প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৩ ১০:১৫ এএম
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৩ ১০:১৯ এএম
আমি ফুটবলকে ভালোবাসি, এর জন্যই আমি বেঁচে আছি; কিন্তু আমার কাছে সবার আগে আমার পরিবার। পরিবার নিয়ে এমন কথা তো মেসিকেই মানায়। তার মতো এমন আঁকড়ে ধরে ভালোবাসতেইবা জানেন কজন। অথচ অর্থ খ্যাতি-যশের সঙ্গে বদলায় মানুষের আচরণ। সে সব নিয়ে কখনোই ভাবেননি মেসি। বাইরের ভোগবিলাসে কাটাননি সময়।
আরও পড়ুন : রোজারিওতে ছুটির আমেজে কিং লিও
সঙ্গিনী আন্তোনেলা রোকুজ্জোকে সঙ্গে নিয়েই সময়টাকে উপভোগ্য করার চেষ্টা করেছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বিতর্ককে কখনোই কাছে ভিড়তে দেননি। পরিবারের বাইরের সময়টাতে শুধু মন দিয়ে ফুটবলটাই খেলে গেছেন মেসি, যা তাকে দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। ফুটবলের বাইরেও তাই এই প্রজন্মকে মেসি শেখাচ্ছেন কীভাবে প্রিয় মানুষটিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে হয়। দুঃখ ও সব না পাওয়াকে উপেক্ষা করে পরিবারের কাছে হাসতে হয়।
রোকুজ্জোর সঙ্গে মেসির পরিচয়টা সেই ছোটবেলা থেকে। মেসির শহর রোজারিওতেই জন্ম রোকুজ্জোর। পাঁচ বছর পর্যন্ত রোকুজ্জোর সঙ্গে সময়টা বেশ কাটিয়েছেন মেসি। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বার্সায় যেতে হয় তাকে। তৈরি হয় দূরত্ব। এদিকে সুস্থ হয়ে ফুটবলে বার্সায় রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন মেসি। রোকুজ্জো হয়তো ধরেই নিয়েছিলেন স্পেনে সাড়া ফেলে দেওয়া মেসি আর্জেন্টিনায় ফিরলেও নিশ্চয় তার সঙ্গে কথা বলবেন না। হয়তো ভুলেই গেছেন শৈশবের বান্ধবীকে।
কিন্তু না, মেসি কিছুই ভুলেননি বরং ফিরলেন প্রিয় বান্ধবীর সবচেয়ে দুঃসময়ের দিনে। ২০০৫ সালে প্রিয় বন্ধু উরসুলা নাটজকে গাড়ি দুর্ঘটনায় হারান রোকুজ্জো। বিষয়টি নিয়ে সারাক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকতেন তিনি। খবর পৌঁছায় মেসির কানে। এক মুহূর্ত দেরি না করে বার্সা থেকে উড়ে যান আর্জেন্টিনায়। ফিরে যান তার শৈশবের প্রিয়মুখ রোকুজ্জোর কাছে।
সেই দ্বিতীয়বারের মতো তাদের পথচলা শুরু। সেই পথ ধরে আজও হাঁটছেন দুজনে। জীবনের ৩৫টি বসন্ত পেরিয়ে ৩৬-এ পা দিয়েছেন মেসি। দীর্ঘ জীবনে পেয়েছেন বহু সাফল্য। পথে তাদের ঘর আলোকিত করে পৃথিবীতে এসেছে তিন সন্তান। কিন্তু রোকুজ্জোর কাছে মেসি এখনও সেই আগের মতোই রয়ে গেছেন। যে সবার কাছে লাজুক কিন্তু তার কাছে নয়।
মেসি-রোকুজ্জো দম্পতির ঘরে প্রথম সন্তান আসে ২০১২ সালে। সে সময় ইকুয়েডরের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ম্যাচে গোল করার পর শার্টের নিচে বল রেখে প্রথম সন্তান থিয়াগোর আগমন উদযাপন করেন মেসি। এরপর তাদের ঘরে এসেছে মাতেও এবং সিরো। প্রত্যেকের আগমনকেই ফুটবল মাঠে স্মরণীয় করে রেখেছেন মেসি। ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও মেসির কাছে সবার ওপরে তার পরিবার। বাবা কাজ করছেন নিজের এজেন্ট হিসেবে। অন্যদিকে মা প্রায়ই ম্যাচ দেখতে হাজির হন ছেলের।
বার্সেলোনা ছাড়ার সময় পরিবারকে প্যারিসে নিয়ে গেছেন মেসি। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পরিবারের কষ্ট হবে ভেবেই সেদিন অঝোরে কেঁদেছিলেন মেসি। জানিয়েছিলেন- থিয়াগো, মাতেও, সিরোরা হয়তো তাদের পুরোনো বন্ধুদের আর পাবে না। প্যারিসে দুই বছর কাটানোর পর বার্সায় ফেরার কথা ছিল মেসির। সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালও চেয়েছিল মেসিকে ভেড়াতে। প্রস্তাবটাও ছিল বেশ লোভনীয়।
কিন্তু রোকুজ্জোর কথা ভেবেছেন মেসি। সৌদি আরবের ধর্মীয় রীতিতে নানা বিধিনিষেধ থাকায় সেখানে যেতে আগ্রহী হননি রোকুজ্জো। মেসিও সায় দিয়েছেন তার কথায়। চাপমুক্ত থেকে পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে যুক্তরাষ্ট্রে মেজর সকার লিগের দল ইন্টার মিয়ামিতে পারি জমিয়েছেন। যেখানে আগে থেকেই নিজের বাড়ি রয়েছে তাদের।
মেসির জীবনে সন্তান ও পরিবারের প্রভাব বেশ লক্ষণীয়। পরিবার নিয়ে মেসি বলেন, ‘আপনি যখন বড় হন তখন আপনি মাঠে এবং মাঠের বাইরে জীবনের সব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেন। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে, তিনটি সন্তান থাকার কারণে জীবনের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি, আমার চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। এটি আমাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
রোকুজ্জোকে নিয়ে মেসি বলেন, ‘আমার স্ত্রী, আন্তোনেলার প্রচুর গুণ রয়েছে। আমি সত্যিই প্রশংসিত কীভাবে সে প্রতিদিনের সবকিছু সুন্দর ভাবে। সে সর্বদা শান্ত মেজাজে থাকে এবং প্রশংসনীয়ভাবে সব সমস্যার সমাধান করে। সে অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে ভালো সঙ্গী।’