থিতু হওয়া ব্যাটাররা খেলা শেষ করে তবে মাঠ ছেড়েছেন। তারা যেভাবে চেয়েছিলেন প্রায় সবকিছুই তাদের পক্ষে সেভাবেই ধরা দিয়েছিল।
আরও পড়ুন : মারুফায় নতুন আশা
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয় টি-টোয়েন্টিতে ভয়ডরহীন তথা ওপেন-মাইন্ডেট পদ্ধতিতে খেলার বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছে। এটিকে সাহসী পন্থা ভাবা হলেও মূলত বাংলাদেশ বিশ্বের বাকি দেশের টি-টোয়েন্টি খেলার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগোচ্ছে। পাওয়ার প্লেতে মারকাটারি ব্যাটিং। শক্তিশালী পেস আক্রমণ তৈরি। পর্যাপ্ত বোলার দলে রাখা। দলে এমন খেলোয়াড় রাখা- যিনি দ্রুত রান তুলতে শুধু ছক্কার জন্য মরিয়া হয়ে নেই। নতুন বাংলাদেশে এমন অনেক কিছু একসঙ্গে আসছে।
টপ অর্ডারে শক্তিশালী তিন ব্যাটারকে খোঁজার দিনও বোধ হয় শেষ হয়েছে। লিটন দাস, রনি তালুকদার ও নাজমুল হোসেন শান্ত— চলতি বছরে এই তিন ব্যাটার সর্বোচ্চ রান করেছেন। সাকিব আল হাসান, তৌহিদ হৃদয় ও শামিম হোসেনরাও দলের প্রয়োজনে ব্যাটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
শুধু উইকেট তুলেই নয়, তাসকিন আহমেদের দাপুটে বোলিং প্রতিপক্ষকে চেপেও রেখেছে। বোলিংয়ে নেতৃত্ব দেওয়া তাসকিনের গতি, বাউন্স ও লাইন লেন্থের বোলিং সামলে প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে রান খুঁজতে হয়েছে অন্য বোলারদের ওভারে। হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে সাকিবও বোলিংয়ে বাকি কাজ দারুণভাবে সামলেছেন।
ফিল্ডিংয়ে তথা ক্যাচিংয়ে বড় উন্নতি করেছে এই দল। চলতি বছরে মার্চের পর এখন পর্যন্ত ৩৩টি ক্যাচ লুফে নিয়েছে টাইগাররা, সেখানে ড্রপ করেছে ৬টি ক্যাচ। শেষ দুই বছরে ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে এই সমীকরণের পার্থক্য বিবেচনায় আনা হলে, সাকিব আল হাসানের দল এখানে বড় সাফল্য এনেছে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দুর্দান্ত এমন সাফল্য দারুণ সময়ে এসেছে। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা শেষ তিনটি ওয়ানডে সিরিজের দুটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের পর থেকে ঘরের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে যে বাংলাদেশকে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে দেখা যায়, সেটির সঙ্গে এমন হার একদম যায় না। টি-টোয়েন্টি সিরিজ সেখানে ভিন্ন, তবে ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে যাওয়ার বিষয়টি থাকলেও একমাত্র ওই সিরিজ হারটি ততটা খারাপ কিছুও ছিল না। এই সময়ে বাংলাদেশ ৮টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে হেরেছে মোটে ওই একটিতেই। দলের নেতৃত্বে এ সময় সামনে থেকে লড়েছেন সাকিব। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর টাইগারদের এই পুনরুজ্জীবনের অন্যতম নায়কও তিনি। টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত করা খেলোয়াড়রা তাদের লড়ার মানসিকতা এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে নিয়ে যাবে বলেও বিশ্বাস করেন সাকিব।
টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের বেশিরভাগ খেলোয়াড় ওয়ানডে দলেও আছে, তারা এই ফরম্যাটের আত্মবিশ্বাস সেখানেও নিয়ে
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সফলতা আসার পেছনে দলের সবার ভূমিকা দেখছেন অধিনায়ক সাকিব, ‘টি-টোয়েন্টিতে নমনীয়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে একজন উদ্বোধনী ব্যাটার কিংবা সাত নম্বরে যিনি ব্যাটিংয়ে নামবেন— দুজনের একই কাজ করতে হতে পারে। যদি একজন ওপেনার ১৫ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করে, তাকে তাহলে শেষ পাঁচ ওভারও ব্যাট করা উচিত। যদি একজন ব্যাটার পরিস্থিতি মানিয়ে চলতে পারে, তাহলে তার দলও কঠিন সময় সামলে সামনে এগোতে পারবে। ব্যাটারদের মতো বোলারদেরও একই নিয়ম। যদি বাজে সময়ে ভালো বল করতে পারে, তাহলে লড়াই করা তার কঠিন কিছু হবে না।’