রুবেল রেহান
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫ ১৭:৪৮ পিএম
পল্টনের শহীদ তাজউদ্দীন উডেন ফ্লোর। সংগৃহীত ছবি
সবকিছু প্রায় ঠিকই ছিল। টুর্নামেন্টের এন্ট্রি ফি সংগ্রহ, প্রাইজমানি নির্ধারণ, ১৫-১৯ মে সূচি নির্ধারণ, এমনকি পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান পাওয়া; জেলা ও দেশের বিভিন্ন ক্লাব যখন প্রস্তুতির শেষ সীমায় তখনই জানা গেল ‘উন্মুক্ত প্রেসিডেন্ট কাপ র্যাঙ্কিং এবং প্রাইজমানি টুর্নামেন্টটি’ স্থগিত! পল্টনের শহীদ তাজউদ্দীন উডেন ফ্লোরে আলোকস্বল্পতা এবং এসি বিকলের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে টুর্নামেন্টটি। এমন কারণে কোনো দেশের সর্বোচ্চ স্তরের টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ার ‘বিরল’ ঘটনা বোধকরি বাংলাদেশেই সম্ভব। এই ঘটনায় হতাশ বর্তমান খেলোয়াড়রা। সাবেকদের মুখেও একই কথা। টেবিলে টেনিস ফেডারেশনের কর্তারা (অ্যাডহক কমিটি) দায় নিতে চান না; দিতে চান না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকেও (এনএসসি)। তারপরও প্রশ্নটা থাকছেই- দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এমন ভঙ্গুর দশা আর কতদিন?
টুর্নামেন্টটির জন্য বিকল্প ভেন্যুর ভাবনায় ছিল টিটি ফেডারেশন। কিন্তু সেখান থেকে সরে নতুন করে সেই আগের ভেন্যু অর্থাৎ উডেন ফ্লোরেই হবে প্রতিযোগিতাটি। এর ব্যাখ্যায় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান সনেট প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘দিনের পর দিন টুর্নামেন্ট হয়নি। এখন খেলোয়াড়েরা চায় যে পরিবেশেই হোক টুর্নামেন্টটা চলুক। ২২ মে টুর্নামেন্ট শুরু করতে যাচ্ছি। প্লেয়াররা মরিয়া হয়ে আছে খেলতে।’
এসি বিকলের জন্য টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়া নিয়ে মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর রোজা গেল, ঈদ গেল, এনএসসিকে জানানোর সে অর্থে সময় হয়নি। এখন আমরা এনএসসিকে যদি দায় দিই সেটি ঠিক হবে না; আবার আমাদেরকে যদি আপনারা ব্লেম দেন, সেটিও ভুল হবে। এটা আসলে ঘটনাচক্রে ঘটে গেছে।’
কিন্তু প্রথমে টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়া এবং এসির সমস্যা সামনে আসায় বেশ হতাশ বর্তমান তারকা খেলোয়াড় সোনাম সুলতানা সোমা। মঙ্গলবার মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘হতাশা যদি বলেন... টোটালি হতাশ। এসির এই সমস্যাটা আজকে থেকে না, এসি দিতে বললেই অনেক অজুহাত আসে। আর ফ্লোরের ব্যাপারটা তো জানেনই। সেটা তিন কোটি টাকা দিয়ে নাকি ঠিক করল, কিন্তু সেটা এখন অনেক জায়গায় ভেঙে যাচ্ছে; খুবই দুঃখজনক, খুবই হতাশাজনক। আজকে (গতকাল) প্র্যাকটিসের জন্য গেলাম, দম নিতে পারছিলাম না... আসলে ১০ মিনিট, ১৫ মিনিট প্র্যাকটিস করে দম নিতে পারছি না; এখানে কীভাবে টুর্নামেন্ট খেলব!’
সরকার, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আরেকটু ভালোভাবে নজর দিলে অনেকটাই বদলে যাবে দেশের টেবিল টেনিস। কেবল নির্দিষ্ট কোনো খেলায়, বিশেষ করে ক্রিকেট নিয়ে বেশি মনোযোগী না হয়ে টেবিল টেনিসের প্রতিও মনোযোগ হবে দেশের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, এমনটাই আশা সোমার, ‘আমার তো সব সময় মনে হয়েই আসছে, ক্রিকেট-ফুটবল ছাড়া বাংলাদেশে স্পোর্টস নেই মনে হয়! আমরা যারা খেলছি, ভালোবাসার জায়গা থেকে, আর কিছুটা আর্থিক বিষয়ের জন্য। সবাই আবার সেটিও পায় না, টিমও নাই, তারপরও খেলছে। ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট খেলতে গেলে এটা অনুভব করি। একটু সহায়তা পেলে আমার মনে হয় অনেক ভালো করতাম।’
এই পরিস্থিতিতে বর্তমান খেলোয়াড়দের ধৈর্য ধরতে বলেছেন টেবিল টেনিসের সাবেক তারকা খেলোয়াড় জোবেরা রহমান লিনু। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলাপকালে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘আমি তো এখনও সবকিছু পুরোপুরি জানি না, যে কারণে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এখন আপনার কাছ থেকে শুনে যেটুকু বুঝেছিÑ একটা এসি নষ্ট, সেটা কেউ দেখবে না জানবে না, এটা তো ঠিক না। প্লেয়ারদের কাছ থেকে ভালো কিছু পেতে তাদেরও তো সাপোর্ট দিতে হবে।’ রেকর্ড ১৬ বার জাতীয় টেবিল টেনিসে টানা চ্যাম্পিয়ন হওয়া এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে নাম লেখানো প্রখ্যাত সাবেক এই খেলোয়াড় তারপরও আশাবাদী। তিনি মনে করেন, বর্তমান কমিটিকে সময় দিতে হবে। কারণ দীর্ঘদিনের পচে যাওয়া জিনিসটা তো ঠিক করতে সময় লাগে।
এ নিয়ে এনএসসি সচিব আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘ক্রীড়া স্থাপনাগুলো নির্মাণ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি), রক্ষণাবেক্ষণও করে এনএসসি। তো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ওপরই দায়দায়িত্বগুলো আসবে, এখানে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই, এটিই সত্য। এই কাজে (এসি রিপেয়ারিং) ক্রীড়া পরিষদের প্রকৌশলী যারা আছেন তাদের জবাবদিহিতায় আসতে হবে। আবার এটাও কিন্তু সত্যি, ফেডারেশনগুলো যখন সক্রিয় হবে, তখনই কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হবে।’