× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘অবশ্যই ওটা ভুল ছিল, আমি শাস্তিও পেয়েছি’

আপন তারিক

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৩১ এএম

আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:০২ পিএম

‘অবশ্যই ওটা ভুল ছিল, আমি শাস্তিও পেয়েছি’

তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘আশার ফুল’। স্বপ্ন ছড়িয়েছিলেন টেস্ট অভিষেকেই। বাংলাদেশের অনেক বড় জয়ে ছিল তার অবদান। কিন্তু ক্যারিয়ারের মাঝপথে এসে ফুলের সুরভি ছড়ানোর চেয়ে কাঁটার ক্ষতে পথ হারালেন। ক্রিকেট থেকে পথ হারানো আশরাফুল সেই যে দলছুট হলেন আর ডেরায় ফেরা হলো না তার। সেই দুঃখ আছে। অপূর্ণতা আছে। সঙ্গে আছে একরাশ তৃপ্তি। আশরাফুলের সেই গল্পগাথা তুলে ধরেছেন আপন তারিক।

প্রশ্ন : মোহাম্মদ আশরাফুল যখন মুখোমুখি তখন নানা আলোচনা চলে আসে। আপনার লড়াই ছিল, সংগ্রাম ছিল ফের জাতীয় দলে ফেরার। সেই লড়াই থেকে সরে এসেছেন এমন একটা কথা এখন আলোচিত। বিষয়টা আসলে কতটা সত্য বা কী, তা যদি বলতেন...

মোহাম্মদ আশরাফুল : আমরা এখন তো ন্যাশনাল লিগ দিয়ে বছর শুরু করি ২০ বা ২২ জন খেলোয়াড় নিয়ে। তারপর আমাদের বিসিএল হয় চারটা টিম নিয়ে। সেখানে ৬০ জন খেলোয়াড় সুযোগ পায়, খেলতে পারে ৪৪ জন। তারপরে আমাদের বিপিএল হয়। সেখানেও ৭০ জনের মতো ক্রিকেটার সুযোগ পায়। ‘লিস্ট এ’ ম্যাচ খেলে ১২টা টিম, সেখানে ২১০ জনের মতো খেলোয়াড় থাকে। ১১১ বা ১২০ জনের মতো মাঠে নামার সুযোগ পায়। সেই জায়গাতে যারা খুব ভাগ্যবান তারা চারটা আসরেই খেলতে পারে। আমিও খেলেছি। তবে শেষ কয়েকটি বিপিএলে সুযোগ পাচ্ছি না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেহেতু বিপিএল মূল একটা আসর, যেখানে পারফর্ম করলে যেকোনো জায়গায় সুযোগ পাওয়া সম্ভব, বেসিক্যালি বাংলাদেশ জাতীয় দলে। কারণ অন্য ফরম্যাটগুলোয় পারফর্ম করলে সেভাবে বিবেচনায় আসা যায় না। বিপিএলে ভালো করলে তাকে আমরা যেকোনো ফরম্যাটে ভালো বিবেচনা করি। সেই জায়গায় দেখা যাচ্ছে যে এটা খুব কঠিন। যদিও আমার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের হয়ে আবারও টেস্ট ক্রিকেটে খেলব। স্পেশালি টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার। এখনও খেলছি, এবারও এনসিএল খেলছি, ডিপিএল খেলেছি ইসলামী ব্যাংকের হয়ে। বললাম না ভাগ্যবান হতে হয়। এই বছর পুরো সময় ক্রিকেট খেলতে চাই। যেহেতু বিপিএলের পর বিসিএলের দুটি ম্যাচ থাকবে। যেহেতু ক্রিকেটটাই পছন্দ করি, এখানেই থাকার ইচ্ছা আছে। আসলে ম্যাচ না পেলে কামব্যাক করার পথ থাকে না। খেলার ওই সুযোগটা আমাদের অনেক কম। জাতীয় দল থেকে বের হয়ে গেলে সেখানে ফেরার পথটা কম। 

প্রশ্ন : বাংলাদেশ ক্রিকেট তো আপনি নিবিড়ভাবে ফলো করেন। এখানে পারফর্ম না করেও জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াও দেখছি! এক্ষেত্রে আপনার কি মনে হয় সেই জায়গায় আপনি দুর্ভাগা কিনা? আমরা অনেক ক্রিকেটারকে দেখেছি যারা পারফর্ম করছেন না, আরেকজন খারাপ করছেন সেই সুযোগে জাতীয় দলে এসেছেন...

আশরাফুল : এটা তো দুর্ভাগ্য। আমাদের ক্রিকেটে এই সংস্কৃতিটা আছে। আপনি যদি দেখেন যে এই ধরনের ঘাটতি রয়েছে। ইদানীং এটা বেশি হচ্ছে, আগে ততটা ছিল না। এখন আসলে মিডিয়া বলেন বা সোশ্যাল মিডিয়া একটা হাইপ তৈরি করলে এটা হয়ে যায়। আমি মনে করি এটা ঠিক না। আমার বিষয়ে আমার চেয়ে আপনারা ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু কখনই ওইভাবে দলে ঢুকতে চাইনি। সব সময় চেষ্টা করেছি পারফর্ম করেই সুযোগ পেতে। তাই কাউকে দোষ দিচ্ছি না, এটা আমার ব্যর্থতা। নিষেধাজ্ঞা থেকে আসার পর যতটা প্রয়োজন ছিল ততটা পারফর্ম করতে পারিনি। একটা বছর করেছিলামÑ পাঁচটা সেঞ্চুরি। ওই সময় যদি সুযোগ মিলত তাহলে হয়তো আমার জন্য ভালো হতো। সেই সুযোগ আসেনি। তবে আমি কাউকে দোষ দেব না, আমিই কখনও সঠিক পারফর্ম করতে পারিনি।

প্রশ্ন : আপনার প্রথম প্রশ্ন যেখানে শেষ করেছিলেন, সেটার সূত্র ধরে জানতে চাচ্ছি—ক্রিকেটারের পর আরেকটা পেশা বেছে নেবেন। তাহলে আপনার পরিকল্পনা যদি একটু বলতেন...

আশরাফুল : যেহেতু আমি খেলাটা বুঝি। ক্রিকেট বিষয়ে জ্ঞান আছে। আমার অভিষেক হয়েছিল লেগ স্পিনার হিসেবে, এখন অফ স্পিন করি, টপ অর্ডার থেকে লো অর্ডার সবখানে ব্যাট করেছি। তো আমি আসলে ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করতে চাই। আমার ২৫ বছরের একটা ক্যারিয়ার। মনে হয় দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেট আমিই খেলেছি। যেহেতু আমি প্রায় সব কিছু জানি, তো মনে হয় অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারব। ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকার ইচ্ছা।

প্রশ্ন : ক্রিকেট কোচিংয়ে আসতে চান। এখানে আমাদের অনেক তারকা খেলোয়াড় আসতে চেয়েও পারেননি। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কথাই ধরুন। তাকে কিন্তু আমরা ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। তিনিসহ সাবেক যারা তারকা আছেন তারা কিন্তু জাতীয় দলের কোচিংয়ে আসেননি। আপনার কি মনে হয় আমিনুল ইসলাম বুলবুলের প্রতি ইনজাস্টিস হয়েছে...?

আশরাফুল : বুলবুল ভাই অসাধারণ একজন মানুষ। তিনি খেলা ছাড়ার পর দুই বছর দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচিং করিয়েছেন। আবাহনীর হয়ে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। তারপর এসিসিতে চাকরি নিয়ে চলে গেছেন, এখন আইসিসিতে আছেন। আনলাকি বলব আমরা। তার মতো প্রতিভাবান একজন কোচ আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। তিনিও হয়তো আইসিসির জব ছেড়ে এখানে আসা যুক্তিযুক্ত মনে করেননি...

প্রশ্ন : আসলে বুলবুল ভাই কিন্তু প্রায়ই বলেছিলেন, ইচ্ছার কথা শুনিয়েছেন। তিনি আসতে চান কিন্তু বিসিবি থেকে ওইভাবে সাড়া পাননি...

আশরাফুল : আমরা অনেক দেখেছি, মিডিয়ায় দেখেছি। কিন্তু আমাদের দেশে এই সংস্কৃতিটা তৈরি হয়নি। ভবিষ্যতে হবেও না হয়তো। আমরা সব সময় নিজেদের কম মূল্যায়ন করি। বিদেশি কোচদের বেশি মূল্যায়ন করি। এটা আসলে সব সময় হয়ে আসছে। আশা করি ভবিষ্যতে এটা কমবে; আমরা যখন আসব, তখন এটা পরিবর্তন হবে। 

প্রশ্ন : পরিবর্তন অবশ্যই হবে। আপনি বলছিলেন আপনার ২৫ বছরের ক্যারিয়ার। এই সময়ে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিলেন, জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। সব মিলিয়ে মন্দ দিকটাও দেখেছেন। ২৫ বছর পেছনে তাকালে কোনো অভিমান বা কষ্ট কাজ করে?

আশরাফুল : না। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। বাংলাদেশের হয়ে খেলা এবং এখানে জন্ম নেওয়াটা। আমার মতো ভালোবাসা খুব কম ক্রিকেটার পেয়েছেন। পারফর্ম যতটা না ছিল তার চেয়ে বেশি ভালোবাসা দেশে এবং দেশের বাইরে পেয়েছি। তাই আমার কোনো আক্ষেপ নেই। একটু কষ্ট লাগে যে আমি আরও ভালো কিছু ইনিংস যদি উপহার দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো আরও ভালো লাগত। তবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।

প্রশ্ন : আমাদের যে তারকা ক্রিকেটার তাদের বেলায় দেখেছি যে তাদের বিদায়টা বিবর্ণ হয়। মাশরাফির মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটারের বিদায়টা তেমন হচ্ছে না আসলে। তামিম বা আপনার ক্যারিয়ারওÑ এটা আসলে কেমন হয়ে যাচ্ছে না? তারকাদের বিদায়টা আমরা সে রকম কেন করছি নাÑ কী মনে হয় আপনার?

আশরাফুল : সবাই আসলে ভাগ্যবান হয় না। স্টিভ ওয়াহ যেমন ভাগ্যবান একজন ক্রিকেটার ছিলেন। ভারতের সঙ্গে টেস্ট জেতার পর মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছেন। বাংলাদেশের একমাত্র খালেদ মাহমুদ সুজন ভাইও পেয়েছেন, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বগুড়ায় ম্যাচ শেষে বিদায় নিয়েছেন। এতে আসলে আমাদেরও দোষ আছে। এখনকার সময়ে কোনো ক্রিকেটারই মাঠ থেকে বিদায় ঘোষণা দিতে চান না। এখানে প্রচুর এনডোর্সমেন্টের বিষয় আছে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কয়েকটি কোম্পানির যোগাযোগ থাকে। তাই দেখবেন ধোনির মতো ক্রিকেটারও মাঠ থেকে বিদায় নেননি। আমাদের ক্রিকেটেও একই। যাদের বলছেন ওরা অনেক বড় স্টার। তাদের সঙ্গে এই বিষয়গুলো যোগ আছে। তাই সাধারণ মানুষ যেভাবে ‘মাঠ থেকে বিদায়’ আশা করে তারা সেভাবে বিদায় নেন না। আরেকটা বিষয় আমাদের দেশে বিদায় নেওয়ার পর আর কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয় না। ওইসব বিষয় চিন্তা করে আসলে এভাবে বিদায় নেন না। হয়তোবা ভবিষ্যতে হবে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের ক্রিকেটে হাতেগোনা যদি কয়েকজন সুপারস্টারের নাম বলি তার মাঝে অনেকের মতে সাকিব আল হাসান অন্যতম ভাগ্যবান। আপনার ক্যারিয়ারের একটা ভুল বড় ক্ষতি করে ফেলেছে। সাকিবের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তিনি এমন অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে এসেছেন। সাকিব আল হাসানকে কি খুব বেশি ভাগ্যবান মনে হয়, তিনি কি খুব বেশি ফেবার পান?

আশরাফুল : সাকিবের খেলা বলেন বা ওর মেন্টালিটিÑ আমাদের বাংলাদেশের সবার থেকে আলাদা। ওর মতো শক্ত মানসিকতার খেলোয়াড় খুব একটা এতদিনের ক্যারিয়ারে দেখিনি। আরেকজন আছেন মাশরাফি মর্তুজাÑ পায়ে এতটা সেলাই নিয়ে এখনও যেভাবে খেলছে। এই দুজনকে বলব তারা এক্সস্ট্রা অর্ডিনারি। ব্যাটিং, বোলিং, লিডারশিপÑ সব জায়গায় তারা দুর্দান্ত। সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই ভাগ্য লাগে।

প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন পারফর্মের কারণে সাকিবের অনেক কিছু আড়াল হয়ে যায়?

আশরাফুল : ডেফিনিটলি। পারফর্মার হলে ছোটখাটো বিষয় বা যা বাদ দিয়েও চলা যায়, সেসব ক্ষেত্রে তাদের সেভ করা স্বাভাবিক।

প্রশ্ন: এক্ষেত্রে আপনার নিজেকে দুর্ভাগা মনে হয়? ফিক্সিং নিয়ে কথা বলেছিলেন একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে। এই নিয়ে কোনো আফসোস আছে কী? না বললে এমন বিপর্যয় আসত না... মাঝখান থেকে আপনি ঠিকই শাস্তি পেয়েছিলেন...

আশরাফুল : না, আমি আসলে এখন আর ওই বিষয়ে কথা বলত চাই না। জীবনে তো অবশ্যই ভুল ছিল ওই জিনিসটা হয়েছে যখন ২০১৩-এর বিপিএলে। তারপর আমি এটার পানিশমেন্টও পেয়েছি। এখন আমি আমার নরমাল লাইফেই আছি। আমি এখন আরামে চলতে পারি, ঘুমাতে পারি। আমি ওইটা নিয়ে... হয়তো বাংলাদেশ টিমে আমি ফিরতে পারিনি। ওইটা নিয়ে আমার... নেই। 

প্রশ্ন : অনেকের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল। তারা কেউ স্বীকার করেননি। তারা অনেকেই আবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গেও জড়িত আছেন...

আশরাফুল : এইগুলো নিয়ে আমি আসলে কিছু বলতে চাই না। এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার বিষয় যেটা আমি আল্লাহ রহমতে ক্লিয়ার আছি এবং আমি ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। 

# মোহাম্মদ আশরাফুলের সাক্ষাৎকারের বাকি অংশ ছাপা হবে আগামীকালের পত্রিকায়

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা