নেয়ামত উল্লাহ
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ১১:২৬ এএম
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:০২ পিএম
শেষ কয়েক মাস ধরেই মুশফিকুর রহিমের ব্যাট ছিল বড় নিষ্প্রভ। বড় রানের দেখা পাচ্ছিলেন না দীর্ঘদিন ধরেই। দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটারের এমন ব্যর্থতা বাংলাদেশকেও ভুগিয়েছে কমবেশি। তিনি নিজেও সমালোচনার মুখে কম পড়েননি। তবে সে সময়টাকে পেছনে ফেলে এসেছেন বলেই মনে হচ্ছে এখন। সদ্য সমাপ্ত আয়ারল্যান্ড সিরিজে তার ব্যাট খুঁজে পেয়েছে সুর, ওয়ানডে সিরিজে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পর একমাত্র টেস্টেও জিতেছেন সেরার পুরস্কার।
আরও পড়ুন : ডিআরএসেও আম্পায়ারদের জয়
ওয়ানডে ফরম্যাটে তার ব্যাটে সেঞ্চুরি ছিল না প্রায় দুই বছর ধরে। ২০২১ সালের ২৫ মে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২৫ রানের ইনিংস খেলার পর থেকে তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি ১৬ ইনিংসে। সবশেষ ফিফটিটাও ছিল ছয় মাস আগে, যার পর খেলে ফেলেছেন ৭টি ইনিংস। শেষদিকে তার ইনিংসগুলোর দৈর্ঘ্য কেবল ছোটই হয়ে আসছিল।
টেস্টে সেঞ্চুরিখরাটা অত বড় না হলেও ব্যাট হাতে তার কঠিন সময়টা চোখে পড়ছিল বেশ। ভারতের বিপক্ষে দুটো টেস্টেই থিতু হয়ে বিলিয়ে দিয়ে এসেছিলেন উইকেট।
ব্যাট হাতে এমন দুঃসময়টা চলতি বছরের শুরুতেও ভুগিয়েছে মুশফিককে। বিপিএলে রানে ছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতেই আবারও ব্যর্থ হন তিনি। ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বিদায় নিতে হয়েছিল তাকে ১৬ আর ৪ রানে।
মুশফিক ফিরলেন শেষ ম্যাচ দিয়ে। চট্টগ্রামে তৃতীয় ওয়ানডেতে খেললেন ৭০ রানের ইনিংস, শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খাওয়া বাংলাদেশকে ফেরান কক্ষপথে। ম্যাচটায় বাংলাদেশ জেতে ৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে।
ইংল্যান্ড সিরিজে যে আভাস দিয়েছিলেন, আইরিশ সিরিজে এসে সেটা পুরোপুরি মেলে ধরলেন। প্রথম ওয়ানডেতে খেললেন ২৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস, তাতে ভর করেই দল গড়ল নিজেদের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
পরের ওয়ানডেতে মুশফিককে দেখা গেল আরও খুনে মেজাজে। ৬০ বলে করলেন ১০০, গড়লেন বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির কীর্তি। তাতে ভর করেই আগের ম্যাচে গড়া সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভাঙে বাংলাদেশ।
শেষ ম্যাচে ব্যাটিং পাননি। তার আগেই তামিম ইকবাল আর লিটন দাস শেষ করে এসেছেন খেলাটা। সে ম্যাচে ব্যাট হাতে নামলে যে আইরিশদের নাভিশ্বাস তুলেই ছাড়তেন, তা তার আগের পরের পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে। পুরো সিরিজে তার এমন পারফরম্যান্স তাকে এনে দিয়েছে সিরিজসেরার পুরস্কার, ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মতো।
টেস্টেও আইরিশরা পড়ল তার তোপের মুখে। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করে দলকে দিলেন বড় রানের দিশা। তার ১২৬ রানে ভর করে বাংলাদেশ পায় ৩৬৯ রানের পুঁজি, লিড পায় ১৫৫ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৮ রানের লক্ষ্য ছিল দলের। তবে তিনি যখন উইকেটে এলেন, বাংলাদেশ তখন দ্রুতই দুটো উইকেট খুইয়েছে, আর একবার পা হড়কালেই বিপদটা বড়ই হতো দলের। সেখান থেকে মুশফিক হাল ধরলেন দলের। রান তুললেন দ্রুত, তবে বিপদ হতে দিলেন না আর। বাংলাদেশ যে হেসেখেলেই জিতেছে আইরিশদের বিপক্ষে, তাতে তার অবদানটা সবচেয়ে বেশি। সে কারণেই তো ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছে তার হাতেই। এটাও ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মতোই।
দুঃসময়কে পেছনে ফেলেছেন এমন অর্জন দিয়ে। এর পরও মুশফিক অবদানটা বড় করে দেখলেন বোলারদেরই। বললেন, উইকেটটা যেমন ফ্ল্যাট ছিল, সেখানে বোলাররা যেভাবে খেলেছে, তাতে কৃতিত্বটা তাদেরই বেশি প্রাপ্য।
তবে সতীর্থ সাকিব আল হাসান তার দুঃসময় পেছনে ফেলাকে দেখেছেন কাছ থেকে। মুশফিক সম্পর্কে তার অভিমত, তার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় যে এভাবে ফিরবেন, তা অনুমিতই ছিল। তার কথা, ‘(অফ ফর্ম) এটা তো হয়ই। আমি শিওর আপনার পরিবারের সবার সঙোগ আপনার সব সময় সুসম্পর্ক থাকে না। আবার সব সময় খারাপ সম্পর্ক থাকে না। এটা এমনই। অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি জানেন কীভাবে ওভারকাম করতে হয়। একটা নতুন খেলোয়াড়ের জন্য এটা কঠিন। ১০-১২-১৫ বছর খেলা সবার এই জিনিসটা থাকবে।’
অভিজ্ঞতা দিয়ে এভাবেই দুঃসময়কে ঠেকান মুশফিক, দল নিশ্চয়ই তেমনটাই চাইবে। তাতে যে দলেরই কল্যাণ লুকিয়ে!