ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ রবিবার রাতে
ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতার ইতিহাস যতটা দীর্ঘ, তাদের টি২০ দ্বৈরথের ইতিহাস ততটাই নাতিদীর্ঘ।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের থেকে মুক্ত হয়ে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম, আর পরস্পর শত্রুতা সমান্তরালভাবে প্রবাহিত। ভারত-পাকিস্তান নিজেদের ভেতর প্রথম সংঘাতের জন্য সময় নিয়েছিল মাত্র দুই মাস। মানে স্বাধীন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল শুধু, স্বাধীন হলো একদিকে, অন্যদিকে লেগে গেল। তারপর থেকে তারা দুটি ঝগড়াটে ভাই হিসেবে নিজেদের পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছে।
এমন দীর্ঘ বৈরিতার বিপরীতে নিজেদের ভেতর টি২০ খেলেছে মাত্র নয়টি। যেখানে স্পষ্ট এগিয়ে ভারত, জয় পেয়েছে সাতটিতে। আর মাত্র দুটি ম্যাচে জিতেছে পাকিস্তান। সেই হিসেবে এশিয়া কাপের আজকের ম্যাচে পাকিস্তানের কোনোমতেই এগিয়ে থাকার কথা নয়। কিন্তু শোনা যাচ্ছে তারাই এগিয়ে। কারণ হিসেবে রয়েছে গত বছর দুদলের হাই-ভোল্টেজ টি২০ ম্যাচে পাকিস্তানের জয়।
সঙ্গে এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, সদ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতে আফগানিস্তান পাকিস্তানের সম্ভাবনাকেই বাড়িয়ে দিল। পাকিস্তান-আফগানিস্তান-আবুধাবি যেন একটি বাড়ি বাড়ি ব্যাপার। এসব ব্যাখ্যার কোনো ফল নেই। বরং ফলাফল হবে ২২ গজের ভেতর, যারা খেলবে, তাদের মধ্যে যারা সেরাটা দিতে পারবে। তার জন্য আজ রাত ৮টা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।
ক্রিকেটে কোনো সম্ভাবনাই সম্ভাবনা না। ফুটবলেও কি! বা অন্য খেলাতেও বাইরে থেকে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ খেলা শুরুর পর হাওয়ায় উড়ে গিয়ে খেলাটাই শুধু থাকে। কিন্তু এই যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ, তা আমাদের সামনে শৈশব-কৈশোর-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নস্টালজিয়া এনে হাজির করে।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানে জহুরুল হক হল হাজির হয়ে যায়। সকাল থেকে উত্তেজনা, সময় যাচ্ছে না কোনোমতেই, ক্লাস করেও আরও বাকি ৮ বা ১০ ঘণ্টা। কীভাবে কাটবে আমরা ভেবে পাচ্ছি না। পাকিস্তান সমর্থকরা ভারতের সমর্থকদের কথার তোড়ে উড়িয়ে দিচ্ছে, আর ভারতের সমর্থকরা পাকিস্তান সমর্থকদের। টিভিরুমে একটা ভালো বসার জায়গা পাওয়া লাগবে, তার জন্য বন্ধুরা প্ল্যান করে রাখছে। খেলা শেষে কে খাওয়াবে, কোথায় খেতে যাওয়া হবে, এসব হিসাব-নিকাশ যেন শেষই হয় না। খেলা শুরু হওয়ার পর চার হলেও চিৎকার, আউট হলেও চিৎকার। দুদলের সমর্থকই তৈরি নিজেদের গলাটা আরও বেশি উঁচিয়ে ধরতে।
আজ রাত ৮টায় শুরু হবে। তারপর? তারপর একদল জিতবে, তারপর ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতার ইতিহাস টানা হবে। সে বৈরিতা কিসের? হিংসা, ধর্ম, ভৌগোলিক অধিকার, জাতিগত সংঘাতের। এসবের সঙ্গে ক্রিকেটের যোগসূত্র টেনে বিদ্বেষের গোড়ায় আরও বেশি করে জল ঢালা হবে। কিন্তু এ বৈরিতা ক্রিকেটে থাকলেই ভালো হতো। আরও ভালো হতো ক্রিকেট থেকে বেরিয়ে সংগীত, সাহিত্য, সিনেমা, আবিষ্কার, সৃজনশীলতা নিয়ে পরস্পর আরও বেশি বৈরী হয়ে উঠলে। মানে দ্বৈরথটা এসবে থাকলে ভালো হতো। ১৯৪৭ সালে এই দুই রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার দুমাসের মাথায় পরস্পর গোলাবারুদ ছুড়তে শুরু করল। তা এখন চলমান রয়েছে। গোলাবারুদ না ছুড়ে সংগীত ছুড়ে দিলে, সুর ছুড়ে দিলে কেমন হতো? পাকিস্তান নূরজাহানকে হাজির করলে ভারত হাজির করত লতাকে। পাকিস্তান ইকবালকে হাজির করলে ভারত হাজির করত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। তারপর পরস্পরের তুমুল বিতর্ক চলতে থাকত কয়েকদিন ধরে। এই তো?
যা হোক, আজ রাত ৮টায় ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যেতে হবে। সামনে বাংলাদেশের ম্যাচের দিন অবশ্য অফিস থেকে ছুটিই নিতে হবে। দিন পাল্টেছে তো!