রুবেল রেহান
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫ ১৮:৫৯ পিএম
শিলংয়ে ভারত ম্যাচের আগে পরে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় ছিল হামজা চৌধুরী। দলের তার অভিষেক নিয়ে আগ্রহ ছিল বাংলাদেশের ফুটবর সমর্থকদের। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেখানে ঘরের মাঠের অভিষেক হবে শেফিল্ড ইউনাইটেডের তারকা হামজার। সেই সঙ্গে অভিষেকের অপেক্ষায় আরেক প্রবাসী বাংলাদেশী ফুটবলার সামিত সোম। গতকাল ফিফার প্লেয়ারস স্ট্যাটাস কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পরের দিন আজ সামিতের নাম এএফসিতেও নিবন্ধন হয়ে গেছে। মোট কথা বাংলাদেশ ফুটবলে এই মুহূর্তে আলোচনার বিষয় হামজা-সামিত।
সমর্থকদের ছাপিয়ে সামিতকে নিয়ে উচ্ছ্বাস, আগ্রহের কথা বলেছেন জাতীয় ফুটবল দলের বর্তমান খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সাবেক খেলোয়াড়েরাও। ভারত ম্যাচের পর যেমন হামজার সঙ্গে অনুশীলন, ড্রেসিংরুম শেয়ার ইত্যাদি বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন প্রায় সব ফুটবলারই। তাদের মধ্যে অন্যতম পুলিশ এফসির ফরোয়ার্ড আল আমিন। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম লেগে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হয়ে ডাক পান ভারত ম্যাচের জন্য। যদিও মাঠে নামা হয়নি তার।
তারা (প্রবাসীরা) বাইরে থেকে এসে বাংলাদেশ দলে খেলবে এতে আমাদের খেলোয়াড়দের বাইরে খেলার সুযোগ হতে পারে
মামুনুল ইসলাম, ফুটবলার, ফর্টিস এফসি
তবে হামজার সঙ্গে অনুশীলন, ড্রেসিংরুমে অভিজ্ঞতা নিয়েছেন আল আমিন। হামজার থেকে অনেক কিছু শিখছেন বলে জানান তিনি। এবার সামিত সোমের আশা নিয়েও ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন এই ফুটবলার। বুধবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘আমার কাছে যেটা মনে হয়, যেহেতু হামজা ভাই আসছেন, এখন সামিত, আরও অনেকেই আসবে শুনছি, তো তাদেরকে তো আর বিদেশী বলা যাবে না; তারাও বাংলাদেশি। আশা করি একদিন সবাইকে নিয়ে আমরা বিশ্বাকাপ খেলব। আমার দিক থেকে যদি বলি, ওনারা ইউরোপে বড় হয়েছেন, সেখানকার ক্লাবে খেলছেন, আমি ওনাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করব, এটা তো আমার জন্য বড় পাওয়া।’
আল আমিনের মতোই ইতিবাচক বাংলাদেশ দলের এক সময় পোস্টারবয় হিসেবে খ্যাতি কুড়ানো ও তারকা ফুটবলার মামুনুল ইসলাম। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিলেও এখনও খেলে যাচ্ছেন ঘরোয়া ফুটবল। এই মোসুমে আছেন ফর্টিস এফসিতে। বাংলাদেশ দলে সামিতের অন্তর্ভূক্তি হলে সেটা দেশের লোকাল ফুটবলে এবং এখানকার ফুটবলারদের জন্য সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি। বুধবার সন্ধ্যায় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘এটা তো আমাদের দেশের জন্য পজিটিভ। তারা (প্রবাসী) আসাতে আমাদের টিম শক্তিশালী হচ্ছে। তারা (প্রবাসীরা) বাইরে থেকে এসে বাংলাদেশ দলে খেলবে এতে আমাদের খেলোয়াড়দের বাইরে খেলার সুযোগ হতে পারে। আমি মনে করি যে তারা (প্রবাসী) যে মানের খেলোয়াড় তাদের সঙ্গে খেললে আমাদের লোকাল খেলোয়াড়েরা উন্নতি করতে পারবে। হামজা আসার পর দল মোরালি কতটা পরিবর্তন হয়েছে। ভারত ম্যাচের কথাই বলেন, সেখানে হামজার অন্তর্ভূক্তি দলের ভাবমুর্তিই বদলে দিয়েছে। আমরা এখন আর তাদের বাইরের দেশের প্লেয়ার বলতে পারি না, তারা আমাদের টিমের মেম্বার। তো আমাদের টিমের বেস্ট খেলোয়াড়দের পাচ্ছি, এটা আমাদের ফুটবলের জন্যই ভালো।’
হামজা, সামিতরা আসায় বাংলাদেশের ফুটবলে আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম বাড়বে। তেমনি আমাদের লোকাল ফুটবলও এগিয়ে যাবে
আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, সাবেক ফুটবলার
সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেছেন, ‘প্রবাসী ফুটবলাররা আমাদের বাংলাদেশ দলের সঙ্গে খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করছে এবং আসতেছে। আমার মনে হয় এটা আমাদের ফুটবলের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক দিক এবং আমি মনে করি তারা (প্রবাসী) যত আসবে জাতীয় দলের প্রতিযোগিতাও তত বাড়বে। কারণ আমাদের জাতীয় দলে যারা খেলছে, তারা সবাই যে আপ টু মার্ক তা না। প্রবাসীরা আসলে একটা পরিপূর্ণ দল গঠন হবে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে যে পারফরম্যান্স আমরা আশা করছি সেটা হয়ত পারব।’
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু মনে করেন বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা আসলে দেশের সুনাম বাড়বে। তার মতে, ‘আমি খুব পজিটিভ ওয়ে তে দেখছি। হামজার পরে সামিত সোম… তার ভিডিও ফুটেজ দেখেছি, তার আসাটা আমাদের জন্য বিরাট পাওয়া বলে আমি মনে করি। এটাও বলব সুলিভানদের (কাভান ও কুইন সুলিভান) মতো যারা বড় বড় খেলোয়াড় বিভিন্ন দেশে খেলে বেড়াচ্ছে, তাদেরকে যদি আমরা ঠিক মতো নিয়ে আসতে পারি, হামজা এবং সামিতের মতো, তাহলে বাংলাদেশের ফুটবলে আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম বাড়বে। তেমনি আমাদের লোকাল ফুটবলও এগিয়ে যাবে।’