× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘অসমাপ্ত’ আশরাফুলের অন্য আনন্দ

এম.এম. কায়সার

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:০৪ পিএম

আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৫ পিএম

‘অসমাপ্ত’ আশরাফুলের অন্য আনন্দ

তারিখটা এখনও স্পষ্ট মনে আছে। জুন ২৪, ২০০৭। ভেন্যু কলম্বোর তাজসমুদ্র হোটেল। পরদিন সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ শুরু। সকালের সেশনেই দলের অনুশীলন আছে। তাই তাড়াতাড়ি নাস্তা সারার তাড়া। ব্রেকফাস্ট টেবিলে নাস্তার পর চায়ের কাপ হাতে মোহাম্মদ আশরাফুল। এই সিরিজ থেকে তার নতুন পরিচয়—বাংলাদেশের অধিনায়ক! নতুন দায়িত্ব, নতুন ভূমিকা, নতুন সময়; তবে আশরাফুলকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলাম আরও অনেক পুরোনো সময়ে। তার ক্রিকেটের সেই শুরুর সময়টায়। 

—অমরজ্যোতি ক্লাব, সিদ্ধেশ্বরীর বালুর মাঠের সেই দিনগুলো কি মনে আছে?’

অমরজ্যোতি নামটা শুনেই আশরাফুল খানিকটা আনমনা হয়ে গেলেন!

—আরে কী বলেন, সেসব দিন, সেই সময়ের কথা কি ভোলা যায়?

ঢাকার মৌচাক মোড়ের সিদ্ধেশ্বরীর বালুর মাঠে বলবয় হিসেবে শুরু হয়েছিল আশরাফুলের ক্রিকেট জীবন। তিন ধারে বাড়িঘেরা রাস্তার পাশের এই ছোট মাঠটা ছিল নম্বই দশকে দ্বিতীয় বিভাগের দল অমরজ্যোতি ক্লাবের প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড। ১৯৯৭-তে অমরজ্যোতি ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে আশরাফুলের অভিষেক। এগিয়ে চলার সেই শুরু। বয়স বারোর কোঠায় আসতেই অনূর্ধ্ব-১৩ জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে ক্যাম্পে নাম লেখালেন।

ক্যাম্পের কোচ ডাকলেন—তুমি কি কর? ব্যাটিং নাকি বোলিং? 

কী বলেছিলেন তা এখনও পরিষ্কার মনে আছে আশরাফুলের—স্যার, আমি লেগস্পিন করি।

কোচ বল দিলেন। যাও বোলিং করো। তোমার বোলিং দেখব। 

—জানেন, সেদিন আমার প্রথম বলেই নেটের ব্যাটসম্যান আউট! বোল্ড! বলটা ছিল গুগলি। ব্যাটসম্যান বুঝতেই পারেনি! 

অবশ্য সেদিন নেটে আশরাফুলের সেই সাফল্য পাসমার্ক পায়নি। অনূর্ধ্ব-১৩ দলে তার জায়গা হয়নি। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা কি সেদিন টের পেয়েছিলেন আশরাফুল। তবে ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন কীভাবে ফের জোড়া লাগাতে হয় সেই শিক্ষাটা ক্রিকেট গুরু ওয়াহিদুল গনির কাছ থেকে ভালো শিখেছিলেন আশরাফুল। পরিশ্রমের ফসল হিসেবে পরের বছর ঠিক অনূর্ধ্ব-১৩ দলে জায়গা করতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে কম বয়সি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট এবং ওয়ানডে খেলেছেন। সবচেয়ে কম বয়সে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কও হয়েছেন।

২০০১ সালের এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে অভিষেক। ওয়ানডেতে তেমন বড় কিছু করার আগেই টেস্ট অভিষেকেই বাজিমাত। ওই বছরই ৮ সেপ্টেম্বর কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্রিকেট (এসএসসি) গ্রাউন্ডে জীবনের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আশরাফুল ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেন। চামিন্দা ভাস-মুরালিধরনের বিরুদ্ধে লড়ে ১১৪ রানের ঝলমলে সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সি (১৭ বছর ৬১ দিন) ক্রিকেটারের সেঞ্চুরির বিশ্বরের্কড ওটা। যে মাঠে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়ে আশরাফুলের যাত্রা শুরু, সেই মাঠেই ২০০৭ সালের ২৫ জুন তার টেস্ট অধিনায়কত্বের শুরু। প্রতিপক্ষও সেই একই, শ্রীলঙ্কা। 

সিদ্ধেশ্বরীর বালুর মাঠে লেগস্পিন করতে আসা ছেলেটি বাংলাদেশের পঞ্চম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে টস করলেন কলম্বোর এসএসসি গ্রাউন্ডে।

—রাজত্ব তো পেলেন, এবার?

আশরাফুল হাসলেন। শব্দহীন সেই হাসি ঠিকই জানান দিল—আমি পারব। আমাকে পারতেই হবে।

—ক্রিকেটীয় বাস্তবতা জানাচ্ছে, আশরাফুল পারেননি! বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সময়ের আশার ‘ফুল’ ছিলেন আশরাফুল। কিন্তু সেই ফুল পাপড়ির সুঘ্রাণ ছড়ানোর চেয়ে কাঁটার যন্ত্রণাই দেখলেন বেশি! 

দোষ অবশ্যই আশরাফুলের। তবে দায় যে আরও অনেকের।

সেই দায়-দোষ, সন্দেহ-অভিযোগ-সমস্যা-শাস্তির উপাখ্যান নিয়ে ২০১৪’র জুনের একটি বিষণ্ন বিকেলে ক্রিকেটবিশ্ব আশরাফুলের কান্না দেখল!

—আশরাফুলকে আমার অনেক ভালো লাগত। ‘বাবা, ও কি ইচ্ছে করেই এসব করেছে’—টিভি পর্দায় বারবার আশরাফুলের কান্না দেখে আমার স্কুলপড়ুয়া ছেলের অবাক প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগেই তার পরিষ্কার সিদ্ধান্ত—‘বাবা, আমার ওকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না!’

আশরাফুলকে এভাবে কে দেখতে চেয়েছিল? কেউ চায়নি। কিন্তু জীবন চলার পথে যে কাঁটা বিছানো অন্ধ গলি থাকে তাতে পথ হারিয়ে সময়ের অনেক আগেই হারিয়ে গেলেন ক্রিকেটার আশরাফুল!

ক্রিকেট মাঠে যে আশরাফুল দেশের মানুষকে আনন্দে ভাসিয়েছিলেন; সেই তিনি এদিন কাঁদলেনও অসহনীয় যন্ত্রণায়। ফিক্সিং কেলেঙ্কারি কবুল করলেন। নিয়ম মেনেই বিসিবি তাকে পাঁচ বছর সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করে।

দুঃখ-যন্ত্রণা লাঘবের জন্য সেরা সমাধান একটাই—সময়। নিষেধাজ্ঞার কঠিন সেই সময় দাঁতে দাঁত চেপে কাটালেন। আবার ক্রিকেট মাঠে ফিরলেন ২০১৮ সালে। সেই বছরই ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন। কিন্তু নির্বাচকরা তাকে জাতীয় দলে যে আর ডাকলেন না। এখন বাস্তবতা আশরাফুলও বোঝেন। জানেন এই ফেরার আর সময় বা সুযোগ কোনোটাই নেই তার সামনে। নির্বাচকদের দূরতম চিন্তায়ও আশরাফুলের নাম নেই। দরজাটা বন্ধ হয়ে গেছে। পেছনের দুই মৌসুমে বিপিএলেও কোনো দল নেয়নি তাকে। 

এই ঊনচল্লিশে এসে আশরাফুল এখন বাইরে দাঁড়িয়ে শুধু দেখছেন ভেতরের রাস উৎসব! সেই দিন সেই সময় আর আশরাফুলকে কেউ ফিরিয়ে দেবে না। 

তার ভুল ছিল। সমস্যা ছিল। দোষ ছিল। দায়ও কোনো অংশে কম ছিল না। কিন্তু তারপরও সাধারণ মানুষের যে অসাধারণ ভালোবাসা আশরাফুল পেয়েছেন, সেটাই তাকে আপ্লুত করেছে। সেই আনন্দই এই অসমাপ্ত ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আশরাফুলের সবচেয়ে বড় ‘জয়’!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা