প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৫৮ পিএম
শুক্রবার, ছুটির দিন। তবে মিরপুর শের-ই-বাংলায় দিনটি কাটে উৎকণ্ঠায়। সবার আগেই হোম অব ক্রিকেটে হাজির হন তামিম ইকবাল। এরপর জুমার নামাজের আগেই বিসিবির একাডেমি মাঠে একে একে হাজির সব তারকা ক্রিকেটার। অনুমান করা যাচ্ছিল, তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতেই ক্রিকেটারদের মনে অসন্তোষের মেঘ জমেছে। সেই অনুমান বুঝতে পেরে ছুটির দিনে বোর্ডের বড় বড় কর্তারাও এলেন বিসিবি কার্যালয়ে। পরবর্তীতে জানা গেল, শুধু হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞাই নয়, আরও কিছু বিষয় নিয়ে ক্ষোভের কারণেই বিসিবিতে আগমন ক্রিকেটারদের।
তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে কিছুদিন ধরে উত্তপ্ত বাংলাদেশের
ক্রিকেটাঙ্গন। মাঠে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান মোহামেডানের
অধিনায়ক হৃদয়। পরে একবার নিষেধাজ্ঞার শাস্তি তুলে নেওয়া হলেও পরে আবারও এক ম্যাচে নিষিদ্ধ
করা হয় হৃদয়কে। সে ইস্যুতে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর বৈঠক করেন
তামিম ইকবালসহ মোহামেডানের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার। বৈঠকে ছিলেন আম্পায়ার্স কমিটির
চেয়ারম্যান ইফতিখার আহমেদ মিঠুও।
বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তামিম ইকবাল। সম্প্রতি বিকেএসপিতে
হার্ট অ্যাটাকের পর এদিনই প্রথম সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলেন তিনি। হৃদয়ের নতুন করে
পাওয়া এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও ডিপিএলে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ এবং কয়েকজন ব্যাটারের
আউট হওয়া নিয়ে সমালোচনা, অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের দিয়ে ওই মুহূর্ত তুলে ধরা এবং বিপিএলে
ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠলে তা বোর্ড থেকে সংবাদমাধ্যমে চলে আসা নিয়ে অসন্তোষ জানান তিনি।
তামিম দাবি করেন, ক্রিকেটারদের ‘বেইজ্জত-অপমান’ করা হচ্ছে।
হৃদয়ের নতুন করে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তামিম বলেন, ‘দুই ম্যাচ থেকে এক
ম্যাচ করা হলো, তখনও আমরা কোনো কথা বলিনি। নিষেধাজ্ঞা শেষে ২টি ম্যাচ খেলল। ওর শাস্তি
ততক্ষণে ও পেয়ে গেছে। ২ ম্যাচ খেলার পর কাল শুনলাম তাকে আবারও নিষিদ্ধ করেছে। এটা কোন
নিয়মে, কীভাবে করেছে আমার জানা নেই। এটা নিয়ে আমরা হতাশ ছিলাম। এটা কোনোভাবেই সাসপেন্ড
হতে পারে না। নিষেধাজ্ঞার পর বিসিবি তাকে ২ ম্যাচ খেলতে দিয়েছে, আবার ওকে কীভাবে নিষিদ্ধ
করতে পারেন?’
ক্রিকেটারদের মুখপাত্র হয়ে তামিম বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো সেন্সই
মেইক করে না। প্রথমেই ২ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা হলে সমস্যা ছিল না। এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার
পর দুই ম্যাচ খেলে আবার নিষিদ্ধ করা, এটা আসলে হাস্যকর ব্যাপার হয়ে গেছে।’
এদিকে প্রিমিয়ার লিগে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠলে অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের
দিয়ে আলোচিত সেই ঘটনা অভিনয় করে দেখানো ভালোভাবে নেননি কোনো ক্রিকেটার। সে প্রসঙ্গ
টেনে তামিম বলেন, ‘কিছু দিন আগে গুলশান ও শাইনপুকুরের ম্যাচে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে।
আমরা স্পষ্টভাবে বোর্ডকে বলেছি, ওখানে যদি কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকে বা কোনো খেলোয়াড়
দোষী হয়, সবাই চাই এর শাস্তি হোক। একশ ভাগ একমত। তার মানে এই অধিকার নেই দুটো ছেলেকে
নিয়ে মিডিয়ার সামনে অভিনয় করাবেন। বিশ্বের কোনো অ্যান্টি করাপশন বা কোনো জায়গায় এই
নিয়ম নেই। সেম জিনিস অভিনয় করিয়ে ঐ দুই ছেলেকে মিডিয়ার সামনে বেইজ্জত করবেন। ক্রিকেটারদের
প্রতি এটা অপমান। এটা নিয়ে আমরা এক ফোঁটাও খুশি ছিলাম না।’
বিপিএলে ফিক্সিং করেছেনÑ এমন অভিযোগ ওঠা ক্রিকেটারদের নাম প্রকাশ
করার কারণেও চটেছেন ক্রিকেটাররাÑ জানান তামিম, ‘বিপিএলেও একটা ঘটনা ঘটেছে। বিসিবির
ভেতর থেকে ১০ জনের নাম ফাঁস হয়েছে। ১০ জনের ছবি দিয়েছে বিভিন্ন মিডিয়াতে। ওখান থেকে
কেউ যদি দোষী হয় আমরা সব ক্রিকেটার চাই ওর শাস্তি হোক। কিন্তু এখান থেকে যদি ২ জন বা
৮ জন নির্দোষ হয়? এভাবে নাম প্রকাশ করা ক্রিকেটারদের অসম্মান। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা
উদ্বিগ্ন ছিলাম।’
এ সময় বিসিবিকে দ্রুত সমাধান ও সিদ্ধান্ত জানানোর তাগিদ দেন তামিম,
‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হলো ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের সঙ্গে
এভাবে করলে হয় না। বোর্ড প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছিলাম আসার জন্য, উনি এসেছেন। সঙ্গে
আরও ২ জন বোর্ড পরিচালক ছিলেন। লম্বা আলোচনা হয়েছে। বলেছি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন, আমাদের
জানান। যেহেতু কাল খেলা। আমার মনে হয় খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিবেন।’