প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫ ১০:৪৩ এএম
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব শেষে জমে উঠেছে নকআউট পর্বের লড়াই। শেষ দিনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়ে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপ ও এশিয়ার তিন শক্তিশালী ক্লাব- রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি ও আল হিলাল। এইচ ও জি গ্রুপের লড়াইয়ে জয় তুলে নেওয়া তিন দলই দেখিয়েছে টুর্নামেন্ট জয়ের মতো প্রতিশ্রুতি ও পারফরম্যান্স।
শেষ দিনে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তায় ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এইচ গ্রুপে তারা একদিকে যেমন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারত, তেমনি হারলে বাদ পড়ারও শঙ্কা ছিল। এমন অবস্থায় ফিলাডেলফিয়ার লিংকন ফিন্যানসিয়াল ফিল্ডে রেড বুল সালজবুর্গের বিপক্ষে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ইউরোপিয়ান জায়ান্টরা। ম্যাচের প্রথম ৪০ মিনিট গোলশূন্য কাটলেও, এরপর দৃশ্যপটে আসেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ৪০তম মিনিটে জুড বেলিংহ্যামের নিখুঁত পাস থেকে ডেডলক ভাঙেন ভিনি। ৫ মিনিট পর আবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই ব্রাজিলিয়ান। এবার গোল নয়, তার পাস থেকেই গোল করেন মিডফিল্ডার ফেদেরিকো ভালভার্দে।
বিরতির আগে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা রিয়াল দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা রক্ষণাত্মক মনোভাব নিয়ে খেললেও, শেষ মুহূর্তে তরুণ ফরোয়ার্ড গনজালো গার্সিয়া তৃতীয় গোল করে জয়টা আরও বড় করেন। ৩-০ গোলের জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় রিয়াল মাদ্রিদ।
এইচ গ্রুপের অপর ম্যাচে মেক্সিকান ক্লাব পাচুকাকে ২-০ গোলে হারিয়ে রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল। ম্যাচের প্রথম গোলটি আসে দলের সবচেয়ে বড় তারকা সালেম আল দাওসারির পা থেকে। যিনি কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়সূচক ঐতিহাসিক গোলটি করেছিলেন।
যোগ করা সময়ে মার্কোস লিওনার্দোর গোল আল হিলালের জয়ে শেষ ছাপ রাখে। গ্রুপপর্বে একমাত্র হারে রিয়ালের কাছে পিছিয়ে থাকলেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নকআউটে জায়গা করে নিয়েছে দলটি। তারা এখন প্রতিযোগিতার অন্যতম চমক।
জি গ্রুপের দুই জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটি ও জুভেন্টাস। উভয়েই আগেই শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছিল। তবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের মঞ্চে জমে ওঠে ‘শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই’। আর সেই লড়াইয়ে একতরফা দাপট দেখায় ইংলিশ ক্লাব ম্যানসিটি। ৭ গোলের রোমাঞ্চে তারা ৫-২ ব্যবধানে হারায় জুভেন্টাসকে।
৯ম মিনিটেই রায়ান আইত-নোরির দুর্দান্ত পাস থেকে গোল করে সিটিকে লিড এনে দেন জেরেমি ডোকু। তবে সিটির গোলকিপার এডারসনের ভুলে ১১ মিনিটে সমতায় ফেরে জুভেন্টাস। গোল করেন টিউন কুপমেইনার্স।
এরপর ২৬ মিনিটে আত্মঘাতী গোল হজম করে আবার পিছিয়ে পড়ে জুভেন্টাস। ডিফেন্ডার পিয়েরে কালুলু নিজের জালেই বল পাঠান। দ্বিতীয়ার্ধের ৫২ মিনিটে হালান্ড গোল করেন ম্যাথিউস নুনেসের অ্যাসিস্ট থেকে, যা ছিল তার ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩০০তম গোল। এমবাপে, রোনালদো ও মেসির চেয়ে কম ম্যাচে এই মাইলফলক ছুঁয়ে নতুন ইতিহাস গড়েন তিনি।
৬৯ মিনিটে হালান্ডের নিচু ক্রস থেকে ফিল ফোডেন এবং ৭৫ মিনিটে দূরপাল্লার শটে সাভিনহো আরও দুই গোল করে ম্যাচ প্রায় শেষ করে দেন। শেষ দিকে ভ্লাহোভিচ একটি গোল শোধ করলেও, তা শুধুই সান্ত্বনা। এই জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ শীর্ষে সিটি, ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকে শেষ ষোলোয় পা রাখে জুভেন্টাস ।
গ্রুপ পর্ব শেষে নকআউট পর্বের আকর্ষণীয় ম্যাচসূচি চূড়ান্ত হয়েছে। এইচ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ ২ জুলাই লড়বে জুভেন্টাসের বিপক্ষে। দুই ইউরোপিয়ান জায়ান্টের লড়াই ঘিরে উত্তেজনার কোনো কমতি নেই।
অন্যদিকে, এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ক্লাব আল হিলালের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ ম্যানসিটির মতো ভয়ংকর দল। হালান্ড-ফোডেনদের থামাতে হলে আল দাওসারিদের দিতে হবে তাদের সেরা পারফরম্যান্স। এ দু’দল মুখোমুখি হবে ১ জুলাই।
নকআউট পর্বে সেরা দলগুলো ওঠায় আরও জমজমাট হতে চলেছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। রিয়াল-জুভেন্টাস, মেসির মায়ামি-পিএসজি, বেনফিকা-চেলসি ,সিটি-হিলাল শেষ ষোলোয় হাইভোল্টেজ প্রতিটি ম্যাচই হতে যাচ্ছে চূড়ান্ত পর্যায়ের উত্তেজনা।