প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৯:৪৩ পিএম
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৯:৪৬ পিএম
সেদিন অর্থাভাবে বাবার চিকিৎসা করাতে পারেনি। মাত্র সাত বছর বয়সেই হারাতে হয়েছে প্রিয় বাবাকে। আজ তার অনেক টাকা। চাইলেই করতে পারেন অনেক কিছু। কাটাতে পারেন আয়েশি জীবন। মুছে ফেলতে পারেন শৈশবের অর্থকষ্টের দিনগুলো। কিন্তু সাফল্যের চূড়ায় উঠেও ভুলে যাননি অতীত। এখনও আঁকড়ে ধরে আছেন নিজের শেকড়। সেই শেকড়ের তাড়নায় এখনও সময় পেলে ছুটে যান সেনেগালের দক্ষিণের বাম্বালি নামক সেই ছোট্ট গ্রামে। বলছিলাম সেনেগালের সুপার হিরো সাদিও মানের কথা। বিশ্বাসই যার সত্তা।
সেনেগালের এক মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। বাবা ছিলেন মসজিদের ইমাম। তার কাছ থেকেই পেয়েছেন ধর্মীয় শিক্ষা। কুরআন শিক্ষার সঙ্গে মানুষ হওয়ার শিক্ষাটাও মৃত্যুর আগে ছেলেকে দিয়ে গিয়েছিলেন বাবা। পরবর্তী জীবনে মানেও হেঁটেছেন সেই পথে। ইউরোপীয় ফুটবলে পা রাখার সুবাদে বদলে যাওয়ার সুযোগ ছিল। পথ হারানোটায় ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু রঙিন জীবনের মোহে ভুল করেননি মানে। সতীর্থরা যখন ম্যাচ জয়ের পর অ্যালকোহল নিয়ে মেতে থাকতেন; তা ছুঁয়েও দেখতেন না মানে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশে বিশ্বকাপ খেলতে চায় পাকিস্তান
এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অ্যালকোহল স্পর্শ করব না। ধর্ম আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বভাবতই আমি একজন মুসলিম। বিশ্বাসই আমার সত্তা। সে কারণেই প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করি। কখনও কখনও এর বাইরেও আমি সম্পূরক প্রার্থনা করি, যাতে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেন। সময় ভালো কিংবা খারাপ যাই হোক না কেন, আমি আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই। প্রতি বছর আমরা আমার বাবার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করি। আমি তার জন্য সব সময় প্রার্থনা করি।’
লিভারপুলে থাকা অবস্থায় রমজান মাসে রোজা রেখেই ম্যাচে নামতেন মানে। কষ্ট হলেও এ ব্যাপারে আপস করেননি। বরং কোচের সঙ্গে পরামর্শ করে অনুশীলন টাইম ঠিক করে নিয়েছেন, ‘রমজানে খেলা ও অনুশীলন করা মোটেও সহজ কাজ নয়। রমজানের আগে আমি অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কোচকে জানিয়েছে যাতে সকালে ট্রেনিং করতে পারি। কারণ, এটা হলে আমাদের জন্য সহজ হয়। সকালে ট্রেনিং করলে বিশ্রামের সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু বিকালে হলে সেটা কঠিন! কোচ এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন, যা রোজা রাখা সহজ করেছে এবং আমরাও আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
বর্তমানে ইউরোপের ফুটবলে খেলায় মানের বেশিরভাগ সতীর্থই ভিন্নধর্মী। তবে ম্যাচে যে এর কোনো প্রভাব পড়ে না সে সম্পর্কেও জানিয়েছেন মানে। বলেন, ‘সেনেগালের ৯০ শতাংশ মুসলিম এবং ১০ শতাংশ খ্রিস্টান। প্রত্যেকে বন্ধু হিসেবে একসঙ্গে বসবাস করে। আমার সেরা বন্ধু লুক, একজন খ্রিস্টান। আমরা একে অপরের বাড়িতে যেতাম। আমি ফুটবলের সঙ্গে ধর্মের বিরোধ দেখি না। আমি সঠিকভাবে এবং সঠিক উপায়ে বড় হয়েছি। আমার মা এখনও গ্রামে বাস করেন।’
নিজের সেই গ্রামকে এখনও ভালোবাসেন মানে। যেখানটার আলো-বাতাসে তিনি বেড়ে উঠেছেন তার কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিতে চান তিনি, ‘একটি জিনিস যা ছোটবেলায় আমাকে ধাক্কা দিয়েছে তা হলো আমি আমার অঞ্চলকে বিশেষভাবে কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই। আমি সেনেগালে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমি এখন তরুণ কিন্তু এটা এমন কিছু যা খুব শিগগিরই ঘটবে।’ এরপর মানে গ্রামকে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। গ্রামে মসজিদ নির্মাণ ছাড়াও বিভিন্ন সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনা মহামারির সময়ও নিজ গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আগামীতেও সহযোগিতা করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন সাদিও মানে।