ডিপিএল
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ২১:০৬ পিএম
ঢাকা ডার্বিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রেখেছে আবাহনী লিমিটেড; আজ মিরপুর শেরে বাংলায়; ছবি- আ. ই. আলীম
এমন একটা অবস্থা ছিল, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) শুরুর আগেই আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ধরা হতো। দল চালানো থেকে শুরু করে ক্রিকেটের বাইশ গজেও আকাশি-নীলরা পেত নানা সুযোগ-সুবিধা। দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে এমন আলোচনা ছিল ওপেন সিক্রেট। এবার অবশ্য দেশের পটপরিবর্তনের সঙ্গে বদলে যায় ক্রীড়াঙ্গনের দৃশ্যও। নানা সমস্যায় জর্জরিত ধানমন্ডির ক্লাবটি এবার ঢাকা লিগে দল গড়তেই হিমশিম খেয়েছিল। আর্থিক কারণে অনেক ক্রিকেটার দল ছেড়ে চলে যায়। এক ক্রিকেটার স্বাক্ষর করেও টাকা কম দেখে চলে যান অন্য দলে। সব মিলিয়ে আবাহনীর জন্য মাঠে নামাও চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে পরিবর্তন হয়নি মাঠের পারফরম্যান্সে। একাগ্রতা, দৃঢ়তা, হার না মানা মানসিকতায় আবার চ্যাম্পিয়ন আবাহনী!
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ডিপিএলের অলিখিত ফাইনালে আবাহনীর প্রতিপক্ষ ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী
মোহামেডান। রাউন্ড রবিন লিগে গ্রুপপর্বে দুই দলের মুখোমুখিতে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে জয় পেয়েছিল
মোহামেডান। তবে শিরোপার লড়াইয়ে এবার তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। একপেশে ম্যাচে সেই
হারের প্রতিশোধ নিয়েই শিরোপা উল্লাস করেছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের দল। এবারের শিরোপা
জয়ের সঙ্গে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের মর্যাদা পাওয়ার পর সপ্তম শিরোপা জিতল আবাহনী। সবশেষ
পাঁচ আসরের মধ্যে যা চতুর্থ। আর নিজেদের ইতিহাসে মোট ২৪তম শিরোপা ঘরে তুলল আকাশি-নীলরা।
ফলে ২০০৯ সালে শেষবারের মতো ডিপিএলের শিরোপা জেতা মোহামেডানের দশম ট্রফির অপেক্ষা আরেকটু
বাড়ল।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সুপার লিগের শেষ রাউন্ডের
ম্যাচটিতে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল মোহামেডান। কিন্তু আবাহনী নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে
৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪০ রানের বেশি করতে পারেনি সাদা-কালো ক্লাবটি। সেই রান তাড়া করতে
নেমে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে মাত্র ৪০.৪ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আবাহনী।
এবারের পুরো টুর্নামেন্টেই দাপট দেখান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। অলরাউন্ড
নৈপুণ্যে দলের শিরোপা জয়ে রাখেন দারুণ ভূমিকা। আবাহনীর অধিনায়ক ব্যাট হাতে ১৪ ইনিংসে
৪৮.৭০ গড়ে ৩ ফিফটিতে করেন ৪৮৭ রান। আর বল হাতে ১৬ ইনিংসে ৪.০৪ গড়ে সতীর্থ রাকিবুল হাসানের
সঙ্গে শিকার করেন সর্বোচ্চ ৩০ উইকেট।
সৈকত ফাইনালেও খেলেন ৬৫ বলে ৬ চার ও ৫ ছক্কার মারে অপরাজিত ৭৮ রানের
নায়কোচিত ইনিংস। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন উইকেটকিপার ব্যাটার মোহাম্মদ মিথুন। এই দুই অভিজ্ঞ
ক্রিকেটার ১৩৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। মিথুন ৬ চার ও ২ ছয়ে
৭৯ বলে অপরাজিত ছিলেন ৬৬ রানে। এ ছাড়া জিসান আলমের ব্যাট থেকে আসে ৫৩ বলে ৫৫ রান।
এর আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-আরিফুল হকের ফিফটিতে ভর করে মোহামেডান
মোটামুটি চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছোড়ে দেয় আবাহনীকে। দুজনের ব্যাট থেকেই আসে সমান ৫০ রান।
তবে তাদের ইনিংস ছিল ধীরগতির। মাহমুদউল্লার এই রান করতে লাগে ৬২ বল আর আরিফুলের লাগে
৫৭ বল। ওপেনার রনি তালুকদার ৪৫ রান ও মাঝে ৪২ রান করেন ফরহাদ হোসেন। আবাহনীর হয়ে মৃত্যুঞ্জয়
চৌধুরী ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত দুটি করে উইকেট নেন।
টুর্নামেন্টের শিরোপা ধরে রেখে সৈকত জানিয়েছেন, এবারের ট্রফি স্পেশাল।
সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘না, আগের থেকে এই বছরটা স্পেশাল। এবার চ্যালেঞ্জ বেশি ছিল
আমাদের। টিম বানানো থেকে সবকিছুতে। সবাই চ্যালেঞ্জ ফেস করেছে। প্রত্যেকটা টিমের জন্য
অনেক বড় ইস্যু ছিল, সবাই জানি আমরা। এটা আসলে আমরা প্লেয়াররা যেভাবে স্যাক্রিফাইস করেছি,
অনেক বড় ব্যাপার এটা।’
মৌসুমের শুরুতেই জাতীয় দলের নির্বাচকের পদ ছেড়ে আবাহনীর দায়িত্ব নেন
হান্নান সরকার। নিজের কোচিং ক্যারিয়ারের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই সফল এই কোচ। এক প্রতিক্রিয়ায়
তিনি বলেছেন, ‘আগে আবাহনী অনেক টাকা খরচ করে দল বানাত। চ্যাম্পিয়ন মোটামুটি ধরে নেওয়াই
যেত। সেজন্য মাঠের ক্রিকেটকে আপনি ছোট করে দেখতে পারবেন না। এবার ভারি নাম ছিল না,
মাঠের ক্রিকেটে ভিন্ন স্ট্র্যাটেজি সাজিয়ে জিততে হয়েছে, এটার তৃপ্তি অন্যরকম।’
ঢাকা লিগের সফল ক্লাব
আবাহনী ২৪ বার
মোহামেডান ৯ বার
বাংলাদেশ বিমান ৬ বার
ভিক্টোরিয়া ৪ বার
ওল্ডডিওএইচএস ২ বার