প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৪ পিএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪২ পিএম
খেলার শুরুতে ধুঁকবে, পিছিয়ে পড়বে, এরপর লিখবে দুর্দান্ত সব প্রত্যাবর্তনের গল্প—চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে যেন এমন অভ্যেস গড়ে ফেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। গতকাল রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচেও তেমন রোমাঞ্চকর গল্পের জন্ম দিয়েছে স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাব। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের দাপটে ঘরের মাঠেও তুলোধুনো হয়েছে লিভারপুল। ৫-২ ব্যবধানে গতবারের রানার্স আপ অল রেডদের হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় পাওয়ার দিনে অ্যানফিল্ডে ছয়টি রেকর্ড গড়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল।
অ্যানফিল্ডে ৫ গোল
সব কিছু ঠিক ছিল। খেলার ১৪ মিনিটে লিভারপুল ২-০ ব্যবধানে এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু গত মৌসুমের মত এবারও প্রত্যাবর্তনের গল্পে শুরু করেছে রিয়াল। ঘুরে দাঁড়িয়ে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ভিনিসিয়ূস জুনিয়র ও ফ্রেঞ্চ তারকা করিম বেনজেমার জোড়া গোল এবং এডার মিলিতাওয়ের গোলে স্কোরবোর্ডে জমা করেছে ৫ গোল। লেগে দল এগিয়ে আছে ৩ গোলে। রিয়ালের হয়ে এটি রেকর্ড।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এরআগে ইউরোপিয়ান কোনো দল অ্যানফিল্ডে ৪ গোলের বেশি করতে পারেনি, অর্থাৎ আনচেলত্তির শিষ্যরা প্রথম—যারা পাঁচবার অল রেডদের জালে বল পাঠিয়েছে। এরআগে ঘরের মাঠে লিভারপুলের সর্বোচ্চ হার ছিল ৪-১ ব্যবধানের, গতবছর ৭ সেপ্টেম্বর গ্রুপপর্বে নাপোলিতে ধরাশায়ী হয়েছিল জুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা।
দ্রগবার পাশে বেনজেমা
করিম বেনজেমা ও ভিনিসিয়ূস জুনিয়র—গতকালের রাতটিতে দুজনেই করেছেন জোড়া গোল, দুজনেই গড়েছেন রেকর্ড। একজনের চোট সারানোর পরের মিশন, অন্যজনের ভুল শোধরানোর দিন, জিজ্ঞাসা থাকতেই পারে কে ছিলেন কালকের সেরা? সে যিনিই সেরা হোক আইভরি কোস্টের কিংবদন্তি দিদিয়ের দ্রগবার দুর্দান্ত এক রেকর্ড ছুঁয়েছেন ব্যালন ডি’অর জয়ী বেনজেমা। রেকর্ডের ঘাঁড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন ভিনি।
লিভারপুলের বিপক্ষে ইউরোপিয়ান কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ ৬ গোল পাওয়ার রেকর্ড ছিল দ্রগবার। সেই রেকর্ডে এখন থেকে উচ্চারিত হবে বেনজেমার নাম। ফ্রেঞ্চ তারকার রিয়াল সতীর্থ ভিনি এক গোল পেছনে থেকে আছেন তালিকায় দুইয়ে, অল রেডদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৫ বার জালের দেখা পেয়েছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার।
আরও পড়ুন: লিভারপুলের ২ গোলের জবাবে রিয়ালের ৫ গোল
অ্যানফিল্ডে ক্রুইফের পর ভিনিসিয়ূস
ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ূস জুনিয়রের উপর লিভারপুল সমর্থকদের ক্ষোভ থাকতে পারে। গত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তার গোলেই তো শিরোপা খুইয়েছিল অল রেডরা। বুধবার রাতে তার জোড়া গোলেই শেষ ষোলের ম্যাচে মোমেন্টাম হারিয়েছে সালাহ-বেকারদের দল। অ্যানফিল্ডে ভিনির সেই জোড়া গোল তাকে বসিয়ে দিয়েছে জোহান ক্রুইফের পাশে।
ইউরোপ সেরার মঞ্চে ৫৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে অ্যানফিল্ডে জোড়া গোল করেছেন ২২ বর্ষী ব্রাজিলিয়ান তারকা। ভিনির আগে আয়াক্সের হয়ে দুটি গোল করেছিলেন ক্রুইফ। ১৯৬৬ সালে ইউরোপিয়ান কাপে খেলার সময় তার বয়স ছিল ১৯ বছর ২৩৩ দিন।
ভিনির আরেকটি রেকর্ড
জোহান ক্রুইফের পাশে বসার দিনে দুর্দান্ত পারফর্ম দেখিয়ে মাদ্রিদের জার্সিতে রেকর্ড গড়েছেন ভিনিসিয়ূস জুনিয়র। স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাবের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচে গোল করার রেকর্ড গড়েছেন ভিনি।
রিয়ালের জার্সিতে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার কীর্তিটা এখনো রাউল গঞ্জালেসের দখলে। ১৯৯৯ সালে ২২ বছর ১৬৩ দিন বয়সে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচে গোল করেছিলেন স্প্যানিয়ার্ড।
মেসির সঙ্গে বেনজেমার আঠারো!
অথচ চোটের কারণে তার না থাকার সম্ভাবনা বেশিই ছিল করিম বেনজেমার। আনচেলত্তি বলেছিলেন, পুরোপুরি সুস্থ না হলে মাঠেই নামাবেন না ফ্রেঞ্চ তারকাকে। কাল অবশ্য খেলছেন রিয়ালের অধিনায়ক, অ্যানফিল্ডে দুবার জালের দেখাও পেয়েছেন। তাতেই গড়েছে অনন্য এক রেকর্ড। যে রেকর্ড আগে ছিল শুধু লিওনেল মেসির।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি আসরে গ্রুপপর্বের প্রায় পুরোটা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন বেনজেমা। লিভারপুলের বিপক্ষে শেষ ষোলোতে ফিরেছেন এবং গোলও করেছেন, তাতেই মেসির পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১৮টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল করার রেকর্ড গড়েছেন।
প্রত্যাবর্তনের গল্পে রেকর্ড
গত মৌসুমে বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে, পিছিয়ে পড়েও জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। কাল লিভারপুলকে হারানোর পর তাই গত আসরের ম্যানসিটির বিপক্ষে খেলার কথা মনে করার কথা বলেছিলেন কোচ আনচেলত্তি। ২ গোলে পিছিয়ে পড়ে সেটি শোধ দিয়ে আরও ৩ গোল দেওয়ার রেকর্ডও এটি। প্রথম কোনো দল হিসেবে অন্তত ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ৩ গোলের ব্যবধানে জিতল রিয়াল।
অ্যানফিল্ডে কাল ভিনির শুরু করে দেওয়া পথে হেঁটে শেষ গোলের পেরেক ঠুকেছ বেনজেমা। আনচেলত্তির শিষ্যরা ২১ থেকে ৬৭ মিনিটের মধ্যে এনেছে ৫ গোল, প্রতি ৯ মিনিটে একটি করে গোল করে তারা।