প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩ ১০:৩৭ এএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৩ ১২:৩২ পিএম
‘আমি এটাকে পারফেক্ট একটা সিরিজই বলব' আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করে জানালেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সিলেটে আইরিশদের বিপক্ষে এই ওয়ানডে সিরিজে যেন বাংলাদেশের হাতে লেগেছিল মাইডাসের ছোঁয়া, যা ছুঁয়েছে সোনা হয়ে গেছে তা-ই। যা যা করতে চেয়েছে, ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছে। প্রতি ম্যাচেই গড়েছে গাদা গাদা রেকর্ড। সিরিজের শুরুটাই হয়েছিল রেকর্ড দিয়ে, শেষ ম্যাচের শেষ বলেও হলো রেকর্ড। এমন এক সিরিজকে অধিনায়ক তামিম তো আর ‘পারফেক্ট’ না বলে পারেন না!
প্রথম ওয়ানডেতে রেকর্ডের শুরুটা করেছিলেন তাওহিদ হৃদয়। মোটে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে অভিষেকে করেছিলেন হাফসেঞ্চুরি, এরপর পেরিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেকে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটাও। সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে অভিষেকে তিন অঙ্ক ছোঁয়ারও। শেষমেশ সেটা হয়নি, ওয়ানডে ইতিহাসের সপ্তম ব্যাটার হিসেবে তাওহিদ নব্বইয়ের ঘরে শেষ করেন তার অভিষেক ইনিংস।
আরও পড়ুন : স্বাধীনতা দিবসে সাবেক ক্রিকেটারদের প্রদর্শনী ম্যাচ
তাওহিদ যার সঙ্গে তার অভিষেক জুটিটা গড়েছিলেন, সেই সাকিবও গড়েছেন রেকর্ড। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ছুঁয়েছেন ৭০০০ ওয়ানডে রানের মাইলফলক। সনৎ জয়াসুরিয়া আর শহিদ আফ্রিদির পর ইতিহাসের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে ফেলেন ৭০০০ রান আর ৩০০ উইকেটের ডাবল ছোঁয়ার কীর্তি। একটা জায়গায় তাদের ছাড়িয়েও যান সাকিব, ডাবলটা ছুঁয়েছেন মোটে ২২৮ ম্যাচ খেলে, জয়াসুরিয়ার যে কীর্তি ছুঁতে লেগেছিল ৩৯৭ আর আফ্রিদির লেগেছিল ৩৪১ ম্যাচ।
এই কীর্তি ছুঁয়ে প্রায় চার বছর পর ওয়ানডে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সাকিব, কিন্তু শেষমেশ তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি তার। তার বদলে ওয়ানডেতে চতুর্থবারের মতো নড়বড়ে নব্বইয়ের শিকার হন তিনি, সব ফরম্যাট মিলিয়ে যা তার অষ্টম। এই ‘কীর্তি’তে বাংলাদেশিদের মধ্যে আর কেউ নেই তার আগে, সঙ্গী হিসেবে আছেন মুশফিকুর রহিম। সাকিব-তাওহিদ দুজনেই ৯০-এর ঘরে বিদায় নিলে বাংলাদেশ নতুন এক ঘটনার সাক্ষী হয়, এক ওয়ানডে ইনিংসে দুই ব্যাটারের নড়বড়ে নব্বইয়ের শিকার হওয়ার ‘কীর্তি’ যে ছিল না আর কারও!
সাকিব-তাওহিদের ‘কীর্তি’র পর বাংলাদেশ গড়ে রেকর্ড। তাদের ইনিংসের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের ২৬ বলে ৪৪ রানের ক্যামিওতে ভর করে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করা ৩৩৩ রানের রেকর্ডকে টপকে ৮ উইকেটে করে ৩৩৮ রান। ব্যাটারদের এমন রেকর্ড গড়া দিনে বাংলাদেশ পায় নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়। আয়ারল্যান্ডকে হারায় ১৮৩ রানে।
ব্যাটিংয়ে প্রথম ওয়ানডেটা বাংলাদেশ শেষ করেছিল যেখানে, দ্বিতীয় ওয়ানডেটা যেন শুরু করল ঠিক সেখান থেকেই। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ১৫০০০ আন্তর্জাতিক রান ছুঁয়ে তামিম বিদায় নেন। তারপর লিটন দাস নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে দেন বড় স্কোরের ভিত। সে ভিতে দাঁড়িয়ে এরপর মুশফিকুর রহিম রীতিমতো প্রলয়লীলাই চালিয়েছেন আইরিশ বোলারদের ওপর। তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ছুঁয়েছেন ৭০০০ রানের মাইলফলক। এরপর সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ৬০ বলে, তাতে প্রায় ১৪ বছর আগে সাকিব আল হাসানের গড়া বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ডটা যায় ভেঙে। এমন আগুনে ব্যাটিংয়ে ভর করে দুই দিন আগে গড়া সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা আবারও ভাঙে বাংলাদেশ। ৩৪৯ রান তোলে ৬ উইকেট খুইয়ে। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচে বল গড়ায়নি আর একটাও। রেকর্ডের দ্বিতীয় ম্যাচটা তাই শেষ হয়েছে খানিকটা আফসোস নিয়েও।
প্রথম দুই ওয়ানডেতে ব্যাটাররাই সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন। তৃতীয় ওয়ানডেতে সে দায়িত্বটা যেন নিজেদের কাঁধে তুলে নিলেন বোলাররা। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, পেসাররা। হাসান মাহমুদ শিকার করলেন ৫ উইকেট, সিলেটের মাটিতে প্রথম বোলার হিসেবে। সে ম্যাচে তার নেতৃত্বে তাসকিন আহমেদ আর এবাদত হোসেনকে নিয়ে গড়া পেস আক্রমণ তুলে নিল আইরিশদের দশ উইকেটের সবকটি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই এমন কীর্তি গড়া হয়নি আর কখনও!
আইরিশদের ১০১ রানে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আরও একটা প্রথমের সম্ভাবনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে কখনোই যে ১০ উইকেটে জেতা হয়নি দলের! সে আক্ষেপটাও সিলেটে শেষ ওয়ানডেতে ঘোচায় বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল আর লিটন দাস মিলে শেষ করে আসেন খেলাটা। ওয়ানডেতে রানের বিচারে সর্বোচ্চ জয়টা প্রথম ম্যাচে তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ, উইকেটের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়টা তুলে নেয় শেষ ম্যাচে। একটুর জন্য ফসকে গেছে সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে জেতার রেকর্ডটা। ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে বাংলাদেশ হারিয়েছিল ২২৯ বল হাতে রেখে, শেষ ম্যাচে তামিম-লিটনরা জয় তুলে নিয়েছেন ২২১ বল হাতে রেখে, রেকর্ডটা তাই আর ভাঙা হয়নি। এত রেকর্ড ভাঙাগড়ার সিরিজে, এতসব প্রাপ্তির সিরিজে একটা রেকর্ড হাত ফসকে গেলে এমন কি-ই বা আসে যায়?