বিশ্লেষণ
শহিদুল আজম
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩ ২০:৪১ পিএম
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩ ২০:৪৪ পিএম
যাকে মাঠে দেখেছি সাহসিকতা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণ মোকাবিলা করে দল জেতাতেন, তিনিই কি হেরে যাবেন জীবনযুদ্ধে? এ কেমন জীবন?
আরও পড়ুন - ভারতকে ভুগিয়ে অবশেষে থামল অস্ট্রেলিয়া
আশি আর নব্বই দশকে ঢাকার ফুটবলের সেরা গোলরক্ষক, লাখো-কোটি দর্শকের আইকন হয়ে ওঠা মোহাম্মদ মহসিনের বর্তমান অবস্থায় এমন প্রশ্ন উঠেছে। ভালো নেই আমাদের সেই মহসিন। যিনি মাঠে তার দৃঢ়তায় সবার হৃদয়ে সাহসের বীজ বুনেছেন, এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র ছড়িয়েছেন, তিনি নিজেই এখন শারীরিক-মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এতটা খারাপ অবস্থা যে, তাকে আটকে রাখতে হয় ঘরের ভেতর। নইলে হারিয়ে যেতে পারেন! ছয় বছরের ছোট ভাই পিন্টু তাকে দেখভাল করেন। খাওয়ান। গোসল করান। নইলে নিজের খাওয়ার কথাও মনে থাকে না। এমন অবস্থা কেন? পিন্টুর ব্যাখ্যায় কারণ তিনটি। দাম্পত্য বিচ্ছেদের পর একাকিত্ব জীবন, নিজের জমি বেহাত হয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক দৈন্য ইত্যাদি। কারণ হয়তো আরও আছে, অনুমান করা যায়। ফুটবল মাঠে যার সোনালি সময় কেটেছে, সমর্থক আর সমর্থনে যিনি সব সময় উজ্জীবিত থেকেছেন, জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছেন; তিনি কেন এ অবস্থায় যাবেন?
জীবনের ক্যালেন্ডারের গতি স্থির নয়। ধারাবাহিক এবং শৃঙ্খলায়ও হয়তো থাকে না সব সময়। মাঠে চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়- একজন খেলোয়াড়ের চেয়ে এটি ভালো আর কে জানেন। এরপরও জীবনযুদ্ধের রূপ আলাদা। কেউ কেউ হেরে যান, কিংবা হেরে যেতে হয় অথবা হেরে যাওয়ার শঙ্কায় থাকেন। যিনি এমন পথে থাকেন, তিনি হয়তো বুঝেন না। তার আশপাশের মানুষ কষ্ট পান। মহসিন সেই চরিত্রের। ক্লাব ফুটবল, জাতীয় দলের ক্যাম্প- ফুটবলার মহসিনের সঙ্গে যখন কথা হতো, কী দৃঢ়চেতা এক খেলোয়াড় দেখেছি। এত বছর পর তার এমন বিপর্যয় মেনে নেওয়া কষ্টকর। এ পরিণতি এক দিনে হয়নি। দিনে দিনে হয়েছে। খেলাধুলা মানুষকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেখায়। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে কি এই শিক্ষা কাজে লাগবে না। সব ডিসিপ্লিনেই আমাদের ক্রীড়াবিদদের দুঃখ এবং হতাশা, অবসর জীবন নিয়ে।
দেশের সীমানা যত বড়, জনগোষ্ঠী যত বিশাল- কাজের জায়গাটা ততটা নেই। যতক্ষণ সরব মাঠে, ততক্ষণই খোঁজখবর নেওয়া। এরপর কিছু নেই। একজন ফুটবলার তার যৌবন মাঠে ব্যয় করে শেষ জীবনে অন্য জগতে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করেন। আর তাই হয়তো মাঝেমধ্যেই সামনে আসে খেলোয়াড়দের নানা দুর্দশার কথা। মহসিনের মতো তারকাদের খবর আলোড়ন সৃষ্টি করে। সাধারণের কথা কেউ ভাবেও না। পেশাদারত্বের এই যুগে অনেক কিছুই ভাবনার সুযোগ আছে। খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ পুনর্বাসনের বিষয়গুলোও ভবিষ্যৎ ভাবনায় থাকা প্রয়োজন। মহসিনের মতো সাবেক সেরাদের পুনর্বাসনে অবশ্যই ক্রীড়া ফেডারেশনের ভূমিকা আছে। তার পরিবার অবশ্য আর্থিক সাহায্য চায়নি। তারা চেয়েছে তার বেহাত হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার। যদিও এটি আইনগত বিষয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এ বিষয়টি নজরে এনে প্রমাণ করেছে, চাইলে অনেক সহায়তা দেওয়া সম্ভব।
মহসিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন, তার অগণিত ভক্ত, শুভানুধ্যায়ী তা-ই চাইছেন। ক্রিকেট বোর্ডের উদ্যোগের পর তিনি আরও সহায়তা হয়তো পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু যারা দেশের জন্য খেলেছেন, উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, এমন হয়তো আরও অনেকেই আছেন যাদের খোঁজ আমরা জানি না। মহসিন যেন সেই সতর্ক সংকেতই দিলেন। জানিয়ে দিলেন পুরোনো খেলোয়াড়দের জীবন নিয়ে খোঁজ নেওয়া দরকার। আমরা মাঠের দৃঢ়চেতা, প্রবল আত্মবিশ্বাসী মহসিনকে চাই। তিনি ফিরে আসুন আগের মতোই।
সিনিয়র সাংবাদিক, আউটপুট এডিটর, এটিএন নিউজ