প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:১৪ পিএম
ট্রফি ডাকল, বলল- এসো, জড়িয়ে ধরো, এখন তুমি আমাকে ছুঁতে পারো
কাতার বিশ্বকাপে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুটোই দেখেছেন লিওনেল মেসি। অম্লমধুর মাসব্যাপী যাত্রার পর সোনালি ট্রফিতে আকাঙ্ক্ষিত চুমু এঁকেছেন, শূন্যে উঁচিয়ে ধরেছেন বিশ্বকাপ ট্রফি। সৌদি আরবের সঙ্গে হেরে শুরু। এরপর একে একে স্নায়ুক্ষয়ী সব ম্যাচ পেরিয়ে ফাইনাল, ফ্রান্সের বিপক্ষে সেদিনও ছিল নাটুকে রোমাঞ্চ। সব পেরিয়ে মেসি এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, কে সেরা বিতর্ক পেরিয়ে নিজেকে নিয়েছেন কিংবদন্তির তালিকায় ওপরের দিকে। শিরোপার সমঝোতার প্রায় দেড় মাস পর মেসি বলেছেন কাতারে কাটানো স্বপ্নের বিশ্বকাপের খুঁটিনাটি। মন খুলে কথা বলেছেন আর্জেন্টাইন রেডিও ‘উরবানা প্লেই’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
স্মৃতিতে ম্যারাডোনা
শিরোপাটা যখন ছুঁলেন, লুসাইল স্টেডিয়ামের লাখো দর্শকের মাঝে কোনো একজনকে কি খুঁজেছিলেন মেসি? হয়তো খুঁজে ফিরেছিলেন। অন্যলোকে পাড়ি জমানো ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে গভীরভাবে স্মরণও করেছিলেন মেসি। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের আক্ষেপ, আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দেখে যেতে পারলেন না বিশ্বমঞ্চের সর্বোচ্চ শিরোপা জয়।
‘আমি খুব করে চাইছি, তিনি বিশ্বকাপ শিরোপাটা তুলে না দিতে পারলেও যেন আমাদের জয়গুলো দেখে যেতেন। জাতীয় দলের প্রতি তার প্রবল ভালোবাসা ছিল, তিনি এমন কিছুই চাইতেন। আমার মনে হয়, সে এবং অগণিত মানুষের ভালোবাসা আমাকে সামনে ঠেলেছে। শুধু শিরোপার জন্য নয়, সবকিছুর জন্য।’
শিরোপায় চুমু
খুব কাছে গিয়েও একবার অনেক দূরে ছিলেন মেসি। ২০১৪ সালে হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকে দেখেছেন জার্মানির শিরোপা উৎসব। স্বপ্নভঙ্গের পর মেসির আকাঙ্ক্ষাভরা মুখ দেখেছিল ফুটবলবিশ্ব। মেসি যেন চাচ্ছিলেন বিশ্বকাপের শিরোপাটি নিজের করে চুমু খেতে। ব্রাজিল ছাড়িয়ে রাশিয়াতেও মেসির স্বপ্ন ছিল অধরা। অবশেষে কাতারে আসে আরাধ্য চুমু খাওয়ার সময়। মেসিও দেরি করেননি। বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন বলেছিলেন, ট্রফিটি যেন তাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছিলÑ ‘ট্রফিটা বেদির ওপরে ছিল, এর আগেও দেখেছি। কিন্তু যা চেয়েছি, আগে তা (ছুঁতে) পারিনি। ট্রফিটা যেন আমাকে ডাকল। বলল, এই তো আমি, এসো, জড়িয়ে ধরো, এখন তুমি আমাকে ছুঁতে পারো। সুন্দর স্টেডিয়ামটির মাঝে দেখলাম ট্রফিটি জ্বলজ্বল করছে, আমি ভাবতে পারছিলাম না। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি চুমু দিতে গেলাম। আমার এটার প্রয়োজন ছিল।’
মেসির অনুতাপ
কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে লিওনেল মেসি তেতে গিয়েছিলেন, কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের সাবেক কোচ লুই ফন গালের সঙ্গে। কিন্তু কেনÑ লড়াই শেষ থেকেই এমন জিজ্ঞাসা। সেদিন আর্জেন্টাইন মহাতারকার রোষের মুখে পড়া ডাচ কোচ ও ডাচ স্ট্রাইকার ভাউট ভের্গহর্স্টও বলেননি কিছু। সে ঘটনা নিয়ে মেসিই বললেন কথা, এমন কিছু ঘটুক নিজেও পছন্দ করতেন না বিশ্বকাপজয়ী। বলেছেন, তিনি অনুতপ্ত। কার্ডের রেকর্ড গড়া ম্যাচে ফন গাল ও ভের্গহর্স্টের ওপর রেগে গিয়েছিলেন কেন, জানতে চান রেডিওর সাংবাদিক অ্যান্ডি কুজনেতসফ। সেদিন টানেলের ভেতরে ভের্গহর্স্টকে ‘সরে যাও গাধা’ কেন বলেছিলেন। এর জবাবে মেসি বলেছেন, ‘এটা নিয়ে ভাবিনি, মুহূর্তেই ঘটনা ঘটে গেছে। যখন এটি ছড়িয়ে গেল, আমি যা করেছি তা ভালো লাগেনি। সরে যাও থেকে যা কিছু ঘটেছে তা ভালো হয়নি। সত্যি বলতে ওই সময়টা ছিল প্রচণ্ড স্নায়ুচাপের, বিশাল উত্তেজনার মুহূর্ত এবং সবকিছু খুব দ্রুত ঘটে গেছে।’
ভক্তদের কাণ্ড
কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসি অ্যান্ড কোংয়ের শুভেচ্ছা জানানোর কমতি ছিল না। আর্জেন্টিনার রাস্তায় নেমেছিল মানুষের ঢল, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার সমর্থকরা মেতেছিল আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের আনন্দে। সেদিন মেসিও পড়েছিলেন খুশির বিড়ম্বনায়। ভক্তদের অগণিত শুভেচ্ছাবার্তার কারণে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টই সাময়িকভাবে ব্লক হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বকাপের ছবিতে লাইকসংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছিল কোটির ঘর। ভেঙেছে টুইটারের তাবৎ সব রেকর্ড।
মেসি বলেছেন, ‘ছবিটা কত মানুষের কাছে পৌঁছেছে, বুঝুন। কত মানুষ আমার হাতে ট্রফিটা দেখতে চেয়েছে। সত্যি বলতে, খুব কম শুভেচ্ছাবার্তা পড়তে পেরেছি। এটা খুব কঠিন। আমার কাছে ১০ লাখ বার্তা এসেছিল। শেষ পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে গিয়েছিল। লগইন করতে পারছিলাম না। ব্যাপারটা পাগলাটে ছিল।’
এবং পরিবার
কথায় কথায় জমে উঠেছিল আড্ডা। মেসি শুনিয়েছেন কাতারে অম্লমধুর সব স্মৃতি। পরিবারের কথা শোনাতে গিয়ে জানিয়েছেন, সৌদি আরবের বিপক্ষে হারার পর ছেলে মাতেও রাগ করে অঙ্ক কষতেও বসে গিয়েছিল!
মেসি জানালেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের জন্য মাসটি দুর্দান্ত ছিল। থিয়াগো পাগলের মতো উদযাপন করেছিল। বাজে সময় সয়ে, পরিপূর্ণভাবে জীবন উপভোগ করছি। প্যারিসে ফেরার পরও কাতারের দিনগুলো মিস করেছি। আমাদের খুব ভালো সময় কেটেছে।’