প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩ ২২:২৯ পিএম
রিঙ্কু সিংয়ের গল্পটি পর্দার সিমেনার কাহিনীকে হার মানাবে। কোনো ক্ষেত্রে রুপালি পর্দাকে ছাপিয়েও যাবে রঙ হারানো কিংবা রঙে রাঙানো রিঙ্কুর অতীত-বর্তমান। এক সময়ে জীবিকার জন্য ঝাড়ুদারের কাজ করা মানুষটি আইপিএলে যে অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটালেন, তা তো সিনেমার পর্দায় ফুটে ওঠা অতিমানবীয় গুণের নায়কদেরই গল্প।
শেষ বলে ছক্কার রেকর্ড আছে ভূরিভূরি। শেষ ৫ বলে ছক্কা কি এতদিন ছিল! স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি কিংবা ক্রিকেটে ছিল না। সেই অবিশ্বাস্য কাজটি করে রাতারাতি নায়ক বনে গেছেন রিঙ্কু। গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে মিলিয়ে দিয়েছেন শেষ ৫ বলে ২৮ রানের সমীকরণ। তাই তো ক্রিকেট দুনিয়া ছাপিয়ে অনেক জায়গায় তাকে নিয়ে আলোচনা।
ক্রিকেটের টানে মাঠে থেকে না গেলে হয়তো এই রিঙ্কুকে ক্রিকেট দুনিয়া চিনতই না। কার্যত ঝাড়ুদার হয়ে যাচ্ছিলেন আলিগড়ের ছেলে। রিঙ্কুর বাবা বাড়িতে বাড়িতে এলপিজি গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। তার বড় ভাই চালান অটো। আর এক দাদা কোচিংয়ে পড়ান। অভাব যে বাড়ির নিত্য অতিথি, সেখানে যে স্বপ্নের আকাশে ওঠা তাতে আর আশ্চর্য কী! কিন্তু এই স্বপ্ন দেখতে গেলেও তো সাহসী হতে হয়। ক্লাস নাইনের বেশি পড়া হয়নি রিঙ্কুর। দিনভর ক্রিকেট খেলেই কাটত। যতটুকু আয় হতো, পরিবারের ধার শোধ করতেই কেটে যেত।
২০১৮ সালেই বিবর্ণ গল্পটা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছিল। ২০১৮ সালের নিলামে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে লড়াই করে ৮০ লাখ টাকায় নাইটরা কিনেছিল। ২০১৯ সালে বোর্ডকে না জানিয়ে দুবাইয়ে খেলতে গিয়ে নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিল রিঙ্কু।
পাঁচ বছর আগে রিঙ্কু বলেছিলেন, ‘ভেবেছিলাম ২০ লাখ টাকায় কোনো একটা টিম কিনে নিতে পারে আমাকে। আমার দাম যে ৮০ লাখ হতে পারে, ভাবিইনি। কেকেআর আমাকে নেওয়ার পর একটাই জিনিস মাথায় এসেছিল, দাদার বিয়েতে কিছু টাকা দিতে পারব। বোনের বিয়ের জন্য কিছু টাকা রাখতে পারব। আর একটা ঠিকঠাক বাড়ি নেব। যেখানে থাকতে পারবে পরিবার।’
সেই রিঙ্কুর এবার সব হয়েছে। কলকাতার হয়ে আইপিএলে গতকাল রীতিমতো অসম্ভবকে সম্ভব করে গড়েছেন রেকর্ড, নিজেকে ইতিহাসও বানিয়ে ফেলেছেন। অথচ হয়তো তার একজীবন কেটে যেত ঝাড়ু হাতেই। ব্যাট হাতে এভাবে জশ দয়ালদের শাসন করা হতো না!