সোহাগের দায় বাফুফে নেবে না
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১১:২৪ এএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৩৭ পিএম
গত ১৪ এপ্রিল বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের ওপর ফিফার নিষেধাজ্ঞা নেমে আসার পর থেকেই এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। দেশের ফুটবলও পড়ে গেছে টালমাটাল এক অবস্থায়। অভিযোগটা যে ছিল গুরুতর! ফিফার রিপোর্টে বলা হয়েছিল ‘আর্থিক অনিয়ম ও জালিয়াতি’র অভিযোগে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা ও ১২ লাখ টাকা সমমূল্যের জরিমানা গুনতে হবে সোহাগকে!
আরও পড়ুন : সোহাগ আজীবন নিষিদ্ধ, তদন্ত করবে ফেডারেশন
সেই নিষেধাজ্ঞার ফরমান আসার দুই দিন পর গতকাল সোমবার এক জরুরি সভা ডাকেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সে সভায় নতুন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদে আনা হয় বাফুফের প্রটোকল ম্যানেজার ইমরান হোসেন তুষারকে। সঙ্গে সোহাগকে দেওয়া হয় আজীবন নিষেধাজ্ঞা। পুরো বিষয়টার ওপর তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় সে সভায়।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি এক প্রশ্নের জবাবে ‘দুর্নীতি’র বিষয়টি এড়িয়েই যান সম্পূর্ণরূপে। বলেন, ‘দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। প্লিজ উইথড্র ইউর ল্যাংগুয়েজ। দুর্নীতি বলতে একটা বিষয়…সেটা খুবই স্পেসিফিক কেইস, একটা কমপ্লায়েন্স, কোনো একটা জিনিস খরিদ করতে তিনি প্রপার কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করেননি, যেটা ৫১ পাতার রিপোর্টে কিন্তু লেখা আছে। সেজন্য কোনো দুর্নীতি হয়নি। দুর্নীতি বলতে, একটা জিনিস ক্রয় করতে যদি ১০ লাখ টাকার নিচে লাগে, তাহলে কোটেশনের মাধ্যমে প্রকৃত সাপ্লাইয়ার এবং যদি দশ লাখের উপরে লাগে, তাহলে টেন্ডারের মাধ্যমে পেপারে দিয়ে ক্রয় করতে হয়- সেটা হয়তো প্রপারলি হয়নি। এ কারণে সেটার তদন্ত হয়েছে।’
ফিফার তদন্তে বলা হয়, ধারা–১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ধারা–১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব), ধারা–২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) ও ধারা–২৮ (তহবিল তছরুপ ও অপব্যবহার) লঙ্ঘনের দায়ে তার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত। পুরো বিষয়টাকে সোহাগের ‘ব্যক্তিগত’ বলে আখ্যা দেন সালাম মুর্শেদী। তার অভিমত, অভিযোগটা স্রেফ সোহাগের ওপরই বর্তায়। বলেন, ‘কোনো একটা জিনিস কিনতে হলে যে প্রক্রিয়া, সেটা তিনি (সোহাগ) প্রপারলি করেননি। তাই তার তদন্ত করেছে ফিফা।’
সমস্যাটাকে সোহাগের ‘ব্যক্তিগত’ উল্লেখ করে সালাম জানান, এর দায়টাও বাফুফে নেবে না। তার কথা, ‘আমরা কোনো দোষ নেব না। আমরা বলব তিনি সঠিকভাবে কাজ করেননি।’ যদিও সভাপতি সালাউদ্দিন বিষয়টাকে দেখছেন ‘ভুল’ হিসেবে। তার কথা, ‘আমাদের জিএস ভুল করেছেন। ফিফা তাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তার ভুলের কারণে।’
বাফুফের ফিন্যান্স কমিটি ফেডারেশনের আর্থিক যেকোনো লেনদেনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে। সে কমিটির অগোচরে লেনদেন কী করে সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাবেও দায়টা স্রেফ সোহাগের ওপরই চাপান সালাম। তার কথা, ‘জালিয়াতি হলে তিনি (সোহাগ) সেটা ব্যক্তিগতভাবে করেছেন। তিনি একটা অর্থ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি একটা ডলার বা অর্থ এক জায়গায় পাঠিয়েছেন, সেটা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের না। সেটা তার ব্যক্তিগত। এখানে ফিন্যান্স কমিটির কোনো জালিয়াতি নেই। (আমাদের কনসার্ন ছাড়া) তিনি পাঠিয়েছেন বলেই তো নিষিদ্ধ হয়েছেন। তিনি যদি সঠিকভাবে করতেন, তাহলে নিষিদ্ধ হতেন না।’
কেন সোহাগকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে বাফুফে থেকে, সে প্রশ্নের জবাবে আবার সালাম মুর্শেদী জানান ভিন্ন কথা। দায়িত্বে অবহেলার কারণটাকেই বড় করে দেখা হয় এখানে। তিনি বলেন, ‘এএফসি, ফিফা থেকে নিয়মিত চিঠি আসে আমাদের কাছে। কিন্তু এই ব্যাপারটা হয়তো সেভাবে পড়েনি। তিনি যেহেতু তার ক্ষমতা সঠিকভাবে ব্যবহার করেননি সেই কারণে আর এই জায়গায় তাকে পুনঃস্থাপিত করা হবে না। এই সিদ্ধান্ত আজ নেওয়া হয়েছে।’
পুরো প্রক্রিয়াটায় বাফুফের ওপরও দায় বর্তায়। সব কিছুর প্রেক্ষিতে বর্তমান কমিটি পদত্যাগ করবে কি না- এমন প্রশ্নও ধেয়ে যায় সালাউদ্দিন ও সালাম মুর্শেদীর দিকে। সে প্রশ্নের জবাব দেননি সালাউদ্দিন। কূটনীতির আশ্রয় নিয়ে সালাম বলেন, ‘আমাদের তো চাইলেই সরিয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে চাইলেই আমাদের পদ থেকে সরানো সম্ভব নয়। যদি না কেউ নিজে থেকে সরে দাঁড়ায়।’