প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৩ ১২:০৯ পিএম
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৩ ১২:৩৩ পিএম
যোগ করা অতিরিক্ত সময়টাও তখন শেষের পথে। বাংলাদেশ হন্যে হয়ে ঘুরছে একটা গোলের জন্য। একটা গোল হলেই খেলাটা গড়ায় টাইব্রেকারে! ১১৮তম মিনিটে একটা কর্নার এলো নিজেদের বক্সে। কুয়েত বক্সে তখন দেখা গেল খুবই অপ্রত্যাশিত একজনকে। হলুদ জার্সি পরা আনিসুর রহমান জিকো! যার কাজটা গোল ঠেকানোর, সেই তিনিই কি না চলে এসেছেন গোল করতে!
আরও পড়ুন : বাছাই পর্বে রেকর্ড গড়া হাসারাঙ্গাকে আইসিসির তিরস্কার
ইউরোপীয় ফুটবলে এমন কিছুর দেখা হরহামেশাই মেলে। এই তো দুই মৌসুম আগেও লিভারপুল শীর্ষ চার নিশ্চিত করেছিল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারের গোলে। জিকো অবশ্য গোল করতে পারেননি। তা অবশ্য তার কাজও নয়। দলের জেতা হয়নি শেষমেশ। তবে জিকো যা করেছেন, সেটাই তাকে নায়ক বানিয়ে দিয়েছে; কুয়েতের কাছে ১-০ গোলের হারের পরও।
শুরুর অর্ধটায় কুয়েত ছিল বেশ অগোছালো। তাই জিকোও অনেকটাই নিবিঘ্ন সময় কাটিয়েছেন, অন্তত শুরুর ৩০ মিনিট। আধাঘণ্টা পেরোনোর সময় তার ‘অফিস ওয়ার্ক’ শুরু। আল রাশিদির শট ফিস্ট করে ঠেকালেন কুয়েতের আক্রমণ। সেই যে শুরু, এরপর আর তার ফুরসত কোথায় ছিল দম নেওয়ার? একটু পর আবারও বাংলাদেশ বিপদসীমায় আল রাশিদি। এবারও তার বাধা ওই জিকোই। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন দলের গোলপোস্ট।
শুরুর অর্ধে ওই দুবারই। তার বড় পরীক্ষাটা আসে পরের অর্ধে, যখন বাংলাদেশ প্রাণশক্তি হারাচ্ছিল একটু একটু করে, আর কুয়েতও ফিরে পাচ্ছিল নিজেদের ছন্দ। ৬১ মিনিটে আল দেফেরির ফ্রি কিক ঠেকান ফিস্ট করে, এর দুই মিনিট পর আল রাশিদির আরও একটা শট ঠেকান তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যস্ততা যেন বাড়ছিল পাল্লা দিয়ে। ৬৮ মিনিটে আবদুল্লাহ, ৭৪ মিনিটে আবারও ওই রাশিদির শট ঠেকান তিনি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে যে বাংলাদেশ গোল হজম করেনি, তাতে জিকোর ওই ছয় সেভের অবদানটাই তো সবচেয়ে বেশি।
যোগ করা অতিরিক্ত সময়ের শুরু থেকেই কুয়েত ছিল ফ্রন্টফুটে। একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছিল জয়সূচক গোলের খোঁজে। ৯৮ মিনিটে তো বিশাল এক সুযোগই তাদের দিয়ে বসেছিল দলের রক্ষণ! প্রতি আক্রমণে উঠে এসেছিল কুয়েত, যাতে আবার তারা রীতিমতো সিদ্ধহস্ত! তবে ভয় কিসের? জিকো তো আছেনই! তিনি একাই ছিলেন গোলমুখে, শুরুতে আল খালিদি, ফিরতি চেষ্টায় আল রাশিদির শটটাও দেন ঠেকিয়ে।
যোগ করা অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ কয়েক সেকেন্ডে গোলটা হজম করেছে দল। তাতে অবশ্য জিকোর করার ছিল সামান্যই। রক্ষণের ভুলে বলটা আবদুল্লাহ পেয়ে গিয়েছিলেন অনেকটা ফাঁকায়। তার বুদ্ধিদীপ্ত শটটা জিকোকে নড়ার সুযোগ না দিয়েই জড়ায় বাংলাদেশের জালে। রক্ষণভাগ আর জিকোর ১০৫ মিনিটের চোয়ালবদ্ধ প্রতিরোধ ভাঙে তখনই।
তবে তার আগে জিকো যা করেছেন, বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখতে তা যথেষ্টই ছিল। এমন পারফরম্যান্স অবশ্য জিকোর জন্য নতুন কিছু নয়। কাতার বিশ্বকাপের বাছাই পর্বেই তো ওমানের বিপক্ষে তার সেভের সংখ্যা ছিল দুই অঙ্কে। সে সংখ্যাটাও ছাড়ানো হয়নি আজ। তবে দলের জন্য তাই প্রায় যথেষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
ম্যাচের আগে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা আর অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া দুজনের কণ্ঠেই ছিল লড়াইয়ের প্রত্যয়। সে প্রত্যয়টা যে বাংলাদেশ ম্যাচেও ফলিয়ে দেখিয়েছে, তার কৃতিত্বটা তো জিকোরই! দল ম্যাচটা হেরে গেলেও বাংলাদেশের নায়ক তাই আনিসুর রহমান জিকোই।