রেজাউল করিম, গাজীপুর
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:০০ পিএম
নৌকাবাইচ, সাইক্লিং, কাবাডি, ফুটবল কিংবা অ্যাথলেটিকস সব বিভাগে সফল একজন অ্যাথলেট মালেকা পারভীন। খেলাধুলার স্বীকৃতি হিসেবে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ মিলিয়ে পেয়েছেন ২৭৩টি পদক। এর মধ্যে ২০০টিরও বেশি পেয়েছেন এককভাবে। খেলাধুলার সঙ্গে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে মহিলা ব্যাটালিয়ন-২-এর হাবিলদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আনসার বাহিনীর কাবাডি দলেরও কোচ তিনি।
৪২ বছর বয়সি মালেকা এই বাহিনীতে যোগ দেন ১৯৯০ সালে। তার বেড়ে ওঠা মানিকগঞ্জ হরিরামপুর উপজেলার মধ্য বয়ড়া গ্রামে। তার বাবা আব্দুল হামিদ বেপারি ও মা শুকুরুন্নেছা। আট ভাইবোনের মধ্যে মালেকা সপ্তম। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর এখন স্থায়ীভাবে বসবাস করেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে।
আনসার বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৯ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত সার্ক সাইক্লিংয়ে ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেন। পরে ২০০২ সালে দিল্লির সার্ক সাইক্লিংয়ে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ, ২০০৫ সালে ভারতের হায়দরাবাদে এশিয়ান গেমস কাবাডিতে ব্রোঞ্জ, আবার ২০০৬ সালে সাউথ এশিয়ান গেমস, শ্রীলঙ্কায় কাবাডিতে ব্রোঞ্জজয়ী দলের অন্যতম সদস্যও তিনি।
নিজের পদক সজয়ের সুখস্মৃতি রোমন্থন করে মালেকা বলেন, ‘২০১০ সালে চীনের গুয়াংজুতে কাবাডিতে ব্রোঞ্জপদক পাই আমি। একই বছর ঢাকায় ১১তম সাউথ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) রুপা, গুয়াংজু এশিয়ান গেমসসহ এশিয়ান বিচ গেমস ও সাউথ এশিয়ান বিচ গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী দলের অধিনায়ক ছিলাম। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাইক্লিং ও নৌকাবাইচে একটানা স্বর্ণপদক জিতেছি। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মাস্টার অ্যাথলেটিকসে ৫ স্বর্ণ ও ২ রৌপ্য জয় করি। যেখানে আমার ব্যক্তিগত স্বর্ণ ৩টি। আমি বর্তমানে আনসার কাবাডি দলের কোচ হিসেবে কাজ করছি।’
খেলাধুলায় নিজের নাম লেখানো নিয়ে এ নারী ক্রীড়াবিদ বলেন, ‘খেলাকে ঘিরে জীবনের সবকিছু আমার। ছোটবেলায় স্কুলে মোরগ লড়াই খেলতাম। তখন থেকে খেলাধুলার প্রতি প্রবল আকর্ষণ। আমি আনসার বাহিনীতে খেলাধুলায় বিশেষ অবদান রাখায় ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ‘সেবা পুরস্কার’-এ ভূষিত হই । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার হাতে চেক, মেডেল ও সনদ তুলে দেন।’
ব্যক্তিগত জীবনে এখনও অবিবাহিত মালেকা। ক্রীড়াঙ্গনের মনোনিবেশ করায় সংসার করার কথা এখনও ভেবে উঠতে পারেননি- ‘খেলাধুলা ও পরিবারের সদস্যদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম, এজন্য বিয়ে করা হয়নি। বিয়ে করার তেমন ইচ্ছে নেই তবুও যদি ভালো কোনো ছেলে পাই বিয়ে করতে পারি।’
তবে দেশ-বিদেশে বহুবার প্রেমের প্রস্তাব এবং বিবাহের প্রস্তাব পেয়েছেন বলে জানান। এ নিয়ে মালেকা বলেন, ‘২০০৫ সালে ভারতের কাবাডি দলের অধিনায়ক বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দিল্লিতে থাকার সময় আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এরপর ২০০৮ সালে বাগেরহাটে খেলার সময় এক পুলিশ সার্জেন্ট প্রেমের প্রস্তাব দেন। বিয়ে করার জন্য বাড়িতে পর্যন্ত গিয়ে প্রস্তাব দেন। কিন্তু খেলাধুলাকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছি যে বিয়ের বিষয়ে ভাবিনি।’
ক্রীড়াক্ষেত্রে নিজের অবদানের জন্য আনসার বাহিনীর প্রতি মালেকার যেন কৃতজ্ঞতার শেষ নেই- ‘আমার যত অর্জন, আমার যত প্রাপ্তি, সবই সম্ভব হয়েছে এই বাহিনীর জন্য। মা-বাবা এখন বেঁচে নেই। এখন এই বাহিনীর সদস্যরাই আমার কাছে পরিবারের সদস্যদের মতো। এরাই সবকিছু। যত দিন বেঁচে থাকব, এই বাহিনীর জন্য কাজ করে যাব। আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক, আমার কোচ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সব সময় আমাকে সাহায্য করেছেন।’