শান্ত রিমন
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:২৬ এএম
তার জীবনের গল্পটা রূপকথার মতোই। খেলোয়াড় বাবা সের্গেই সাবালেনকা হঠাৎই একদিন তার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে করে বের হলেন। পথে টেনিস কোর্ট দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন দুজনেই। ওইটুকু বয়সেই টেনিসের প্রতি প্রথম অনুরাগ। কে জানত ছোট্ট সেই মেয়েটিই একদিন ঝড় তুলবেন ইয়ারা পার্কে, আলো ছড়াবেন রড লেভার অ্যারেনায়!
সেই প্রথম প্রেমকে পেশা হিসেবে নিতে ২০১৪ সালে মিনস্কের জাতীয় টেনিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরু করেন এক কিশোরী। তারপর জীবন থেকে একেকটা বসন্ত হারিয়ে আজ তিনি হয়েছেন সমৃদ্ধ। বয়স যখন ২৪, তখন টেনিসে রাজত্ব করছেন। জিতে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনজয়ী বেলারুশ তারকা আরিনা সাবালেনকার গল্পটা এমনই।
২০১৪ সালের শেষের দিকে ইস্তাম্বুলে প্রথম পেশাদার ম্যাচে জয় পান সাবালেনকা। পরের সিজন আন্টালিয়াতে প্রথম দুটি শিরোপা জেতেন তিনি। অর্থ হিসেবে পান ২৫ হাজার ডলার। এরপর ২০১৬ সালে বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ে ৩০০-এর মধ্যে স্থান করে নেন তিনি। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পরপর একক বিভাগে বিশ্বে ১১ নম্বর স্থান অর্জন করেন। সেই সঙ্গে নিয়মিত ডাবলস শুরু করেন তিনি। সাফল্যও আসে তাতে। মেরটেনসের সঙ্গী হিসেবে ইন্ডিয়ান ওয়েলস ওপেন এবং মিয়ামি ওপেন জেতেন সাবালেনকা। এরপর ইউএস ওপেনেও শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন। তবে একক খেলায় জয়ের নেশা সব সময় তাড়া করে বেড়িয়েছে তাকে। অবশেষে সেই স্বাদ পেলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এসে। মাতালেন রড লেভার অ্যারেনা। পূরণ করলেন বাবার স্বপ্ন।
গত বছরও ৫৫ ম্যাচে ৪২৮ রেটিং নিয়ে নড়বড়ে অবস্থা ছিল তার। তবে ভুলে যাননি বাবার দেখা সেই স্বপ্ন। সে কারণেই হয়তো বাবাকে হারানোর কষ্ট ভুলে দ্রুতই কোর্টে ফিরে আসেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে গড়ে তুলেছেন বড় মঞ্চের জন্য। আর যার ফলটা শনিবার মেলবোর্ন পার্কে হাতেনাতে পেলেন সাবালেনকা। রাইবাকিনার বিপক্ষে প্রথম সেটে ৬-৪ ব্যবধানে হারার পর পরের দুই সেটে জয় তুলে নেন ৬-৩ ও ৬-৪ ব্যবধানে। সেই সঙ্গে মেয়েদের একক টেনিসে বিশ্বের ২ নম্বর র্যাঙ্কিংয়ে উঠে আসেন তিনি।
কঠোর পরিশ্রমের পর এমন সাফল্যে আবেগে ভেসেছেন সাবালেনকা। জানিয়েছেন তার অনুভূতির কথা। তিনি বলেন, ‘যখন কেউ আমার কাছে একটি স্বাক্ষরের জন্য অনুরোধ করত, তখন আমার উদ্ভট এক অনুভূতি হতো। আমি তাদের বলতাম, তুমি স্বাক্ষর চাচ্ছ কেন? আমি কেউ নই। আমি এখনও একটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেনি। আমার সেই অনুভব পরে আমি সংশোধন করেছি। নিজেকে অতিরিক্ত সম্মান করতে লাগলাম। আমি বুঝতে শুরু করেছি যে আমি এ পথেই আছি। কারণ আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং সত্যিই আসরের জন্য একজন চমৎকার অংশগ্রহণকারী। আর এই অনুভূতি আমাকে ফাইনাল ম্যাচে প্রথম সেট হারের পর ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিল। প্রতিবারই যখন কোর্টে আমার ঝামেলাপূর্ণ সেকেন্ড গেছে, আমি নিজেকে মনে করিয়ে দিতাম যে আমি এইসব মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’
আগেও দুবার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বাদ নিয়েছেন আরিনা সাবালেনকা; তবে সেটি দ্বৈতে। অবশেষে ২৪ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এসে দেখা পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। তবে একক নৈপুণ্যে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের এই পথটুকু সহজ ছিল না বেলারুশিয়ানের জন্য। হকি তারকা বাবা সের্গেই সাবালেনকা ছোটবেলা থেকেই মেয়েকে গড়ে তুলেছেন বড় মঞ্চের জন্য। অথচ মেয়ের এই জয় দেখে যাওয়া হয়নি তার। ২০১৯ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
সের্গেই সাবালেনকা দেখে যেতে পারলেন না তার সেই ছোট্ট পরি আজ পাখা ছাড়াই উড়তে শিখেছে, সাফল্যের আকাশে!