প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩ ১৬:২৭ পিএম
সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবলে মোহামেডানের লক্ষ্যই থাকত টিকে থাকা। বারবার বাজে পারফরম্যান্সে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। সমর্থকরাও চুপসে যান। দীর্ঘদিন শিরোপা খরায় ভোগা দলটি যে ভুলেই গিয়েছিল ট্রফি জয়ের আনন্দ।
মঙ্গলবার কুমিল্লার ভাষাশহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে পুরোনো ওই স্বাদ ফেরায় মোহামেডান। সেটাও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে। সাদা-কালো জার্সিধারীদের উল্লাস বাঁধ ভেঙেছে। শিরোপা জয়ের পর ড্রেসিংরুমের ওই উল্লাস এসেছিল মোহামেডানের ক্লাব চত্বরেও। রাতভর ছিল ওই উল্লাসের রেশ।
শিরোপা জয় উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মোহামেডান। পুরো ক্লাব চত্বর আলোকসজ্জায় সজ্জিত করার তোড়জোড় চলছে। ফুটবলারদের মুখে শোভা পাচ্ছে আনন্দের হাসি। মোহামেডানকে শিরোপা জিতিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত সাদা-কালো শিবির।
দীর্ঘ ৯ বছর পর মোহামেডানের আলমারিতে যোগ হলো চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। ফেডারেশন কাপ জিতেছে ক্লাবটি দীর্ঘ ১৪ বছর পর। মোহামেডান ক্লাবে বুধবার সকালে কোচ আলফাজ আহমেদ বলছিলেন, ‘সামনে লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। সেগুলোতে লক্ষ রাখা হয়েছে। এ জন্যই ক্লাব কর্মকর্তারা এখনই ফেডারেশন কাপ জয়ের উদযাপন করতে চাননি।’
তবে উদযাপনের বিষয়টি পুরোপুরিই তিনি ছেড়ে দিয়েছেন ক্লাব কর্তাদের ওপর, ‘ক্লাব কর্মকর্তারাই বলতে পারবেন কবে উদযাপন হবে। তবে আমাদের টার্গেট থাকবে লিগের পরের ম্যাচগুলোতে ভালো করার।’
এই সাফল্যের উদযাপনে আনুষ্ঠানিতার সূচি এখনো স্থির হয়নি। তবে ফুটবলাররা অবশ্য বিরত থাকেননি উদযাপন থেকে। নিজেদের মতো করে উদযাপন করেছেন। কোনো কোনো ফুটবলারের জন্য উল্লাসটা অনেক বেশি ছিল। পেশাদার ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন তারা। শিরোপা জয়ের ওই মুহূর্তটা কেমন ছিল? বেশিরভাগ ফুটবলারই উত্তর দিয়েছেন, ‘ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’ ফাইনালের নায়ক গোলরক্ষক বিপু তো কোনো কথাই ঠিকঠাক বলতে পারছিলেন না। বারবার শুধু বলছিলেন, ‘আল্লাহ চেয়েছেন। তাই পেরেছি।’ নিজের অনুভূতি নিয়ে বলেন, ‘আমি বলতে পারব না। বলার মতো ভাষা নেই।’ শিরোপা জয়ের জন্য বিপু কৃতিত্ব দেন কোচ ও দলীয় প্রচেষ্টাকে। তিনি বলেন, ‘কোনো শিরোপাই একা জেতা সম্ভব নয়। দলীয় প্রচেষ্টার দরকার। সবার সঙ্গে বন্ধন থাকা দরকার। সেটাই করেছি আমরা। তাতেই শিরোপা জিততে পেরেছি।’
মোহামেডানের ফেডারেশন কাপ জয়ের আরেক নায়ক সুলেমান দিয়াবাতেও কৃতিত্ব দিয়েছেন সতীর্থ ও কোচকে। সতীর্থদের প্রশংসা করে বলেন, ‘দল হিসেবে না খেললে আমরা জিততে পারতাম না। সতীর্থরা সমর্থন দিয়েছে, তাই চার গোল করে দলকে জেতাতে পেরেছি।’
কোচের প্রশংসা করে দিয়াবাতে বলেন, ‘আলফাজ ভাই অসাধারণ কোচ। তার অধীনে খেলতে পেরে গর্বিত। তার সমর্থনের কারণে মাঠে খেলা সহজ হয়।’ দিয়াবাতের মতো কোচকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বিপু বলেন, ‘আলফাজ ভাই-কানন ভাই সব সময় আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আমাকে তারা প্রস্তুত থাকতে বলেছিল। আস্থা ছিল বলেই মাঠে সেরাটা দিতে পেরেছি।’
দীর্ঘদিন পর পাওয়া সাফল্যে মোহামেডানের এগিয়ে যাওয়ার পথ সহজ হয়েছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। দলটির ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবও তাই মনে করেন। আগামী মৌসুম থেকে ক্লাবের পারফরম্যান্সে আরও উন্নতি আনতে মরিয়া তিনি। নকীব বলেন, ‘ক্লাব তো আসলে দানের ওপর চলে। সাফল্য এলে সংগঠকরা উৎসাহী হন। এখন ভালো দল গড়া হয়তো অনেকটা সহজ হবে।’
আগামী মৌসুম থেকে শিরোপা জয়ের জন্য মাঠে নামার আভাস দিয়েছেন। সে জন্য বর্তমান দলের সব সদস্যকে ধরে রাখার পরিকল্পনাও আছে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেকই এগোচ্ছে মোহামেডান। এই নিয়ে নকীব বলেন, ‘বর্তমান দলের ৮০ শতাংশ ফুটবলারকে ধরে রাখার পরিকল্পনা আছে। দেখা যাক কী হয়। পারলে আরও ভালো কিছু ফুটবলারকে দলে ভেড়ানো হবে।’
মোহামেডানের ফেডারেশন কাপ জয়ের কৃতিত্ব তিনি দিয়েছেন ফুটবলারদের। অন্ধকার কাটিয়ে আলোর পথে ফেরা মোহামেডানকে কীভাবে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সেটাও বলেন তিনি। ‘আমরা দলকে সাফল্য এনে দিতে তরুণদের দিকে নজর দিয়েছিলাম। প্রথম মৌসুমেই তো শিরোপা এনে দেওয়া যায় না। তাই আস্তে আস্তে দলকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। ফুটবলাররা ওই আস্থার প্রতিদান দিয়েছে শিরোপা জিতে।’