হেলাল নিরব
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৫১ পিএম
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:১৯ পিএম
কেউ এসেছেন রাজশাহী থেকে, কেউবা আরও দূরে— কুড়িগ্রাম থেকে। রাজধানীর ধানমন্ডির নাসিম স্কয়ারে রবিবার সকাল থেকেই জমতে থাকে ভিড়। নানা প্রান্তের ভিন্ন ধরনের মানুষগুলোর যেন একটিমাত্র পরিচয়— এরা সবাই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ভক্ত। সকাল গড়িয়ে দুপুর হল, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নীলচে হলুদ জার্সি পরা মানুষের সংখ্যাও বাড়ল। শত মানুষের মনে যেন আছড়ে পড়েছে পুনর্মিলনীর রঙ। কথার পিঠে কথা জমে আড্ডা ছড়িয়ে পড়ে বহুদূর, হাসি-খুশিতে কেটে যায় সময়। দেশের ভিন্ন প্রান্তের ভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষগুলোর উদ্দেশ্যও এখানে অভিন্ন— ৩৭ ছাড়িয়ে ৩৮-এ পা দেওয়া পর্তুগিজ মহাতারকা রোনালদোর জন্মদিন উদযাপন।
গত পাঁচ বছরে এই দিনটি এলে যেন সব ব্যস্ততা ভুলে যান এসব ভক্ত। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ভক্তরা ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে নিয়ম করে আসেন ধানমন্ডিতে। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ঠিক করা হয় স্থান, তোলা হয় চাঁদা— সবকিছু করা হয় নিজের উদ্যোগে। গতকালও আনা হয়েছিল ৪০ পাউন্ডের একটি কেক। বড় করে লেখা ছিল— ‘জন্মদিনের শুভেচ্ছা সিআর সেভেন—৩৮’।
ভক্তদের নিজ উদ্যোগে এমন জাঁকালো আয়োজনের পেছনে রয়েছে পর্তুগিজ সুপারস্টারের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা। এদিন যেন তারা বনে যান একে অন্যের ভাই, বন্ধু— অনেকটা যেন বহুদিনের পরিচিত খুব কাছের কেউ। দিন ছাপিয়ে তারা বুক উঁচিয়ে বলেন, ‘আমরা সিআর সেভেনের ফ্যান’।
মাইদুল আলম বাবু তেমন একজন রোনালদোভক্ত। ২০০৬ সাল থেকে পর্তুগিজ সুপারস্টারকে রাখছেন নখদর্পণে। কাতার বিশ্বকাপে রোনালদোর সাক্ষাৎ পেয়ে আসা বাবু শুনিয়েছেন, রোনালদোর চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসা সময়ের গল্প। ভবিষ্যতে কী চান সেটিও বলেছেন। মূলত সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলারের ভালোবাসার টানেই এক ছাদের নিচে বসেন তারা। রোনালদোকে নিয়ে আলোচনা-বিশ্লেষণ শেষে একসঙ্গে সেরে নেন দুপুরের খাবার।
বাবু বলেছিলেন, ‘কোনো স্পন্সরশিপ নেই। জার্সি, কেক থেকে খাবার— সবকিছু নিজেরাই আয়োজন করেন। রোনালদোর প্রতি ভালোলাগা থেকেই জন্মদিনে ভক্তরা এক হন। প্রতিবছরের মতো এবারও ভালো একটি দিন কাটিয়েছেন তারা।’
সকাল গড়িয়ে দুপুর, কথার পিঠে চেপে দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকা কথারা ফুরাতে চায় না। তবুও বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়। কাজে ফিরতে হবে সানোয়ার-বাহার-পারভেজদের, যেতে হবে নিজের ডেরায়। রোনালদোভক্ত বাবুর কাছে শেষ সময়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভালোবাসা ছাড়া এই দিনটি থেকে আপনারা কী নিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যয়ের সঙ্গে শুনিয়েছেন হার না মানা মানসিকতা নিয়ে যাওয়ার কথা। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসেও খানিকক্ষণ একসঙ্গে কাটানোর কথা। বাবু বার কয়েক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা ইংরেজি শব্দ আওড়াচ্ছিলেন ‘ইন্সপিরিয়েশন’।
ফুটবলার তো বটে, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি ভক্ত রোনালদোর থেকে নেন অনুপ্রেরণা, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার রসদ। পর্তুগিজ সুপারস্টারের থেকে বাবু যেমন শিখেছেন, কোনো বাধাই বাধা না— ফিরতে হবে রাজার বেশে। একটু মুষড়ে পড়লে রোনালদোর মতো বলে ওঠেন, ‘নেভার গিভ আপ।’