প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩ ১৭:০৬ পিএম
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৩ ১৭:০৭ পিএম
অতি সহজে গ্রেট ব্রিটেন নিজের কব্জায় নেওয়ার পর জুলিয়াস সিজার বলেছিলেন, ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম।’ বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিসে আসা লিওনেল মেসি হয়তো এবার বিখ্যাত উক্তিটি খানিকটা ঘুরিয়ে বলবেন, ‘এলাম, দেখলাম, চলে গেলাম।’ পিএসজির জার্সিতে জয়ের খেরোখাতায় তার নামে আর উঠলই বা কী? যা উঠেছে তা হয়তো প্রত্যাশিত ফলের একটা অংশও না! আর্জেন্টাইন তারকা ফরোয়ার্ডকে বলা হয় বর্ন উইনার। ‘জেতার জন্য জন্ম’- এমন খেতাবের মেসি বার্সেলোনার বাইরে যেন ‘কিচ্ছু’ না— অন্তত ট্রফি জয়ের ক্ষেত্রে।
আরও পড়ুন - কুস্তিগিরদের পাশে বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটাররা
পিএসজি মেসিকে এনেছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। তাদের বিশাল প্রজেক্টের প্রধান অংশে ছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ক্লাব সভাপতি নাসের আল খেলাইফি যেন বলেই দিয়েছিলেন, ‘যা লাগে দেওয়া হবে, শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ চাই।’ ২০২১ সালে চোখের জলে বার্সাকে বিদায় জানানোর পর প্যারিসে এসে মেসিও বলেছিলেন, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার আদর্শ জায়গা পার্ক দে প্রিন্সেস। ফরাসি ক্লাবটির স্বপ্ন বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মেসি, জানিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ফরাসি জায়ান্টদের জার্সিতেই উঁচিয়ে ধরবেন। কিন্তু জল অবশ্য এবার মেসির পক্ষে গড়াল না।
সবকিছু হলো, ২০২১-২০২৩ সালের মাঝে মেসি তার বহুল আকাঙ্ক্ষিত ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপাও জিতল, কিন্তু ক্লাবের হয়ে সেই স্বপ্ন অধরাই থাকল। প্যারিসের ক্লাবটি ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া মেসি চলে যাচ্ছেন বলতে গেলে খালি হাতেই।
অথচ ক্লাব ক্যারিয়ারের সেরা পাঁচজন খেলোয়াড়ের নাম বললে একজন হিসেবে থাকবেন মেসি। দুজন বললেও সেখানে থাকবে তার নাম। সেই মেসিই কিনা বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে গিয়ে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিলেন। বার্সার একাডেমি থেকে উঠে আসা মেসি, ন্যু ক্যাম্পে কাটিয়েছেন ১৮টি বসন্ত। ৫২০ ম্যাচের ক্লাব ক্যারিয়ারে মেসি জিতেছেন সবকিছু। বার্সাকে স্পেনের রাজা বানিয়েছেন ১০ বার। ইউরোপ সেরা করেছেন চারবার। ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনবার।
পিএসজির হয়ে খাতাটি সেই হিসেবে বলতে গেলে শূন্যই। ফরাসি কাপ, লিগ ওয়ান এবং ট্রফি দেস চ্যাম্পিয়নস এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে ফ্রেঞ্চ ডেরায় মেসির ট্রফি মোটে তিনটি। ক্লাব ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা শুনেছেন নিজেদের দর্শকদের দুয়োও। ৭৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৩২ গোলের সঙ্গে ৩৪টি গোলের সহায়তা করা মেসি পিএসজির লিগ জিততে অবদান রাখলেও পোক্ত করতে পারেননি নিজেকে, রাখতে পারেননি নিজের ছাপ। দুই বছরের ছোট্ট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনে দেওয়া মেসি অম্লমধুর স্মৃতি নিয়ে ফিরছেন খালি হাতেই। মেসি যেন বার্সেলোনার জার্সি ছাড়া বেমানান।
বার্সা ছাড়া অন্য জার্সিতে অর্থাৎ পিএসজিতে মেসি নিজেকে হারিয়ে খুঁজেন— এমন কথায় সমালোচনা হতে পারে বিস্তর। কিন্তু আদৌ সত্য। ট্রফি দিয়ে বিচার না করে মেসির নিজের পুরস্কারের হিসাব করলেও ক্লাব ফুটবলের রাজার মাথায় চড়েনি একটি মুকুটও। ক্লাব ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন সাতটি ব্যালন ডি অরের সব কটি এসেছে স্পেনের ক্লাবটির হয়ে। ফরাসি ডেরায় এসে মেসি শুধু ধুঁকেছেনই। সেটির প্রমাণ স্ট্যাটসে, কাতালান ক্লাবটির হয়ে যেখানে মেসি মৌসুমে লিগ ম্যাচে ৩০ প্লাস গোল করতেন, পিএসজিতে এসে জাল খুঁজে পেয়েছেন সাকল্যে ১৬ বার করে। অথচ লা লিগায় সবশেষ মৌসুমেও ৩০ গোল ছিল মেসির।
পরিসংখ্যান বলছে, লিগ ওয়ানে গোল করতে মেসিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২২৭ মিনিট! আর গোলে সহায়তা করেছেন ৯৬ মিনিটে একবার। লা লিগায় গোল পেতে মেসি সময় নিয়েছেন ৮৯ মিনিট। আর গোলে সহায়তা ছিল প্রতি ৬৩ মিনিটে একবার। অর্থাৎ পিএসজির থেকে যোজন এগিয়ে ছিল বার্সায়। স্পেনের অন্য ট্রফিতেও মেসি ছিলেন দাপুটে, কোপা দেল রেতে ৮০ ম্যাচে ৫৬ গোল। সুপার কোপা ডি স্পেনায় ২০ ম্যাচে ১৪ গোল।
উয়েফা সুপার কাপে ৪ ম্যাচে ৩ গোল এবং সবচেয়ে বড় আসর চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৪৯ ম্যাচে ১২০ গোল, সঙ্গে সব মিলিয়ে ২৬৯ অ্যাসিস্ট। পিএসজির হয়ে লিগ ওয়ানে ৫৮ ম্যাচে ২২ গোল, চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৪ ম্যাচে ৯ গোল এবং অন্য প্রতিযোগিতায় ৩ ম্যাচে মোটে এক গোল। চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকা পিএসজিকে জেতাতে পারেনি ট্রফি। শেষ বেলায় তাই বলা চলে শূন্য হাতেই ফিরেছেন মেসি। অথচ তিনিই কিনা বার্সেলোনাকে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রায় সবকিছু।
ফরাসি স্পোর্টসভিত্তিক গণমাধ্যম লেকিপের সাংবাদিক ভিনসেন্ট দুলুকের মতো বলতে হয়, পিএসজিতে মেসি ছিলেন ডাক্তারের কাছে দাঁত দেখাতে আসার মতো। যেন ডাক্তারের থেকে মুক্তি পেলেই বাঁচি।
আসছে মাসেই শেষ হচ্ছে মেসির সঙ্গে পিএসজির চুক্তি। মেসি কোথায় যাচ্ছেন তা জানতেও এখন অপেক্ষা। তালিকায় কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে আছে সাবেক ক্লাব বার্সেলোনার নামও। ‘বর্ন উইনার’মেসি কী জিততে ফিরবেন নাকি নিজেকে জেতাতে ফিরবেন, উত্তরের অপেক্ষা!