× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যেখানে ফুটবলের স্বপ্ন পাখা মেলে

রুবেল রেহান, যশোর থেকে ফিরে

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৪ পিএম

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৭ পিএম

নয়নাভিরাম যশোরের শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি। ছবিটি গত ১৭ এপ্রিল, বুধবার তোলা। ছবি : সাদমান সাকিব

নয়নাভিরাম যশোরের শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি। ছবিটি গত ১৭ এপ্রিল, বুধবার তোলা। ছবি : সাদমান সাকিব

এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি/পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি/ নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে/ রহিয়া রহিয়া বিপুল মাঠের ‘পরে/ নব তৃণদলে বাদলের ছায়া পড়ে।’… প্রকৃতিকে নতুন করে প্রাণশক্তি দেয় বরষা, বৃষ্টি। রবি ঠাকুরের কবিতার এই পঙ্‌ক্তি সেটিই মনে করে দেয়। মনে করিয়ে দিয়েছে আমাকেও; যখন পা রেখেছিলাম ‍অরণ্যেঘেরা প্রকৃতির এক বিস্তৃতি ভূমিতে গড়ে ওঠা শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে। 

নয়ানাভিরাম প্রকৃতির মধ্যে গড়ে ওঠা একাডেমিটি স্বচক্ষে দেখা গত ১৭ এপ্রিল, বুধবার বিকালে। ঘণ্টা দুয়েক আগে সেখানটা ভিজিয়ে গেছে একপশলা বৃষ্টি। মূল সড়ক থেকে একটু নিচে নামলেই মাঠ। লাল-সবুজের জার্সি পরে অনুশীলনে তখন ব্যস্ত জুনিয়র ফুটবলাররা। নজরে আসে সেখানকার চারদিককার সৌন্দর্য। বৃষ্টিস্নাত সবুজ ঘাসের স্বাগত আলিঙ্গন মেখেই ঘুরে ঘুরে একাডেমি দেখা।

যশোরের মূল শহর থেকে দুই মাইল দূরে হামিদপুরে অবস্থিত শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি। ২০১১ সালের ১৪ মে এটি প্রতিষ্ঠা করেন মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদি। একাডেমিতে এখন পর্যন্ত মাঠ প্রস্তুত হয়েছে মোট তিনটি। যার মধ্যে দুটি বড় মাঠ, অন্যটি সেভেন-এ সাইড। আরও একটি বড় মাঠ প্রস্তুতের কাজ চলমান। আপাতত এই তিন মাঠেই নিয়মিত অনুশীলন করে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ২০০ জন ফুটবলার। মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে আছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত জিমনেশিয়াম। একাডেমির পূর্ব পাশে পড়ে আছে অনেকটা ফাঁকা জায়গা, শোনা যায় এখানে হবে নারী ফুটবলারদের জন্য আবাসিক ভবন। ওই ভবন নির্মাণের পর এখানে ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ পাবেন মেয়েরা। এর আরেকটু উত্তর পাশে বড় এক পুকুর, তার পেছনে ২০ ‍বিঘার ওপরে লেক। প্রস্তাবিত আছে সেখানে হবে সুইমিংপুল।

আপাতত ৬০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত একাডেমিতে আবাসিক ভবন আছে একটি। প্রায় ৪৭ হাজার স্কয়ার ফিটের ৬ তলা ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে ভাষাসৈনিক জাহিদ হাসান মুসার নামে। একটা আধুনিক ফুটবল একাডেমিক ভবনে যা যা থাকা দরকার তার প্রায় সবটাই আছে এখানে। একসঙ্গে যেখানে রাখা ২৪০ জন শিক্ষার্থীকে। বর্তমানে এই একাডেমিতে ভর্তি আছে বিভিন্ন বয়সের ৪৮ জন শিক্ষার্থী। আবাসিকের বাইরে দেড়শর ওপরে খুদে ফুটবলার আছে, যারা এই একাডেমির ছাত্র। তবে নিয়মিত এসে অনুশীলন, ক্লাস শেষে ফিরে যান নিজ নিজ বাড়িতে।

১৫ দিনের জন্য এখানে ক্যাম্প করেছে বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের প্রাথমিক দল। এ বছর ভারতের অরুণাচল প্রদেশে অনুষ্ঠেয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সামনে রেখে ৩১ ফুটবলারকে অনুশীলন করাচ্ছেন নারী দলের সাবেক কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। প্রথমবারের মতো বয়সভিত্তিক দলের শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে আসা। এখানে ৩১ জন ফুটবলারকে দুই ভাগে ভাগ করে ওই দিন বুধবার একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলিয়েছেন গোলাম রাব্বানী। এরপর একাডেমি নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা বলেছেন। এই দলের ম্যানেজার মো. জালাল উদ্দিন। তার কাছে একাডেমি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি তো বারবারই বলেছেন, ‘এটা এক কথায় অসাধারণ।’

কোচ, ম্যানেজারের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ও। ক্যাম্পের সঙ্গে বর্তমানে একাডেমিতে আছেন তিনজন প্রবাসী ফুটবলার। ইংল্যান্ড, ইতালি এবং আমেরিকা থেকে এসেছেন বাংলাদেশি তরুণ ফুটবলার এলমান মাতিন, আব্দুল কাদির ও ফারজাদ আফতাব। এই একাডেমির সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ইতালি থেকে আসা কাদির বলেছেন, ‘এখানকার সঙ্গে ইতালিতে আমি যেখানে বড় হয়েছি, তার সঙ্গে খুব একটা পার্থক্য নেই।’ তার মতো ইংল্যান্ড থেকে আসা এলমান মাতিনও খুব খুশি একাডেমির সুযোগ-সুবিধা দেখে।’ বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ভালো করে এই তিন ফুটবলারের ইচ্ছা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানো।

শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি থেকে এরই মধ্যে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন দুজন। তাদের মধ্যে একজন আল আমিন। ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের দলে ছিলেন এই ফরোয়ার্ড। যদিও কোচ তাকে একাদশে রাখেননি, বদলি হিসেবেও শিলংয়ের ওই ম্যাচে মাঠে নামা হয়নি রংপুরের নীলফামারী থেকে উঠে আসা আল আমিনের। 

নিজের জন্মস্থান নীলফামারী হলেও ফুটবলটা ভালোভাবে শেখা শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি থেকেই। স্কুল ফুটবল খেলতে এসেই এখানকার কোচের নজরে আসেন। এরপর এই একাডেমি থেকে খেলেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। সেটি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এভাবে জানিয়েছেন আল আমিন, ‘আসলে আমার বাসা তো নীলফামারী। ওইখান থেকে ফুটবলার হওয়া অনেক কষ্ট। মানে অনেক কঠিন, সেখানে তেমন কোনো কোচ নেই, তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। কিন্তু নীলফামারীতে কিন্তু অনেক ভালো ফুটবলার আছে, তারা ঢাকায় আসতে পারে না। আমি একটা ট্রায়ালের মাধ্যমে শামস-উল-হুদা একাডেমিতে সুযোগ পাই। তারপর আমি ওখানে ভর্তি হই। কিন্তু আমার জন্য ওখানকার খরচ মেটানো সহজ ছিল না। আমার পরিবার থেকে সেটা বহন করার মতো সক্ষমতা ছিল না। যে কারণে চলে আসি। আসার পর একাডেমি থেকে আবার ফোন দেয় এবং আর্থিক বিষয়টা কনসিডার করে তারা। তারপর তো শুরু হলো আমার একাডেমি জীবন। শুরুটা আমার ভালোই ছিল। এখানে ডিসিপ্লিন নিয়ে অনেক কড়াকড়ি। সব মিলিয়ে ভালো ছিল।’

২০১৮ সাল থেকে আল আমিনের একাডেমি জীবনের অধ্যায় চলতে চলতেই পড়াশোনাটা চালিয়ে যান। যদিও সেটি ছিল নীলফামারীতেই। পরীক্ষার সময় আসলে একাডেমি থেকে সহায়তা করা হতো বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া পরবর্তী ধাপে পেশাদার লিগে খেলতে ক্লাব পেতেও তাকে সহায়তা করে এই একাডেমি। আল আমিনের ভাষ্য, ‘আমার সবকিছু শেখা এখান থেকেই। ২০১৮ সালে যখন আমি ভর্তি হই, তখন একাডেমির অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব ১৮-তে দলে ছিলাম। এরপর এখান থেকেই আমি ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার সিটি ঘুরে আসার সুযোগ পাই। এরপর আরামবাগে খেলি। তারপর শেখ জামালে সুযোগ পাই। শেখ জামালের সঙ্গে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছে আমার একাডেমিই।’ বর্তমানে আল আমিন খেলছেন বাংলাদেশ পুলিশ এফসির হয়ে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা