প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩ ০২:৫৯ এএম
আপডেট : ১৮ মে ২০২৩ ০৩:৩৩ এএম
কী বলবেন একে? অবিশ্বাস্য? বলাটাই হয়তো স্বাভাবিক।
রিয়াল মাদ্রিদ, যারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাটাকে রীতিমতো ডালভাতই বানিয়ে ফেলেছে রীতিমতো, প্রতিযোগিতার বর্তমান চ্যাম্পিয়নও, সেই রিয়াল মাদ্রিদকে এভাবে গুণে গুণে চার গোল দেবে ম্যানচেস্টার সিটি, সেটা কে ভেবেছিল? সে অবিশ্বাস্য কাজটাই করে বসেছে পেপ গার্দিওলার দল। ৪-০ গোলে হারিয়ে পৌঁছে গেছে প্রতিযোগিতার ফাইনালে, আরও এক বার।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বড় প্রতিপক্ষ সামনে এলেই কোচ পেপ গার্দিওলার যেন কী হয়ে যায়, ভেবে ফেলেন একটু বেশি। তবে এবার এমন কিছু করবেন না, আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন সিটি কোচ। কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসনের রেকর্ড ভেঙে ইউরোপসেরার মঞ্চে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে কোচ হিসেবে ডাগআউটে দাঁড়ানোর রেকর্ড গড়তে চলা কার্লো অ্যানচেলত্তির সামনে আর যাই হোক, ট্যাকটিকাল ভুল করলে টেকা যাবে না! সিটি কোচ কথা রেখেছেন, কোনো পরীক্ষানিরীক্ষার ধার ধারেননি। প্রিমিয়ার লিগে তার দল বহুদিন ধরেই খেলছে আধিপত্য বিস্তার করার মতো ফুটবল। পরীক্ষিত সে কৌশলেই রাখলেন আস্থা। এতিহাদে সেটাই ফল দিল আজ।
তবে সেটা যে এভাবে দেবে, কোচ গার্দিওলাও বোধ করি ভাবেননি! শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রিয়ালের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে তার দল। ভুল বলা হয়ে গেল বোধ হয়। ছড়ি যা ঘোরানোর, তা শুরুর অর্ধেই ঘোরানো হয়ে গিয়েছিল। সিটি করেছে দুই গোল, তবে ৪-০ তো হয়ে যেতে পারত বিরতির সময়েই!
২৩ মিনিটে দারুণ এক পাসে ঘুমোতে থাকা রিয়াল রক্ষণকে ভেঙে চুরে বার্নার্ডো সিলভাকে খুঁজে পান কেভিন ডি ব্রুইনা। সেখান থেকে কোনো ভুলচুক করলেন না সিলভা। সিটি ১-০ রিয়াল। মিনিট দশেক পর আবারও সেই বার্নার্ডো, এবার রিয়াল রক্ষণে বাধা পেয়ে ইলকায় গুন্দোয়ানের দিকভ্রান্ত শটটা এসে পড়ল তার মাথার সামনে, বুদ্ধিদীপ্ত এক হেডারে তা পাঠালেন রিয়ালের জালে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদ এই গেল মৌসুমেই টানা তিন নকআউট লড়াইয়ে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছিল। বিরতির সময় ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও তাই সে স্বপ্নটা দেখার সাহস ছিল রিয়ালের। এমন কিছু যে রিয়াল ভাবতে পেরেছে, তার পুরো কৃতিত্বটাই পাবেন থিবো কোর্তোয়া। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে কম করে হলেও দুটো হেডার ঠেকিয়েছেন আর্লিং হালান্ডের। না হলে যে রিয়ালের সম্ভাবনা একেবারে শেষ হয়ে যেত তখনই!
তবে শেষ না হয়েও লাভ হয়নি! প্রথমার্ধে নিজেদের ছায়া হয়ে ছিল রিয়াল। মাঝে তো সিটি এমনভাবে বল ঘোরাচ্ছিল মাঝমাঠে, ট্রেইনিং সেশনের রন্দো বলেও ভুল হয়ে বসতে পারত যা দেখে! প্রত্যেক পাসে সিটি খেলোয়াড়রা সতীর্থকে খুঁজে পাচ্ছিলেন অনায়াসে, গজ দশেকের স্পেসও মিলছিল মুফতে, রিয়ালের কাউকে প্রেসই করতে দেখা যাচ্ছিল না তখন! প্রথমার্ধের পরিসংখ্যানেই তার ছাপ পরিষ্কার। রিয়াল হজম করেছে ১৩টা শট, ২০১২ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের পর এই প্রতিযোগিতায় এই প্রথম এতগুলো শট এক অর্ধে হজম করার রেকর্ডও গড়া হয়ে গেছে তাতে। বিপরীতে নিজেরা করেছে মোটে একটা। এ সময় রিয়ালের এক্সজি বা প্রত্যাশিত গোল ছিল ০.০১, মানে যা সুযোগ তৈরি হয়েছে, তাতে গোল হতো ওই ০.০১টা। সিটির এক্সজি ছিল ১.৬১, তারা করেছে দুটো। আর বলের দখল? সিটির ৭২ শতাংশের বিপরীতে রিয়ালের পায়ে বল ছিল মোটে ২৮ শতাংশ সময়!
বিরতির পর তাতে একটু বদল এল। রিয়ালকে একটু তৎপর দেখা গেল। সিটিও যেন একটু অবসন্ন হয়ে পড়েছিল। নাহয় এক কেভিন ডি ব্রুইনা যে পরিমাণ ফাঁকা জায়গা নিয়ে বল পেয়েছেন জোন ১৪ আর প্রতিপক্ষ হাফ স্পেসে, প্রথমার্ধের ক্ষুরধার সিটি হলে হয়তো ব্যবধানটা আরও বড়ই হয়ে যেত! তবে তার সুযোগটা রিয়ালকে নিতে দেয়নি সিটি রক্ষণ।
নিজের কাজটা তো সামলেছেনই, লড়াইয়ের সব অনিশ্চয়তা দূর করে দেওয়া গোলটাও এসেছে সিটি ডিফেন্ডারের কল্যাণেই। ফ্রি কিক থেকে ভেসে আসা বলে মাথা ছুঁইয়েছিলেন ডিফেন্ডার ম্যানুয়েল আকাঞ্জি, সেটা রিয়াল ডিফেন্ডার এডার মিলিতাওয়ের গা ছুঁয়ে কাঁপায় রিয়ালের জাল। এর একটু আগে 'হ্যাটট্রিকই' করে বসেন কোর্তোয়া। শুরুর অর্ধে হালান্ডের দুই হেডার ঠেকানো কোর্তোয়া ওয়ান অন ওয়ান মুহূর্তে ঠেকিয়ে দেন নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ডের শট। সে দুঃখ হালান্ড যে ভুলে গেছেন, সেটা তৃতীয় গোলের পরেই বোঝা যাচ্ছিল সাফ।
হালান্ড গোল পাননি। পেয়েছেন ৮৮ মিনিটে তার বদলি হিসেবে যিনি নেমেছেন, সেই হুলিয়ান আলভারেজ। একেবারে শেষ মুহূর্তে ফিল ফোডেনের রক্ষণচেরা পাসে কোর্তোয়ার ডান পা ফাঁকি দিয়ে তিনি বলটা জড়ান জালে। তাতেই রিয়ালের হতাশার ষোলকলা পূরণ হয়। ২০১৯ সালের পর যে আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নকআউটে ৪ গোল হজমের গ্লানি সঙ্গী হয়ে গেছে ততক্ষণে!
সিটি তখন সপ্তম স্বর্গে। হবেই বা না কেন? এক মৌসুম পর আবারও সামনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার সুযোগ, তাও আবার রিয়ালকে এভাবে হারিয়ে! সিটি যে হট ফেভারিট হয়েই ইস্তানবুলে পা রাখবে, এমন বিধ্বংসী পারফর্ম্যান্সের পর তা আর বলে না দিলেও চলে।