× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মেসির হাতে বিশ্বকাপ এবং পূর্ণতা

এম. এম. কায়সার

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০০:২০ এএম

আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:০৮ পিএম

আর্জেন্টিনার ফুটবল লিজেন্ড লিওনেল মেসি। ছবি : সংগৃহীত

আর্জেন্টিনার ফুটবল লিজেন্ড লিওনেল মেসি। ছবি : সংগৃহীত

মেসি পারলেন। গোল করলেন। জিতলেন। অবশেষে বিশ্বকাপ মেসির মুঠোয়!

হাতে সোনালি ট্রফি। চোখে জল। মেসি কাঁদছেন। ডি মারিয়া কাঁদছেন। এই কান্না সাফল্যের, সুখের। বিজয় আনন্দের। বিশ্বজয়ের উল্লাসের। দু’হাতে ট্রফি ধরে মেসি আকাশের দিকে তুলে ধরে উল্লাসে ফেটে পড়ছেন- এমন একটা ছবিই তো বিশ্ব ফুটবলের পাওনা ছিল। রবিবার রাত সেই অপূর্ণতা ঘুচিয়ে দিল। মেসির হাতে উঠে বিশ্বকাপও যেন পূর্ণতা পেল।

মেসির পেনাল্টি এবং ডি মারিয়ার ‘বিউটিফুল টিমগোলে’ আর্জেন্টিনা ফাইনালে এগিয়ে গেল। তবে এক মিনিটের জাদুতে সেই দুই গোলও ফ্রান্স শোধ করে দিল। অতিরিক্ত সময়ে মেসির গোলে আর্জেন্টিনা যখন বিশ্বকাপ জয় থেকে মিনিট পাঁচ দূরে তখনই ফের নাটক। হ্যান্ডবল করল আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি পেল ফ্রান্স। দ্বিতীয়বারের মতো ফ্রান্সকে ম্যাচে সমতা ফেরান এমবাপে। ম্যাচে তিন গোল করেছে ফ্রান্স। তিনটাই এমবাপের। হ্যাটট্রিক! 

শেষে টাইব্রেকারে এসে আর সমতায় ফিরতে পারল না ফ্রান্স। এই পর্বে ম্যাচ জিতে নিল আর্জেন্টিনা ৪-২ গোলে। হ্যাটট্রিক করেও দলকে জেতাতে না পারার কষ্টে এমবাপের কান্না থামছিল না। সেটা ছিল কষ্টের কান্না। আর্জেন্টিনা শিবিরেও কান্নার ঢল। তবে সেটা আনন্দ অশ্রু। বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দাশ্রু।  

মেসির হাতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। ছবি : সংগৃহীত

শ্লোগান-চিৎকার আর রক্তহিম করা উত্তেজনার আবেশে লুসেইলের আইকনিক স্টেডিয়ামকে মনে হচ্ছিল রোমান কলোসিয়াম। সেই অ্যাম্পিথিয়েটারে লড়ছে দুই দল। আরেকটু সংক্ষিপ্ত করে বললে মেসি বনাম এমবাপে! দুজনেই যুদ্ধাংদেহী। পেশি ফোলানো জোস-জেদ-ঘামে, চোয়ালশক্ত পণ নিয়ে বল পায়ে ছুটছেন। সেই লড়াইয়ে মেসি কখনো দলীয় সংহতির শক্তিতে, কখনো পুরোপুরি একক কৃতিত্বে গোল করছেন। দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্বকাপকে হাত ধরা দূরত্বে নিয়ে আসছেন। ঠিক তখনই ঘুরে দাঁড়িয়ে এমবাপে গোল শোধ করছেন। মেসি এগিয়ে দিচ্ছেন আর্জেন্টিনাকে। এমবাপে সমতায় ফেরাচ্ছেন ফ্রান্সকে। শুরুর ৯০ মিনিট ধরে চললো এই সমতার লড়াই। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও সেই একই দৃশ্য। মেসির গোলে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার একহাত। খানিকবাদে আবারো এমবাপের গোলে ফ্রান্স বিশ্বকাপের সমান দাবিদার! ১২০ মিনিটের স্নায়ুক্ষয়ী এই লড়াইয়ে কেউ জিতলো না।  না আর্জেন্টিনা, না ফ্রান্স! না মেসি, না এমবাপে! অথচ গোল হলো সবশুদ্ধ ছয়টা। ফ্রান্সের জালে তিনটা। যার দুটোই মেসির। আর্জেন্টিনার পোস্ট কাঁপলো তিন গোলে। যার সবগুলোই এমবাপের শটে! আর্জেন্টিনা ৩, ফ্রান্স ৩। 

কি বুঝলেন? দলীয় লড়াইয়ে মধ্যে একক কৃতিত্ব, ক্যারিশমার প্রর্দশনীও চললো বেশ। আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের ফাইনাল আইকনিক অর্থে মেসি বনাম এমবাপেও হয়ে গেল! মেসির দুই গোল, এমবাপের তিন। ব্যক্তিগত এই লড়াইয়ে এমবাপে হয়তো জিতলেন। কিন্তু বিশ্বকাপ যে শেষপর্যন্ত উঠলো মেসির হাতেই! এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য যে সেটাই! পূর্ণতায় পরিসমাপ্তি।

কোনকিছু খুব করে চাইলে নাকি তাকে শেষপর্যন্ত পাওয়া যায়ই! বিশ্বকাপ ট্রফির জন্য সম্ভবত মেসি ছাড়া আর কেউ এমনভাবে পাগলপারা হয়নি। এবারের বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে নিজেকে নিংড়ে উজাড় করে দিয়েছিলেন মেসি। তার সেই তাগিদ, আগ্রহ ও জয় ক্ষিদে আমুল বদলে দেয় আর্জেন্টিনার এই দলকেও। মেসির সঙ্গে লড়ে গেল পুরো আর্জেন্টিনা দল। মাঠে লড়লেন খেলোয়াড়রা। আর মাঠের বাইরে, গ্যালারিতে, চকে, রাস্তায় সমর্থকরা সাহস দিলেন গানে-শ্লোগানে-আবেগে। সেই যোগফলেই মেসির হাতে বিশ্বকাপ!

নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে এসে বিশ্বকাপ ট্রফি ছোঁয়ার স্বপ্ন পুরণ হল মেসির। এর আগে দলকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলে আনলেও শেষ ধাপটা পার হতে পারেননি। হারের কান্নায় শেষ হয় বিশ্বকাপ। সেদিন কাঁদলেও থেমে যাননি মেসি। ভেঙ্গে পড়েন। আবার উঠে দাঁড়ান। সেই উঠে দাঁড়ানোর শক্তিতেই বারুদ হয়ে জ্বললেন। লুসেইল আইকনিক স্টেডিয়ামে হাজার হাজার রঙিন টুকরো কনফেত্তির আলোয় মেসির হাতে বিশ্বকাপ এবং তার আবেগ দেখে মনে হলো-ট্রফি নয়, যেন পুরো বিশ্ব মেসির হাতের মুঠোয়।

দোহার লুসেইল আইকনিক স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে উল্লাস করছে আর্জেন্টিনা। চারপাশে রঙবেরঙয়ের কনফেত্তি উড়ছে। আলোয় স্নাত চারধার। সেই রঙিন আলোয় আর্জেন্টিনার পাগল পারা উল্লাস। মেসির অবিস্মরণীয় জাদুকরী রাত। মাঠের একপাশের এই উৎসব আনন্দের জোয়ারেও ফ্রান্সের জন্য ফাইনালের রাতটা নেহাৎ সেই সাদা কালো হয়েই রইল।

আর্জেন্টিনাকে অভিনন্দন বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার আনন্দে। ফ্রান্স, বিশেষ করে এমবাপেকে ধন্যবাদ ফাইনালটা এমন জমিয়ে দেওয়ার জন্য!

বুয়েন্স আয়ার্সের আকাশ আজ একটু বেশি উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত। পুরো আর্জেন্টিনা জুড়ে আনন্দ-উল্লাস। ৩৬ বছর আগে ডিয়েগো ম্যারাডোনা যে আনন্দ উপহার দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনাকে সেই আনন্দ বন্যায় এবার আলবেসেলিস্তেদের ভাসালেন বাম পায়ের আরেক ক্ষুদে জাদুকর লিওনেল মেসি। 

পেলে-ম্যারাডোনা-মেসি-এমবাপে এখন গ্রেটদের তালিকায় একই শীর্ষ সারিতে। বিতর্ক শেষ!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা