পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৩৫ এএম
হাশিম আমলা। ফাইল ফটো
টেস্টে ৯ হাজার ও ওয়ানডেতে ৮ হাজারের ওপরে রান করা হাশিম আমলার অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে ওপরের দিকেই থাকবে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রতিনিধিত্ব করেন আমলা। বাপ-চাচারা ভারতের গুজরাট থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে স্থায়ী হন। দেশ ছাড়ার সময় হাশিম আমলার বাবা মোহামেদ আমলা স্থায়ী হন দক্ষিণ আফ্রিকার শহর ডারবানে। সেখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমলার। ক্রিকেটের হাতেখড়ি ওই শহরে। বড় ভাই আহমেদের সঙ্গে খেলতেন ক্রিকেট। এমনকি তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে কাওয়াজুলু নাটাল দলে খেলেন আমলা। ভাই আহমেদ বেশিদূর যেতে না পারলেও হাশিম ঠিকই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রেখেছেন। শুধু পা রাখাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, হয়ে ওঠেন নিজের সময়ের সেরা ব্যাটার।
ল্যান্স ক্লুজনার,ব্যারি রিচার্ডসদের মতো হাশিম আমলার ক্রিকেটে হাতেখড়ি ডারবান হাই স্কুলে। ক্রিকেটার তৈরির ওই কারখানা থেকে ২০০১-০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যুব দলে জায়গা পান। সেখান থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আসতে সময় নেন মাত্র এক বছর। ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেকের বছর তিনেক পর জাতীয় দলে তার দরজা খুলে যায়। এর আগে অভিষেক মৌসুমে ৮ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরিতে জানান দেন ছড়ি ঘোরাতে এসেছেন। যদিও ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকের পর দলে নিজেকে পাকাপোক্ত করতে সময় নেন প্রায় দুই বছর। ২০০৬ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ১৪৯ রানের ইনিংসের পর পোক্ত হয় তার জায়গা। এরপর থেকে টেস্টে তার শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
টেস্ট অভিষেকের আরও বছর দুয়েক পর সীমিত ওভারে জায়গা পেলেও তার নামের পাশে সেঁটে ছিল টেস্ট ক্রিকেটারের তকমা। এখানেও নিজেকে পাকাপোক্ত করতে সময় নেন, সেটাও দুই বছর। ২০১০ সালে ভারত সফরে নিজের পারফরম্যান্সে জানান দেন রঙিন পোশাকেও পারফর্ম করতে পারবেন। ভারত সফরেই জানান দেন সব ফরম্যাটে খেলার যোগ্য। ওই বছর ওয়ানডে ও টেস্টÑ দুই ফরম্যাটে তার ব্যাটে আসে হাজারের ওপরে রান। ওয়ানডে দলে জায়গা পোক্ত হওয়ার পর দ্রুততম ব্যাটার হিসেবে দুই, তিন, চার ও পাঁচ হাজার রানের মালিক হন। ওয়ানডেতে ধারাবাহিক আমলা টেস্টও খেলেছেন সমানতালে। ২০১৩ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে নিজের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেন। প্রথম প্রোটিয়া হিসেবে করেন ট্রিপল সেঞ্চুরি।
নিজের ব্যাটিংয়ে বিশ্ব মাতানো আমলা অধিনায়কত্বও করেছেন। ২০১১ সালে ওয়ানডে ও টেস্টে অধিনায়কত্ব করেন। সেই দফায় ব্যর্থ হয়ে ছেড়ে দেন। পরে ২০১৫ সালে আবারও পান দায়িত্ব। এই দফাতেও ব্যর্থ। অধিনায়কতত্বে ব্যর্থ হলেও ব্যাটিংয়ে মনোযোগ থেকে তার দৃষ্টি একবিন্দু সরেনি। ততদিনে পুরো বিশ্ব জেনে ফেলেছে তার বীরত্বগাথা।
ক্রিকেটের মাঠের আমলা ধর্মীয় দিকেও বেশ মনোযোগী। ইসলামে নিষেধ থাকায় বলে ও জার্সিতে কোনোদিন লাগাননি মাদক কিংবা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়র লোগো। বোর্ডকে প্রতিবারই এর জন্য দিয়েছেন জরিমানা। দলের উদযাপনে অ্যালকোহল ছড়ানো হবে বলে সেখান থেকে দূরে থাকতেন। এমনকি ধর্মীয় কারণে শুনতে হয়েছে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা। তবুও নিজের লক্ষ্য থেকে একবিন্দু সরেননি আমলা। ধর্ম আর ক্রিকেট চালিয়েছেন একসঙ্গে।