প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:০৮ পিএম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:০২ পিএম
কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ সালের ট্রফি। ছবি: সংগৃহীত
ফুটবল সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। সহজে খেলা যায়। আয়োজনে ঝামেলা কম। শরীরের জন্য উপকারী। দৃষ্টিনন্দন। সবচেয়ে বড় কথা, অল্প সময়ে এতটা উত্তেজনা, মজা আর কোনো খেলায় পাওয়া যায় না। দারুণ উপভোগ্য খেলাটির আরেকটি বিশ্বকাপ সবে শেষ হলো। ফাইনালে উত্তেজনাপূর্ণ টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে নিল আর্জেন্টিনা। এ ট্রফিটা কি পুরোটাই স্বর্ণের? এর আকার বা দামই বা কত? এরকম অসংখ্য প্রশ্নে খেলা করে আমাদের মনে।
বিশ্বকাপ ট্রফির আকার
বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত দুইটা ট্রফি ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৩০ বা প্রথম বিশ্বকাপ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত একটা। যেটার নাম জুলে রিমে ট্রফি। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেন্সম্যান জুলে রিমের নামে ওই ট্রফিটার নাম রাখা হয়েছিল। জুলে রিমে ট্রফির উচ্চতা ছিল ৩৫ সেন্টিমিটার বা ১৩ দশমিক ৭ ইঞ্চি। ব্যাস ১৩ সেন্টিমিটার বা ৫ দশমিক ১ ইঞ্চি।
১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে নতুন বা বর্তমান ট্রফিটা যাত্রা শুরু করে। এটির নাম ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ট্রফি। বর্তমান শিরোপার উচ্চতা ৩৬ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার বা ১৪ দশমিক ৫ ইঞ্চি। তবে ব্যাস আগের মতোই ১৩ সেন্টিমিটার বা ৫ দশমিক ১ ইঞ্চি।
ওজন
উচ্চতা ও ব্যাসের বাইরে বর্তমান শিরোপাটার ওজন আগেরটির প্রায় দ্বিগুণ। জুলে রিমে ট্রফির ওজন ছিল ৩ দশমিক ৮ কেজি। অন্যদিকে বর্তমান ট্রফির ওজন ৬ দশমিক ২ কেজি। তবে বর্তমান শিরোপাটার ওজন নিয়ে বিশাল বিতর্ক আছে।
নকশায় পরিবর্তন
জুলে রিমে ট্রফির নকশা করা হয়েছিল গ্রিকদের বিজয়ের দেবী নাইকির শরীরের আদলে। যেখানে নাইকি মাথায় একটি ঝুড়ি মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আর আধুনিক ট্রফিতে নাইকির শরীরের আদলটি প্রায় আগের মতোই আছে। তবে নাইকির মাথায় ঝুড়ির পরিবর্তে পৃথিবীর একটি গ্লোব রাখা হয়েছে। এটি আগেরটির চেয়ে বেশি মনুষ্য প্রকৃতিবান্ধব। এটিতে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রকৃতিকে যথার্থভাবে ধারণ করে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
নকশাকার
দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলে রিমে ট্রফির নকশা করে ফরাসি ভাস্কর আবেল লাফ্লেউর।
আর ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপের নতুন ট্রফির নকশার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা দেওয়া হয়। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৫৩টি নকশা জমা পড়েছিল। আলোচনা শেষে ইতালির ভাস্কর সিলভিও গাজানিগার নকশাটা গ্রহণযোগ্য হয়। ইউরোপের উয়েফা কাপ এবং উয়েফা সুপার কাপ শিরোপারও নকশা করেন গাজানিগার। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ২-১ শূন্য গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নতুন ট্রফিটা জেতে পশ্চিম জার্মানি।
শিরোপাটা কি সম্পূর্ণ স্বর্ণের
ফিফা ওয়েবসাইটের তথ্যমতে ট্রফির ৭৫ শতাংশ স্বর্ণের। বেদির অংশটায় সবুজ রঙের একটা ব্যান্ড রয়েছে, যা তামা দিয়ে তৈরি।
কিন্তু কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ফিফার এ দাবি সঠিক নয়। যুক্তরাজ্যের রসায়নের এক বিখ্যাত অধ্যাপক ২০১০ সালে দাবি করেন, ট্রফিটার পুরোটা স্বর্ণ নয়। এটা মাঝখানে ফাঁফা। কারণ ট্রফির পুরোটা স্বর্ণ হলে তার ওজন হতো ৭০ থেকে ৮০ কেজি।
দাম
বিশ্বে যত টুর্নামেন্ট রয়েছে তার মধ্যে ফিফার বিশ্বকাপ ট্রফির দাম সবচেয়ে বেশি। ২০১৮ সালের তথ্যমতে, পুরুষদের বিশ্বকাপ ফুটবল ট্রফিটার দাম প্রায় দুই কোটি ডলার। বিশ্বকাপ ট্রফির পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্যবান ট্রফি উত্তর আমেরিকার স্ট্যানলি কাপ। এটার অর্থমূল্য মাত্র ২৩ হাজার ডলার।
বিজয়ী দেশ কি ট্রফিটা রেখে দেয়
সোজা উত্তর না। বিজয়ী দলকে বিশ্বকাপ ট্রফির ব্রোঞ্জের একটি রেপ্লিকা দেওয়া হয়, যা স্বর্ণের পাতে মোড়ানো।
তবে, ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর জুলস রিমেট ট্রফিটা ব্রাজিলকে চিরতরে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা। এটি রিও ডি জেনিরোতে অবস্থিত ব্রাজিল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কার্যালয়ে রাখা হয়। এখান থেকে ট্রফিটা দুইবার চুরি হয়। প্রথমবার ১৯৬৬ সালে চুরির পর তা পুনরুদ্ধার করা হয়। এরপর ১৯৮৩ সালে চুরির এখনও তা উদ্ধার করা হয়নি।
এদিকে পরবর্তী বিশ্বকাপ পর্যন্ত বর্তমান ট্রপিটা ফিফা কোথায় রাখে, তা বেশ গোপন বিষয়। কেবল বিভিন্ন উপলক্ষে ট্রফিটা সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থিত ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবল মিউজিয়ামে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
ছোঁয়ার অধিকার
বিশ্বকাপ ট্রফি ছোঁয়াছুঁয়ি নিয়ে বেশ কিছু কঠিন আদব-কেতা রয়েছে। শুধুমাত্র বিজয়ী দলের সদস্য, কোচ, আয়োজক দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ট্রফিটা স্পর্শ করতে পারেন।
২০১৪ সালে জার্মানি জেতার পর মার্কিন পপ গায়িকা রবিন রিহানা ট্রফিটা হাতে নিয়ে ছবি ওঠান। এতে করে ফিফার প্রোটোকল ভঙ্গ হয়েছে বলে বেশ সমালোচনা হয়।
কাতার বিশ্বকাপেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বিখ্যাত তুর্কি পাচক সল্ট বে বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফি স্পর্শ করেছেন বলে সমালোচনা হচ্ছে।