প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫ ১৬:০৭ পিএম
জুলাই মাসের আন্দোলনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের রদবদল হয়। সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের পরিবর্তে (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ। ক্রীড়া পরিষদের কোটায় সরাসরি পরিচালক হয়ে এরপর বোর্ডের শীর্ষ পদে আসেন তিনি। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) পরিচালনা, আর্থিক লেনদেন এবং বোর্ডের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণ নিয়ে তার সিদ্ধান্ত বারবার সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সব মিলিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার ৯ মাস না যেতেই বোর্ডে তার অবস্থান নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেছে সরকার।
বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ফারুক আহমেদকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠকে ক্রীড়া উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারের পক্ষ থেকে তাকে বোর্ড সভাপতির পদে আর রাখা হচ্ছে না। ফারুক আহমেদকে পদত্যাগ করতে বলা হলেও, তাকে জোরপূর্বক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার আইনগত সুযোগ নেই। এমন পদক্ষেপ নিলে তা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি) সরকারি হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য করতে পারে, যার ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
এদিকে, বোর্ডে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সম্ভাবনার মধ্যে নতুন নাম হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছেন সাবেক জাতীয় অধিনায়ক ও আইসিসির এশিয়ান ক্রিকেট উন্নয়ন বিভাগের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
জানা গেছে, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে তার সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ক্রীড়া উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমি জানিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বার্থে আমি কিছু সময়ের জন্য কাজ করতে আগ্রহী।’
বিসিবির বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করে বোর্ডকে স্থিতিশীল করা সরকারের মূল লক্ষ্য। অক্টোবরে বিসিবির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বুলবুল জানিয়েছেন, তিনি সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। বরং বর্তমান সংকটকালীন সময়টায় দায়িত্ব পালন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দিয়ে তিনি আবার নিজের আন্তর্জাতিক দায়িত্বে ফিরে যেতে চান।
বর্তমানে বুলবুল আইসিসির হাইপারফরম্যান্স কার্যক্রম ও কোচিং এডুকেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও তিনি এশিয়ার ক্রিকেট উন্নয়ন কার্যক্রমের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। আগামী মাসে তার বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আইসিসির সঙ্গে নতুন এক বছরের চুক্তি নবায়নের আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আইসিসিতে থেকে বিসিবিতে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে বুলবুল বলেন, ‘আমি আইসিসিকে জানিয়ে দিয়েছি যে, বিসিবি থেকে আমাকে সাময়িকভাবে চাওয়া হয়েছে। তারা খুশি মনে সম্মতি দিয়েছে এবং জানিয়েছে, আমার জন্য পদ খালি থাকবে, আমি ফিরে যেতে পারব।’
বুলবুল আরও বলেন, ‘আমার দীর্ঘমেয়াদে বিসিবিতে থাকার পরিকল্পনা নেই। আমি হয়তো আবেগপ্রবণ, কিন্তু যখন দেশের প্রয়োজন, তখন সৈনিক নিজের স্বার্থ নয়, কর্তব্যটাই আগে দেখে। এখন যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট আমাকে চায়, আমি প্রস্তুত।’
ফারুক আহমেদকে সরিয়ে দিলে এবং সেটি যদি রাজনৈতিকভাবে করা হয়, তবে তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আইসিসির নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, কোনো দেশের ক্রিকেট বোর্ডে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট গভীর অনিশ্চয়তায় পড়ে যেতে পারে।