প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ১১:১২ এএম
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৪৭ পিএম
অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইনের অফস্টাম্পের বাইরের বলটা ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে একটা রান দ্রুতই নিয়ে নিতে চাইলেন মুশফিকুর রহিম আর মুমিনুল হক। দ্রুত জয়ের তাড়াটা তাতে ছিল পরিষ্কার, সে তাড়াটা তো রান রেটেও ছিল পরিষ্কার, চতুর্থ ইনিংসে ৫ ছুঁইছুঁই রান রেটে কবে শেষ ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ? তাড়াহুড়োয় মুশফিকদের করা সে চেষ্টা আলোর মুখ দেখতেই ধরা দিল জয়। ৭ উইকেটের যে জয়ে মিশে আছে অনেকগুলো বৃত্ত ভাঙার আনন্দও।
আরও পড়ুন : বদলে গেছে দলের মানসিকতা
প্রতিপক্ষ আইরিশরা টেস্ট অভিষেকের আগ থেকে এ পর্যন্ত খেলেছে মোটে তিনটি ম্যাচ। তাতে একটা ম্যাচেও জয়ের হাসি হাসতে পারেনি দলটি। তার ওপর আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নিসহ দলের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলেননি। ম্যাচে ৭ জনের হলো অভিষেক, যাদের একজনের আবার সাদা পোশাক গায়ে জড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল না ঘরোয়া ক্রিকেটেও।
সেই দলকে টেস্টের প্রথম দিন অলআউট করে বাংলাদেশ, ব্যাটিংয়ে নেমে দুটো উইকেট দলের দাপটে ছেদ ফেলল কিছুটা। তবে দ্বিতীয় দিন স্বাগতিকদের দাপটের চূড়ান্তটাই দেখল আইরিশরা। বাংলাদেশ নিল ১৫৫ রানের বিশাল এক লিড। জবাবে ২৭ রান তুলতে যখন ৪ উইকেট হাওয়া আইরিশদের, ম্যাচে বাংলাদেশই ছিল যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে। অনভিজ্ঞ আইরিশদের বিপক্ষে এমন কিছু নেহায়েত অপ্রত্যাশিত ছিল না।
তবে ম্যাচের ভোল পাল্টে গেল তৃতীয় দিনে এসে। অপেক্ষার প্রহর যখন গোনা হচ্ছিল আইরিশদের ইনিংস শেষের, তখনই হ্যারি টেক্টর আর অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইনের ফিফটি, লরকান টাকারের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে পুরো একটা দিন ফিল্ডিংয়ে রাখে সফরকারীরা, লিড জমে যায় ১৩১ রানের। সংবাদ সম্মেলনে এসে আইরিশ উইকেটরক্ষক ব্যাটার টাকার বলে যান, আর ৪০-৫০ রান হলেই বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেওয়া যাবে।
ঠিক তখনই বাংলাদেশের অতীত এসে হাজির হয় বর্তমানে। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত একটা টেস্টেও যে নতুন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি প্রথম ম্যাচটা জিততে পারেনি বাংলাদেশ! প্রথম টেস্টে ৪০০ করার পর ভারতের কাছে হার দিয়ে শুরু। এরপর অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান থেকে শুরু সবশেষ আফগানিস্তান, যাদের বিপক্ষেই প্রথম ম্যাচে খেলেছে বাংলাদেশ, হেরেছে তাদের সব দলের বিপক্ষেই! এটা যে আইরিশদের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ! ‘তবে কি এবারও?’- এমন একটা শঙ্কাও পেয়ে বসা অমূলক ছিল না।
তবে চতুর্থ দিনের শুরুতেই দারুণ পারফরম্যান্সে সে শঙ্কা বিদায় করেছে বাংলাদেশ। এবাদত হোসেনের জোড়া উইকেটে আইরিশদের বড় লিডের স্বপ্ন শেষ করেছে দল। এরপর ম্যাচে জেতার যা সম্ভাবনা ছিল, লিটন দাসের ব্যাটে সব তুড়িতে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। তার ঝড়ো শুরুতে পাওয়া প্ল্যাটফর্ম ধরে রাখেন মুশফিকুর রহিম। তার ৪৮ বলে ৫২-তে ভর করে বাংলাদেশ তুলে নেয় জয়।
এই জয়ের ফলে বৃত্ত ভেঙেছে আরও একটা, চাইলে দুটোও বলতে পারেন আপনি। টেস্টে বাংলাদেশের সবশেষ জয়টা ছিল সেই গেল বছরের শুরুতে। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে জেতার পর থেকে সাদা পোশাকে জয়টা দূর আকাশের তারাই হয়ে গিয়েছিল যেন। এরপর থেকে ৯ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। একটা ম্যাচ বাদে হেরেছে বাকি সবকটিতেই। জয়হীন যাত্রাটাকে দুই অঙ্কে উন্নীত হতে দেয়নি বাংলাদেশ। আইরিশদের বিপক্ষে ম্যাচে জিতে সে বৃত্তটা ভেঙে দিয়েছে এর আগেই।
যদি শুধু হিসাবে আনেন নিজেদের মাটিতে খেলা টেস্টগুলোকে, তাহলে বাংলাদেশের মুখে হাসি খুঁজে পেতে আপনাকে ফিরে যেতে হবে সেই ২০২০ সালে। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে এই মিরপুরেই সবশেষ জয়টা পেয়েছিল বাংলাদেশ।
এরপর থেকে ৮ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। একটা ড্র বাদ দিলে হারের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাকি সব ম্যাচেই। মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ভারতের বিপক্ষে কম করে হলেও তিনটা জয়ের সুযোগ ফসকে গেছে একে একে। সে কারণে দেশের মাটিতে একটা জয়ের অপেক্ষাটা এক থেকে দুই, দুই থেকে তিনে উন্নীত হয়েছে ধীরে ধীরে। আইরিশদের বিপক্ষে দাপুটে এই জয়ে সে অপেক্ষার প্রহরেও ইতি টেনেছে বাংলাদেশ।