বাংলাদেশ ৩ ইংল্যান্ড ০
এম. এম. কায়সার
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:১৪ এএম
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:১৪ এএম
তিন মাস আগে টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। আরেকটু সংক্ষিপ্ত করে বললে মাত্র তিন ম্যাচ আগেই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাসে ভেসেছিল। সেই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শেষে পরের তিন ম্যাচের মধ্যেই ০-৩!
বাংলাদেশ ৩, ইংল্যান্ড ০। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো এই দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খুব দ্রুতই ভুলে যেতে চাইবে ইংল্যান্ড। কিন্তু ভুলতে চাইলেই কি হোয়াইটওয়াশ হওয়ার দুঃখ ভোলা যায়।
- হোয়াইটওয়াশ? এই সিরিজে সম্ভবত এই শব্দটা আরও মানানসই হবে বাংলাওয়াশ বললে! এমন কিছু হবে এটা জেনেই বোধকরি সিরিজের মূল স্পন্সরও হয়েছিল মি. হোয়াইট ডিটারজেন্ট!
টি-টোয়েন্টি সিরিজে ইংল্যান্ড ০-৩-এ বাংলাদেশের কাছে হারবে- সিরিজ শুরুর আগে এমন কিছু বললে তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতেই তাকাতেন সবাই; আরে কী বলছে, ...গল নাকি? টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের তুলনায় বাংলাদেশ যে পুরো নস্যি! পরিসংখ্যানও তাই বলে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জিতে এসেছে। র্যাঙ্কিং ২। র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৯। আর এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ বরাবরই দুর্বল এবং আনকমফোর্টেবল!
সেই বাংলাদেশ সিরিজ জিতলও পরিষ্কর ৩-০ ব্যবধানে। তিনটি ম্যাচেই সমান দাপট দেখিয়ে জিতেছে বাংলাদেশ। প্রতিটি ম্যাচেই পরিকল্পনা, কৌশল, দক্ষতা এবং প্রয়োগে বাংলাদেশ শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে। তিন ম্যাচেই ইংল্যান্ড শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে বাংলাদেশের আনন্দ উল্লাস ও রাস উৎসব! আগে ব্যাটিং করেও হেরেছে ইংল্যান্ড। পরে ব্যাটিং করেও সেই হারে মুখ শুকনো। পুরো সিরিজেই এই ইংল্যান্ড দলের জন্য একটা শব্দই সবচেয়ে যুতসই মনে হচ্ছে- অসহায়!
প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই সিরিজের ট্রফি ঘরেই রেখে দিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচটা হয়ে পড়েছিল ‘ডেড রাবার’। ইংল্যান্ড শেষ ম্যাচে সান্ত্বনাসূচক জয়ের খোঁজে ছিল। অন্তত টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে ‘কোনো কিছু’ নিয়ে যাতে ফেরা যায়! সেই চেষ্টায়ও হার মানল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের ১৫৮ রানের জবাবে ইংলিশরা আটকে গেল ১৪২ রানে। ম্যাচ হারল ১৬ রানে।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৬ উইকেটে, তখনও ম্যাচের ১২ বল বাকি। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতল ৪ উইকেটে, ৭ বল বাকি থাকতে। শেষ ম্যাচে জয় এলো ১৬ রানের। হার-জিতের এই বড় ব্যবধানই এই সিরিজে বাংলাদেশের দাপট ঘোষণা করছে। আর ইংল্যান্ডের অসহায়ত্ব!
মিরপুরে সিরিজের শেষ ম্যাচে টসে হেরে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে জমা করল ২ উইকেটে ১৫৮ রান। শুরুর দুই ম্যাচে ফর্ম হারানো লিটন দাস এই ম্যাচে ব্যাট হাতে নায়ক। ৫৭ বলে তার ক্যারিয়ার-সেরা ৭৩ রান বাংলাদেশকে বড় রানের পুঁজির জোগাড় এনে দিল। গোটা সিরিজে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত শেষ ম্যাচেও স্টারমার্ক পাচ্ছেন। ৩৬ বলে অপরাজিত ৪৭ রান করেন শান্ত। দলের শুরুর তিন ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট একশর ওপর। শেষের ছয় ওভারে ইংল্যান্ডের বোলাররা ঘুরে দাঁড়ালেন। উইকেটের সঠিক ব্যবহার করে বাংলাদেশের রানের চাকা আটকে দিলেন। শেষ ছয় ওভারে বাংলাদেশ মাত্র ৩৬ রান তুলল! অথচ হাতে জমা ৮ উইকেট! এই সময়ে বাউন্ডারি এলো দুটি! ঠিক একই চিত্র মিলল ইংল্যান্ডের জবাবি ইনিংসেও। শুরুটা তাদের হলো বেশ। ৬ ওভারে ৪৭ রানে ১ উইকেট। জস বাটলার ও ডেভিড মালান দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৭৬ বলে ৯৫ রান যোগ করে ইংল্যান্ডকে জয়ের পথে রাখেন। কিন্তু এক বলের ব্যবধানে এই দুজন ফিরে আসার পর ইংল্যান্ডের ইনিংস ধাক্কা খায়। সেই ধাক্কা তারা আর সামাল দিতেই পারেনি। মুস্তাফিজ তার পুরোনো দিনের সেই ক্যারিশমা দেখান এই ম্যাচে। ৪৭ বলে ৫৩ রান করা মালানের উইকেট পান মুস্তাফিজ। পরের বলেই মেহেদি মিরাজের দুর্দান্ত থ্রুতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার রান আউট। ৩১ বলে ৪০ রানে শেষ হয় বাটলারের ইনিংস। ম্যাচ জিততে শেষ ২৪ বলে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৪০ রান। হাতে জমা ৭ উইকেট। খুবই সম্ভবপর একটা টার্গেট। কিন্তু গোটা ম্যাচের হিসাব বদলে দিল তাসকিনের শেষ ওভার। ১৭ নম্বর ওভারের দ্বিতীয় বলে মঈন আলির উইকেট তুলে নিলেন তাসকিন। সেই ওভারের শেষ বলে বেন ডাকেটও বোল্ড! ৪ রান খরচায় ২ উইকেট মিলল সেই ওভারে। চোখের পলকেই ম্যাচের মোড় ঘুরে গেল পুরোপুরি বাংলাদেশের পক্ষে। মুস্তাফিজের পরের ওভারে ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটার স্যাম কারান ও ক্রিস ওকস পুরোদস্তুর বেচারা! দাঁতমুখ খিঁচে ব্যাট চালালেন কিন্তু বলের স্পর্শই যে পেলেন না। অনেক চেষ্টা করেও মুস্তাফিজের সেই ওভার থেকে মাত্র ৫ রান পেল ইংল্যান্ড।
শেষের হিসাব দাঁড়াল- ১২ বলে ইংল্যান্ডের চাই ৩১ রান। কঠিন সেই সময়ে সাকিব বল হাতে লড়াইয়ে এলেন। প্রথম বলেই স্যাম কারান আউট। সাকিবের সেই ‘কৃপণ’ ওভার থেকে ইংল্যান্ড পেল মাত্র ৪ রান।
ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন ২৭ রান। হাসান মাহমুদের প্রথম দুই বল থেকে ক্রিস ওকস দুটো বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নাটকীয় কিছু করার ইঙ্গিত দিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের ধীরস্থির পরিকল্পনায় পরের চার বলে ইংল্যান্ড তুলল মাত্র ৪ রান। শেষ বল ডট। বাংলাদেশের জয় ১৬ রানে। সিরিজের সমাধান বাংলাদেশ ৩, ইংল্যান্ড ০।
এবং ইংলিশদের বাংলাওয়াশের আর্তনাদের শুরু!