প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১৩:৩৮ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪১ পিএম
‘দ্য ইনভিন্সিবলস’। অপরাজেয়। যাদের হারানো যায় না! ১৯৪৮ সালের ইংল্যান্ড সফর শেষে ফেরার পর ডন ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়াকে ঠিক এই উপাধিটাই দেওয়া হয়েছিল দেশে ফেরার পর। সেই সফরে যে একটা ম্যাচেও হারেনি দলটি! চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে যেন সেই স্পিরিটটাই এসে ভর করেছে বাংলাদেশের ওপর। নতুন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের আমলে বাংলাদেশ অজেয়ই যে হয়ে গেছে রীতিমতো!
এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই ২০২১ বিশ্বকাপে ভুগেছে বাংলাদেশ, পরের বছর টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে ফলাফলে পরিবর্তন এলেও পারফরম্যান্স নিয়ে ফিসফাসটা থেকেই যাচ্ছিল যেন। সেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই বাংলাদেশ ‘অজেয়’ হয়ে গেছে এখন! বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শুরু, এরপর এবার আয়ারল্যান্ডকে রীতিমতো তুলোধুনো করেই ছাড়ছে দল।
আরও পড়ুন : লিটন ক্লাস প্লেয়ার, রেকর্ড হয় ভাঙার জন্যই, ওকে অভিনন্দন
শুধু কি ফলাফল? সিরিজ তো বাংলাদেশ আগেও জিতেছে! সাকিব আল হাসানের দলের যে বিষয়টা চোখে পড়ছে বেশ, তা হলো পারফরম্যান্সে। দলের অ্যাপ্রোচ, দেহভাষ্যটাই যে বদলে গেছে একেবারে!
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর প্রতিপক্ষ ছিল আয়ারল্যান্ড। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করার পর চ্যালেঞ্জটাও ছিল বাড়তি, সে চ্যালেঞ্জেই উতরে গেছে দল। সেজন্য স্বস্তি ঝরে পড়ল লিটনের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘জেতার জন্যই আমরা মাঠে নামি। অবশ্যই যেভাবে আমরা চিন্তাভাবনা করছিলাম, যেভাবে ক্রিকেটটা খেলতে চাইছিলাম, যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেট, শেষ দুই ম্যাচে আমরা ভালোই খেলেছি।’
চলতি বছর বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির ধরন বদলে যাওয়ার পেছনে বড় অবদানই রেখেছে নতুন টি-টোয়েন্টি জুটি। ওপাশে রনি তালুকদার বিপিএলে দারুণ পারফর্ম করে এসেছেন জাতীয় দলে। এখানেও আলো ছড়াচ্ছেন বেশ। তার সঙ্গে ব্যাটিংটা উপভোগই করছেন লিটন। তার প্রমাণটা তো মিলছে মাঠের ক্রিকেটেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টির ওপেনিং জুটি তিন অঙ্কে পা দিয়েছে। লিটনরা সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটির রেকর্ডটাও নিজেদের করে নিয়েছেন গতকাল।
লিটনের ভাষায়, ‘যে স্টার্ট আমরা দিয়েছি... আমার মনে হয় উদ্বোধনী জুটিতে এটাই টি-টোয়েন্টিতে বোধহয় সর্বোচ্চ। এর থেকে তো বড় কিছু হতে পারে না। কিন্তু ব্যাক টু ব্যাক প্রতিটা ম্যাচেও আপনি এ সাফল্য পাবেন না- যে যাব আর হিট করব। স্ট্রাগল টাইম আসবেই। তবে ব্যাটিং করে অনেক মজা পাচ্ছি আর কী তার সঙ্গে।’
দলের এমন পারফরম্যান্সের পেছনে সিলেট, চট্টগ্রাম আর ঢাকার উইকেটের অবদানও নেহায়েত কম নয়। লিটনের অভিমত, এমন উইকেটে এই পারফরম্যান্স ফল দেবে ভবিষ্যতে। তার কথা, ‘ভালো উইকেট মানেই কি ৫০ রান করবেনই নিয়মিত? বিষয়টা তো এমন নয়! আপনাকে নিয়মিত কঠিন উইকেটেও কষ্ট করে রান করতে হবে, ভালো উইকেটেও কষ্ট করেই রান করতে হবে। অবশ্যই ভালো উইকেটে যখন আমরা খেলব, সেটা দুই দিক দিয়েই ভালো থাকবে। এখন বোলাররা ভালো সাহায্য পাচ্ছে, ব্যাটাররাও বড় খেলার সুযোগ পাচ্ছে। সামনে অবশ্যই এটা সাহায্য করবে।’
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দল জিতেছে, নিজেও খেলেছেন ভালো। তবে কাছে গিয়েও সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ খানিকটা পোড়াচ্ছে তাকে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমি একটু তাড়াহুড়ো করছিলাম, তখন স্পিনাররাও একটু হেল্প পাচ্ছিল। আমি যদি আরেকটু সময় নিয়ে পেস বোলারদের খেলতাম, তাহলে হয়তো ৮৩-৮৪-এর জায়গায় আমার সেঞ্চুরিও হতে পারত। ১৮ বলে ৫০ করে ফিফটি করে ভালো লাগছে, কিন্তু সেঞ্চুরি করতে পারলে আরও ভালো লাগত।’
ইংল্যান্ড আর আয়ারল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশ যা-ই ছুঁয়েছে, রীতিমতো তাই যেন সোনা হয়ে গেছে। ব্যাটিংয়ে দেদার রান করেছে, বোলিংয়ে উইকেট তুলে নিয়েছে। ফিল্ডিং নিয়ে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো বলেই দিয়েছিলেন, এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং দল প্রায় হয়েই গেছে। এই সাফল্যের নকশা ধরেই এগোতে চায় দল। লিটন জানালেন, এর চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলা সম্ভব নয়।
লিটনের কথা, ‘দল হিসেবে আমরা খুব ভালো করছি। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং যেখানেই বলেন... এর চেয়ে ভালো ক্রিকেট আর খেলা যায় কি না আমি জানি না। অবশ্যই চেষ্টা করব যে এই ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখতে। এই ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখলে ফলাফল আমাদের পক্ষে আসবে।’
নিজে যেহেতু ব্যাটার, সে দৃষ্টিকোণ থেকেই ভালো খেলার একটা মানদণ্ড দাঁড় করালেন লিটন। বললেন, ‘এর চেয়ে ভালো ক্রিকেট আশা করাটাও খুব কঠিন, কারণ আপনি প্রতিদিনই গিয়ে টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে ৭০-৮০ করতে পারবেন না। এটা যদি করতে পারি, বা এর চেয়ে কমও যদি করতে পারি, ৬০ রানের মতো, তাহলেও আমি মনে করি যে খুব ভালো হবে।’