প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:০৪ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:১২ পিএম
‘লিটন দা এসে গেছে’- আয়ারল্যান্ড সিরিজ শেষ করে লিটন দাস তখন সবে পা রেখেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্যাম্পে। আগের রাতেই রিঙ্কু সিংয়ের শেষ ওভারের অবিশ্বাস্য কীর্তিতে টানা দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেয়ে গিয়েছিল তার দল। ক্যাম্পে পৌঁছুতে পৌঁছুতে সে ইনিংসের দারুণ প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছিলেন লিটন, সেটা কলকাতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারও পেয়েছিল বেশ।
আরও পড়ুন : একই দেশ, একই বোর্ড, অথচ দুজনের জন্য দুই আইন!
এরপর থেকেই অপেক্ষা ছিল কবে হবে লিটনের অভিষেক। বেঞ্চে বসে দুটো ম্যাচ দেখতে হয়েছিল তাকে। অপেক্ষাটা শেষ হলো এরপর, দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে। ততদিনে আইপিএলের চাপটা কেমন, তার একটা আঁচ পাওয়া হয়ে গিয়েছিল তার।
সে চাপের চূড়ান্তটা যেন টের পেলেন ম্যাচে এসে। শুরুটা অবশ্য করেছিলেন দারুণ এক কভার ড্রাইভে চার মেরে। তাতে মনে হচ্ছিল, ফর্মে থাকা তার কাছে বুঝি সেসব চাপ পাত্তাই পেতে যাচ্ছে না! তবে ভুলটা ভাঙল দুই বল পরই। মুকেশ কুমারের শর্ট বলের গতিটা ধরতেই পারলেন না, ব্যাট চালালেন সপাটে, ৪ বলে ৪ রান করে আইপিএলের প্রথম ইনিংস শেষ হয় তার। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল টেনে নিয়ে মিড উইকেট দিয়ে হাঁকাতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে ফিরলেন।
সেই ম্যাচে উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে দাঁড়িয়েছিলেন লিটন। ব্যাট হাতে ব্যর্থতাটা যেন তখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছিল তাকে। সেটা প্রকাশ পেল ইনিংসের শেষ দিকে এসে। ১৮তম ওভারে বরুণ চক্রবর্তীর বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ললিত যাদব, লিটন স্টাম্পিংয়ের সুযোগটা কাজেই লাগাতে পারলেন না!
একই দৃশ্যের অবতারণা ঘটল পরের ওভারেও! এবার নিতীশ রানার বলে ক্রিজের বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন অক্ষর পাটেল, লিটন স্টাম্প ভাঙতে পারলেন অবশ্য, তবে সেটা দ্বিতীয় চেষ্টায়, অক্ষর ক্রিজে ফেরার পর। উইকেটরক্ষক লিটনের এমন ভুলের দেখা মেলে না সচরাচর। এই তো আইপিএলে যাওয়ার আগে সবশেষ ম্যাচেও তো গুরুত্বপূর্ণ এক স্টাম্পিংয়ে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন বাংলাদেশকে! তাহলে আইপিএলে গিয়ে কী হলো তার?
লিটনের গুরু নাজমুল আবেদীন ফাহিমের চোখে এমনটা ঘটেছে চাপ থেকেই। বিকেএসপিতে তাকে দেখেছেন কাছ থেকে, সে পর্যবেক্ষণ থেকেই তার অভিমত, লিটনের ভুলটা হয়েছে চাপের কারণেই। তার কথা, ‘এমন কিছু অপ্রত্যাশিত। সে তার চেয়েও ভালো খেলোয়াড়। সম্ভবত সে চাপে ছিল, আর যথেষ্ট মনোযোগী ছিল না।’
সেই চাপই তাহলে তার সর্বনাশটা করল! কলকাতা গত রবিবারও ম্যাচ খেলেছে, তবে লিটন একাদশে জায়গা পাননি সেদিন। তাতেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, লিটন আর একাদশে জায়গা পাবেন তো? যদি পান, তাহলে তিনি যে দারুণ পারফর্মই করবেন, তাতে সন্দেহ নেই নাজমুল আবেদিনের। তার ভাষ্য, ‘আমি নিশ্চিত যদি সে একাধিক সুযোগ পায়, তাহলে সে দারুণ পারফর্মই করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার প্রতি ম্যানেজমেন্টের মনোভাবটা খুবই পরিষ্কার; এটা তার জন্য তো বটেই, আমাদের সবার জন্যও একটা শিক্ষা। তার এটা বোঝা উচিত যে সে যদি নিজেকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাহলে তাকে আরও বড় বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।’
এবারের আইপিএলে কলকাতার বিদেশি রিক্রুটদের প্রায় সবার পারফরম্যান্সই গড়পড়তার নিচে। সবচেয়ে বেশি সাত ম্যাচে খেলা রান করেছেন মোটে ১০৭, উইকেট পেয়েছেন তিনটি। সুনীল নারাইনও খেলেছেন সমান ম্যাচে, রান করেছেন মোটে ১৩, তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। রাহমানউল্লাহ গুরবাজ খেলেছেন ৫ ম্যাচে, ১১৭ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেছেন ১০২ রান। লিটন দাস সবেধন নীলমণি এক ম্যাচে করেছেন ৪ রান। ডেভিড ভিসাও খেলেছেন ১ ম্যাচে, করেছেন ১ রান। দুই ম্যাচ খেলে টিম সাউদি নিয়েছেন ২ উইকেট।
এদের মাঝে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন কেবল জেসন রয়। নিজের প্রথম ম্যাচে ৪৩-এর পর দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেছেন ৬৩ রানের ইনিংস। তাকে যদি আপাতত ধ্রুব ধরা হয় কেকেআর একাদশে, তাহলেও তো আরও তিন বিদেশির জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকে, সেখানেও কি জায়গা মিলবে না লিটনের? সে প্রশ্নটা উঠে আসছে এখন।
তবে এই যে তার অপেক্ষা, সুযোগ পাওয়া, এরপর আবার এই একাদশ থেকে জায়গা খোয়ানো, একে বড় একটা শিক্ষার প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছেন দেশসেরা এই কোচ, ‘আমার চোখে, সে গড়পড়তার চেয়ে ভালো, তবে সবার সেরা নয়। নিজের খেলাটাকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়া উচিত তার। ব্যর্থতা বা প্রত্যাখ্যান যা-ই বলুন না কেন, কেউ কেউ সেটা থেকে শেখে। আমি আশা করি এই অভিজ্ঞতাটা তাকে কিছু শিক্ষা দেবে, সে বুঝবে, তার উন্নতির আরও জায়গা আছে। আর এ থেকে সে আরও ভালোভাবে ফেরার শক্তি পাবে।’ আইপিএলের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশটাকে শেখার একটা বড় মঞ্চ হিসেবেই দেখছেন তিনি, ‘এমন প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ আপনাকে আরও পরিপক্ক হতে সাহায্য করে, আরও ভালো খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগ করে দেয়।’
তবে আপাতত তার জন্য পরিস্থিতিটা প্রতিকূল। একেই কোচ ফাহিম দেখছেন দারুণ কিছুর ভিত্তি হিসেবে। তাই তার ফেসবুকে দেখা মিলল একটা স্ট্যাটাসের, যেখানে লেখা, ‘দারুণ কিছুর আগেই তো সবকিছু ভেঙে পড়ে!’ লিটনের ওপর সে আস্থাটা আছে গুরু নাজমুল আবেদিনের, এবার সেটা কলকাতা দেখালেই হয়!