প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:০২ এএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:১৩ এএম
রেফারিংয়ে সেই ২০১২ সাল থেকেই পদচারণা সালমা আক্তারের। ফিফার সহকারী রেফারিও ছিলেন। এবার আরও বড় স্বীকৃতি এলো তার দুয়ারে। এএফসি এলিট প্যানেলে ঢুকে গেছেন প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে। ইতিহাস গড়ার পর এবার নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন তিনি। গণ্ডিটা দক্ষিণ এশিয়া ছাড়িয়ে আরও বড় হয়ে গেছে যে!
২০১২ সালে রেফারিং কোর্সে উত্তীর্ণ হয়েই নারী ফুটবল রেফারিংয়ে পা পড়ে সালমার। এরপর ২০২১ সালে পান ফিফা সহকারী রেফারির স্বীকৃতি। এএফসির এলিট প্যানেলে যুক্ত হতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ১৯ পর্যন্ত বেশ কিছু পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার সে পরীক্ষায় উতরে যাওয়ার খবরই তাকে দেয় বাফুফে। এক বিবৃতিতে জানায় এএফসির এলিট প্যানেল রেফারিংয়ে তার অন্তর্ভুক্তির খবর।
দীর্ঘ ১২ বছরের সাধনা অবশেষে আলোর মুখ দেখায় সালমা যেন রীতিমতো চাঁদই হাতে পেলেন। বললেন, ‘১২ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল পেলাম। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল। সবাই তো এই অর্জনটার জন্যই এখানে আসে!’
পথটা সালমার বেশ বন্ধুরই ছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। সেটা সামলে আবার অনুশীলনও করেছেন সমানতালে। সে জন্য আবার জায়গাও বের করা কঠিন ছিল তার। অগত্যা রাস্তাতেই চলেছে অনুশীলন। তার ভাষায়, ‘কাজটা বেশ কষ্টসাধ্যই ছিল আট ঘণ্টার চাকরি করে আবার রেফারিংয়ের জন্য ফিটনেস ধরে রাখা। একজন মেয়ে হিসেবে কাজটা আরও কঠিন, কারণ অনুশীলনটা আমার করতে হতো রাতে। বাসার পাশে মাঠ ছিল, কিন্তু রাতে মাঠে অনুশীলনের অবস্থা থাকত না, তাই রাস্তাতেই দৌড়াতে হতো।’ তবে এত কষ্ট সয়েও তিনি রেফারিং করেছেন, ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই। এবার তার প্রতিদান পেলেন সালমা।
গেল বছর নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দায়িত্ব পালন করেছেন, ছিলেন সবশেষ নারী যুব সাফেও। তবে সালমার গণ্ডিটা দক্ষিণ এশিয়াতেই আটকে ছিল এলিট প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না বলে। যে বাধা টুটে গেছে গত মঙ্গলবার।
নতুন চ্যালেঞ্জটা যে আরও বড় সেটা আঁচ করতে পারছেন সালমা। বললেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে সেটা রক্ষা করা কঠিন। এটাকে (এলিট স্ট্যাটাস) ধরে রাখতে হলে আমাকে ধারাবাহিক হতে হবে। এটা অনেক কষ্টসাধ্য। কারণ আমার কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। নিজেরটা নিজেই করতে হয়। আমরা যে পেশায় আছি সেটা দিয়ে অন্তত দিন চলে না। তো এই পরিস্থিতি থেকে স্ট্যাটাস ধরে রাখাটা কঠিন, যদি পৃষ্ঠপোষক থাকত, তাহলে সেটা সহজ হতো।’
চ্যালেঞ্জ আছে, তাই বলে দমে যাওয়ার পাত্র নন সালমা। নতুন স্বপ্ন বুনতে ভুলছেন না। বললেন, ‘এলিট প্যানেলে না থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ আসেনি। এবার তা হয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার বাইরেও ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ আসবে আমার সামনে।’
এই স্বপ্নই তো তাকে এত অনিশ্চয়তায় এত বছর টিকিয়ে রেখেছে রেফারিংয়ে। গণ্ডি বড় হয়ে যাওয়ার পর সে স্বপ্নটা বড় হওয়ারই কথা!