× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিরিজ ও সাফল্যের সমীকরণ

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩ ১৩:৩১ পিএম

সিরিজ ও সাফল্যের সমীকরণ

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজে মাঠে নেমেই বাজিমাত বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশরা পেয়েছে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশের স্বাদ। বাংলাদেশের এই দারুণ পারফরম্যান্সের পেছনে বড় ভূমিকা নাজমুল হোসেন শান্ত, তাসকিন আহমেদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদদের। মূলত তরুণদের ছোঁয়াতেই বদলেছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল। এসেছে সাফল্য। পাঁচ ক্রিকেটারের দারুণ ছন্দের পাশাপাশি সাকিব আল হাসান, তৌহিদ হৃদয়, রনি তালুকদার ও লিটন দাসরাও দিয়েছেন নিজেদের সেরাটা। সব মিলিয়ে দারুণ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ছিল টাইগারদের জন্য শুধুই প্রাপ্তির।

ছন্দময় শান্ত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা শিকার হওয়া ক্রিকেটারদের তালিকায় সবার ওপরে থাকবে নাজমুল হোসেন শান্তর নাম। ট্রলের শিকার হওয়া শান্ত ফিরেছেন ছন্দে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে শান্তর ব্যাটে ছিল ১৪৪ গড়ে ১৪৪ রান। ব্যাট হাতে এক হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি পরের দুই ইনিংসে ছিল দুটি ম্যাচ জেতানো ইনিংস। দলকে জেতানো শান্ত নিজের করে নিয়েছেন সিরিজ সেরার পুরস্কার। অথচ এই শান্তকে নিয়েই কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছিল ট্রলের বন্যা। সেখান থেকে ফিরে ক্রিকেট মাঠে মধুর সময় পার করছেন শান্ত।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে শেষ করে আসতে না পারার ব্যর্থতা ছিল। পরের দুই ম্যাচে অবশ্য ওই ভুল করেননি, এক প্রান্ত আগলে রেখে ইনিংস বড় করার পাশাপাশি ম্যাচও শেষ করেছেন। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও ছিলেন নজরকাড়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তিন তিনটি ক্যাচ নিয়েছিলেন।

তার পারফরম্যান্সের এই ধারাবাহিকতা অবশ্য শুধু ইংল্যান্ড সিরিজে নয়। সর্বশেষ বিপিএল ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ছিল তার ব্যাটে রান। বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন শান্ত। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানও এসেছিল তার ব্যাটে। ফর্মের ওই ধারাবাহিকতা ছিল ইংল্যান্ড সিরিজেও। নিজের সাফল্যের জন্য অবশ্য কৃতিত্ব দিয়েছেন দলের কোচিং স্টাফদের। পাশাপাশি ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রত্যয়ও ছিল তার কণ্ঠে। ধারাবাহিকতা কতদিন ধরে রাখতে পারেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

ধারাবাহিক তাসকিন

গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম নিয়মিত পারফর্মার তাসকিন আহমেদ। মাঝে মধ্যে ইনজুরি সমস্যায় মাঠের বাইরে গেলেও দারুণ ছন্দেই মাঠে ফিরেছেন। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের অন্যতম ভরসা এই পেসার ইংল্যান্ড সিরিজেও ছিলেন ধারাবাহিক। ইংলিশদের বিপক্ষে তিন টি-টোয়েন্টিতে নেন চার উইকেট।

দ্বিতীয় ম্যাচে তো ব্যাট হাতে দলকে ম্যাচও জিতিয়েছেন। তার দুই চারে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে কিছুটা খরুচে হলেও ঢাকায় নিজের ছন্দ ধরে রাখেন। প্রথম ম্যাচে ৩৫ রান দেওয়া তাসকিন পরের দুই ম্যাচে দেন যথাক্রমে ২৭ ও ২৬ রান। বল হাতে নিয়মিত পারফর্ম করলেও তাসকিন আহমেদ কোনো ম্যাচেই অবশ্য ম্যাচসেরা ছিলেন না। সেরা পারফর্মার না হলেও সিরিজ জয়ে তার পারফরম্যান্স কোনো অংশেই কম ছিল না। ইংল্যান্ড সিরিজে তাসকিন প্রমাণ করেছেন বোলিংয়ের পাশাপাশি এখন ব্যাটিংও টুকটাক পারেন। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দলকে জেতাতে পারবেন।

তাসকিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণ ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করতে বড় ভূমিকা রাখেন। তাসকিনের পাশাপাশি মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদরা দিয়েছেন সামর্থ্যের প্রমাণ। পুরো টি-টোয়েন্টি ইংল্যান্ডের ১০ উইকেট নেন বাংলাদেশের পেসাররা। বাংলাদেশের উইকেটে প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট নেওয়া অবশ্যই পেসারদের সামর্থ্যের প্রমাণ দেয়। 

শুধু পেসাররা নয়, একাদশে সুযোগ পাওয়া সবাই দিয়েছেন নিজের সর্বোচ্চটুকু। ব্যাটিং-বোলিং কিংবা ফিল্ডিং সব জায়গায় চোখে পড়েছে দলীয় পারফরম্যান্সের ছোঁয়া। তাতেই ইংলিশরা হয়েছে হোয়াইটওয়াশ।

আরও একবার ইংল্যান্ডকে ধসিয়েছেন মিরাজ

২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে ১৭ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে ধসিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ে স্বাদ পায় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়েও ভূমিকা ছিল মেহেদি হাসান মিরাজের। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে একাদশে জায়গা না পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে ঢোকেন। ওই ম্যাচেই ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে একা হাতেই ধসান মিরাজ। ওই ম্যাচে ১২ রানে ৪ উইকেট নেন। এটা ছিল তার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ছোট লক্ষ্য হলেও তাড়া করতে বাংলাদেশকে বেশ বেগ পেতে হবে। একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের বন্দরে নোঙর করান শান্ত। তবে এর আগে দলের রান ঝড়ের বেগে এগিয়ে দেন মিরাজ। বল হাতে ১২ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ১৬ বলে ২০ রান করেন। তাতেই ম্যাচসেরা ছিলেন মিরাজ।

ম্যাচসেরা হয়ে মিরাজ বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নামায় কিছুটা দ্বিধায় ছিলাম। তবে সবাই সমর্থন করেছে। উইকেটে কিছুটা টার্ন থাকায় স্পিনারদের জন্য সুবিধা ছিল।’

সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য বোলিংয়ে দ্বিতীয় ম্যাচের ছাপ ধরে রাখতে পারেননি। দুই ওভার বোলিং করে ১৮ রান দেন। তিনি বোলিংয়ে কিছুটা খরুচে হলেও ইংলিশদের হোয়াইটওয়াশ মিশনে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ফিল্ডিংয়ে। জস বাটলারকে দারুণ এক থ্রোয়ে রান আউট করেন। সেটা অবশ্যই অনেক দিন চোখে লেগে থাকবে যেকোনো ক্রিকেটপ্রেমীর। এর আগে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি মিরাজ। টপ অর্ডাররাই গড়ে দিয়েছিলেন জয়ের ভিত।

স্বমহিমায় উজ্জ্বল মুস্তাফিজ

দীর্ঘদিন ধরেই বল হাতে ঠিক কার্যকর ছিলেন না মুস্তাফিজুর রহমান। ছন্দে না থাকা মুস্তাফিজকে একাদশে রাখা নিয়েও বারবার উঠছিল যৌক্তিকতা। ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে পারফরম্যান্সের দিকে একটুও পিছিয়ে ছিলেন না মুস্তাফিজ। বরং, দলের অন্য সবার মতো তিনিও পারফর্ম করেছেন।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে মাত্র এক উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজ টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিয়েছেন তিন উইকেট। উইকেটের সংখ্যাটা খালি চোখে দেখে কম হলেও তা দলের জন্য ছিল কার্যকর। চট্টগ্রামে খরুচে থাকলেও ঢাকায় শেষ দুই ম্যাচে রান দেওয়ায় যথেষ্ট কার্পণ্য করেছেন। শেষ ম্যাচে ডেভিড মালানকে আউট করে তো ম্যাচটাই এনে দিয়েছেন হাতের মুঠোয়।

অভিষিক্ত তানভীর আহমেদ ফিল সল্টকে আউট করে ভালো শুরুর আভাস দেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে থিতু হয়ে মালান ও জস বাটলারকে এগোচ্ছিলেন হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর দিকে। তবে মুস্তাফিজে পরাস্ত হয়ে মালান ফেরার পর একই ওভারে মিরাজে দারুণ থ্রো। তাতে ফেরেন বাটলার। মূলত বাটলারের ওই রান আউটেও ভূমিকা ছিল মুস্তাফিজের। নিজেকে এভাবে ফিরিয়ে আনাটা মুস্তাফিজের জন্য দারুণ।

এর আগে ইংলিশদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ কিংবা বিপিএল, কোথাও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। তারপরেই একাদশে তার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। চাপের মধ্যে থাকার পরও বারবার একাদশে জায়গা পাওয়া মুস্তাফিজ সবশেষে আবারও জানিয়ে দিলেন, হারিয়ে যাননি। এখনও পারফর্ম করতে পারেন। শুধু পারফর্ম করা নয়, দলকে জেতাতেও রেখেছেন ভূমিকা।

নিজেকে প্রমাণ করেছেন হাসান মাহমুদ

দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সম্ভাবনাময়ী পেসার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন হাসান মাহমুদ। সম্ভাবনাময়ী হলেও নিজেকে প্রমাণের মঞ্চটাই যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে পেয়েই যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে যান। নিজেকে দারুণভাবে প্রমাণ করেছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিয়েছেন তিন উইকেট।

সংখ্যার বিচারে উইকেট কম হলেও দলের প্রয়োজনে ছিল তা কার্যকর। চট্টগ্রামে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম জয়ে তার ভূমিকা ছিল। মূলত তার বোলিংয়েই বড় হয়নি ইংল্যান্ডের সংগ্রহ। ঢাকায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বল হাতেও ছিল কার্পণ্য। ওই ম্যাচে মাত্র ১০ রানে নেন এক উইকেট। শেষ টি-টোয়েন্টির শেষ ওভারেও ইংলিশদের আটকে রাখেন। যদিও শেষ টি-টোয়েন্টিতে নিজের পকেটে পুরতে পারেননি কোনো উইকেট।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ চলাকালে হাসান মাহমুদ বলেন ব্যাটাররা তার বলে বাউন্ডারি মারলেই বেরিয়ে আসে তার আসল রূপ। তিনি বলেন, আমি বল ধরে ধরে চিন্তা করি। চিন্তা থাকে যাতে ডট দিতে পারি। যদি বাউন্ডারি হয়েও যায়, তবু আমি আমার শক্তিমত্তায় থাকতে চাই। যেটা পছন্দ করি সে বলটাই করি। ওই সময়টায় আমি নিজের ‘ক্যারেক্টরটা শো’ করতে পছন্দ করি। আমি চাই ওই চ্যালেঞ্জটা নিতে।

হাসান মাহমুদের চ্যালেঞ্জ নিতে চাওয়ার এই মানসিকতা দেখা গেছে ইংল্যান্ড সিরিজে। চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়েই হয়েছে সফল। ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করতে ভূমিকা রেখেছেন। দলকে সিরিজ জিতিয়ে নিশ্চয় এখন বেশ উল্লসিত এই ক্রিকেটার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা